লিখেছেন আরিফুজ্জামান রিপন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) এতদিন যাবত বৈচিত্রময় আইটি সিস্টেমের স্বতন্ত্র ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। তবে তাদের মধ্যে এক অন্তর্নিহিত বন্ধন সবসময়ই ছিল। আর যতদিন যাচ্ছে এদের মধ্যে তফাত ততই কমে আসছে এবং এরা একে অন্যের প্রতিরূপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। যদি আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একটা সিস্টেমের ব্রেইন হিসেবে কল্পনা করেন, তাহলে আইওটিকে সেই সিস্টেমের ডিজিটাল নার্ভাস সিস্টেম কিংবা বাকি গোটা শরীর হিসেবে ভাবতেই হবে!
আমরা আজকের আর্টিকেলে এআইওটি (AIoT) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। বুঝতে চেষ্টা করবো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ইন্টারনেট অফ থিংস কীভাবে একে অপরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং কীভাবে তারা একযোগে কাজ করে কোনো একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল, অর্গানাইজেশনাল কিংবা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে।
আইওটি থেকে এআইওটিতে বিবর্তন
আগেই বলা হয়েছে, যত সময় গড়াচ্ছে আইওটি দিন দিন ততই স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে। আইওটির ব্যবহার বাস্তবিকভাবে সবখানেই বিদ্যমান। হোম অটোমেশন সিস্টেম এবং ম্যানুফেকচারিং ন্যানোবোট থেকে শুরু করে সেলফ-ড্রাইভিং কার এবং হেভি ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারিজ পর্যন্ত এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে আইওটির প্রয়োগ নেই! আইওটির বিকাশ এবং প্রয়োগ এত দ্রুত ঘটছে যে ২০২০ সালের পরে প্রায় ৫০ বিলিয়নেরও বেশি ডিভাইস একে অপরের সাথে সংযুক্ত হবে!
আপনি হয়তো ইতিমধ্যে জানেন যে, আইওটি বিশাল সংখ্যক পোর্টেবল ডিভাইস, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ওয়ারেবল এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে-অন্যের সাথে সংযুক্ত করে। এই সংযুক্ত ডিভাইসগুলো তাদের পরিবেশকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং এদেরকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করা সম্ভব হয়। কিন্তু কাগজে-কলমে এই গোটা বিষয়কে অনেক সহজে করে দেখানো সম্ভব হলেও বাস্তবে এখানে প্রচন্ড জটিল কিছু বিষয়াদি থাকে এবং সেগুলো আসলেই মারাত্মক গুরত্বপূর্ণ!
উদাহরণস্বরূপ, একটি গাড়ি উৎপাদন কোম্পানি তাদের পরবর্তী মডেলের গাড়িকে উন্নত করার জন্য হয়তো বর্তমানের প্রতিটি গাড়ির টায়ারের প্রেসার থেকে শুরু করে ফুয়েল পারফরমেন্স পর্যন্ত সবকিছুকেই মনিটর করতে চাইবে, এবং এক্ষেত্রে কী বিশাল পরিমাণ ডাটা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সেই ডাটাগুলোকে প্রসেস করতে হবে সেটা ভাবতেও অবাক লাগার কথা! অর্থাৎ আইওটির মাধ্যমে আপনি এই বিশাল পরিমাণ ডাটা সংগ্রহ তো করলেন, এবার সেই ডাটাগুলোকে দিয়ে আপনার কাজের কাজ করার জন্য বিগ ডাটা প্রসেসিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবশ্যই লাগবে।
তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আধুনিক সময়ে কীভাবে এই আলাদা প্রযুক্তিগুলোকে একসাথে কাজ করতে হয়। এবং এরা একসাথে কাজ করে অসম্ভবকেও সম্ভব করে ফেলতে পারে। আর তাই যত দিন যাবে এই প্রযুক্তিগুলো স্বতন্ত্র না থেকে একে অন্যের অংশ হিসবে একটা সিস্টেমে কাজ করবে। কিন্তু এই গোটা প্রক্রিয়া যে কত বেশি জটিল সেটা নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না।
বিশেষত, আইওটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে একদম ব্যবসায়িক লাভের জন্য ব্যবহার করা এক বিশাল কাজ, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইওটি ডিভাইসগুলো সর্বশেষ ব্যবহারকারীদের অভ্যাসের উপর নির্ভর করে। ফলে এই ডিভাইগুলোর তথ্যগুলো ব্যাপক বৈচিত্রময় হয়ে থাকে এবং এগুলোকে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য সহজ আকারে আনার কাজটা প্রচন্ড জটিল হয়ে থাকে। এমনকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনও বিভিন্ন পরিবেশগত অবস্থার কারণে অভিন্নভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারে না, ফলে এদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাঝেও বৈচিত্র দেখা যায়। সুতরাং উপরের দুটো উদাহরণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি আলাদা আলাদা ক্ষেত্র হওয়া সত্ত্বেও উভয়ক্ষেত্রেই ব্যাপক ব্যক্তিগতকৃত (পারসোনালাইজড) ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এভাবেই আইওটির ব্যবহারিক ক্ষেত্রগুলো কখনোই সরলরৈখিক হয় না, বরং ব্যাপক বৈচিত্রপূর্ণ হয়ে থাকে।
এআই এবং আইওটির সংমিশ্রণ – এআইওটি (AIoT)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথ্যের মাধ্যমে উন্নত এবং সমৃদ্ধ হয়। এটা পুরোপুরিভাবেই বিশাল রকমের স্ট্যাটিস্টিক্যাল এবং কম্পিউটিশনাল তথ্যের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেখার এবং অটোমেশনের এক প্রায়োগিক পদ্ধতি।
এআই-সহ আইওটিকে সংমিশ্রণ করা হলে, আইওটি ডিভাইসগুলো অতিরিক্ত সক্ষমতা, যেমন- ইউজার ইন্টারঅ্যাকশন, সার্ভিস প্রোভাইডার এবং এমনকি এক ইকো-সিস্টেমের অন্যান্য ডিভাইস থেকে বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করার সক্ষমতা অর্জন করে। অর্থাৎ ডিভাইসগুলো নতুন কোনো ইনপুট বা পরিবেশের যেকোনো পরিবর্তনের সাথে সাথেই কোনো রকম ম্যানুয়াল নির্দেশ ব্যতিতই নিজে থেকে যথাযথ কাজ করতে পারে।
এআই এবং আইওটির সংমিশ্রণ কেন জরুরি এই প্রশ্নের উত্তর একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়েই দেয়া যায়। যেমন- সাধারণত ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত একটা গাড়ি প্রতি ঘন্টায় মোটামুটি ২৫ গিগাবাইট ডাটা জেনারেট করে। আর স্বয়ংক্রিয়-গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে এই পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে ১ গিগাবাইট পর্যন্ত হতে পারে! কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা ছাড়া প্রক্রিয়া করা ব্যতিত এই বিশাল সংখ্যক ডাটাকে কোনোভাবেই ব্যবহারোপযোগী ডাটাতে পরিণত করা সম্ভব নয়।
এআইওটি যেভাবে আইওটি থেকে আলাদা
পূর্বে আইওটি ডিভাইসগুলোকে মূলত ডাটা সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হতো। এক্ষেত্রে ধারণা ছিল- সংযুক্ত ডিভাইসগুলোর একটি মেশ (সবাই সবার সাথে সংযুক্ত) নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যা ক্রমাগত অ্যাডমিনদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে। যদিও এখন আইওটির ধারণা অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়েছে, তবে ইদানীং এআইওটি এক্ষেত্রে নতুন একটা মাত্রা যোগ করেছে! ডাটা প্যাটার্ন বিশ্লেষণ ও বিশাল বিশাল সাইজের ডাটা প্রক্রিয়াজাত করে সুনির্দিষ্ট তথ্য এবং সিদ্ধান্ত প্রদান করার মাধ্যমে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা আইওটিকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে! এর ফলে আইওটি ডিভাইসগুলো শুধু তথ্য সংগ্রহই নয়, বরং সেই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, যার ফলে প্রচুর সময় এবং নেটওয়ার্কিং ও প্রসেসিংয়ের কাজ বেঁচে যায়। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে, স্মার্ট সেন্সর ও ইন্টিগ্রেটেড চিপের মাধ্যমে বৈচিত্রপূর্ণ ডাটা থেকে প্যাটার্ন রিকগনিশনের মাধ্যমে এই কাজগুলো করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটা স্বয়ংক্রিয়-গাড়ি তাপমাত্রা, চাপ, আর্দ্রতা, বাতাসের অবস্থা এবং এরকম আরো অনেক রকমের ডাটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে থাকে।
তাহলে বুঝলেন তো কীভাবে এআইওটি আইওটির থেকে উন্নত বা আলাদা হলো? দেখুন, প্রচলিত ব্যবসায়িক সিস্টেমের কার্যক্ষমতা, লাভ-ক্ষতি প্রচুর হিসাব-নিকাশ এবং যথাযথ ভবিষ্যদ্বাণী (প্রেডিকশন) এর উপর নির্ভর করে। আর এক্ষেত্রে এআইওটি অন্যান্য যেকোনো পদ্ধতির থেকে অন্তত ২০ গুণ আগে ভবিষ্যদ্বাণী (প্রেডিকশন) করতে পারে! আইওটি বা এআই একা যদি বিপ্লব ঘটাতে পারে, তাহলে এদের সংমিশ্রণ অনেকটা মহাবিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে!
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অফ থিংস (AIoT) এর সুবিধা ও গুরুত্ব
এতক্ষণে এটা তো নিশ্চিত যে, এআইওটি যেকোনো পরিপূর্ণ ও পরিণত (ম্যাচিউর) ইকো-সিস্টেম তৈরির ক্ষেত্রে নতুন একটা দিগন্ত খুলে দিয়েছে, যেটার গুরুত্ব যেকোনো প্রতিষ্ঠান, শিল্প কিংবা এন্ড-ইউজারের কাছে অনেক অনেক বেশি। নিচে আমরা আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে এর সুবিধা ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ের জন্য এআইওটির সুবিধা ও গুরুত্ব
রিয়েল-টাইম ডেটা ক্যাপচার এবং এটি বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এআইওটি যেকোনো ব্যবসার প্রকৃত মান ও লাভ বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন:
- ম্যানুয়াল কাজকে সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংক্রিয় করে ফেলা। ফলে সিস্টেম নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে ও উৎপাদনশীলতা এবং কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের প্রসেস অপটিমাইজ করা সম্ভব হয়, যে কারণে প্রান্তিক লেনদেনের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
- নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হয়।
- অ্যাডভান্সড রোবট ও স্পিচ রেকগনেশনের মাধ্যমে আরো ভালোভাবে ক্রেতা-ব্যবস্থাপনা ও ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়।
- পণ্য এবং সহকারী পরিষেবাগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা সম্ভব হয় এবং বার বার এই পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি ঘটানো যায়।
- দ্রুত পণ্য আপডেট বা নতুন পণ্য বাজারে আনা সম্ভব হয়।
গ্রাহক ও এন্ড-ইউজারদের জন্য এআইওটির সুবিধা ও গুরুত্ব
একটি ভাল-কার্যকরী ব্যবসায়ের অন্যতম স্বাভাবিক প্রভাব হলো বিভিন্ন ধরনের সুবিধাগুলো শেষ পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়েও পৌঁছে যায়। যেমন:
- অনেক রকম তথ্য বিশ্লেষণ ও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় বলে ক্রেতা ও ব্যবহারকারীরা পণ্য ব্যবহারে অনেক ভালো অভিজ্ঞতা পেতে পারে।
- ব্যক্তিগত পছন্দ, অভ্যাস ও ব্যবহারগত বৈচিত্রগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় বলে ব্যবহারকারী সেই পণ্য, ডিভাইস বা সিস্টেম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দবোধ করে।
- সামগ্রিকভাবে পণ্য বা সিস্টেমের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবহারকারী তুলনামূলকভাবে অনেক দ্রুত এগুলোর উন্নতর সংস্করণ পেয়ে যায়।
- সংকটপূর্ণ অবস্থার জন্য জরুরি যেমন বিভিন্ন ধরনের ওয়্যারেবলস, এগুলো অত্যাবশ্যকীয়ভাবে সবসময় ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্য, শারীরিক অবস্থা এবং অনেক জরুরি অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলে ব্যবহারকারীর ইতিবাচক অভিজ্ঞতা পায় এবং অনেক সময় এগুলো জীবন রক্ষাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
- প্রেডিকটিভ লার্নিং ক্যাপাবিলিটিস থাকে বলে ডিভাইস বা সিস্টেমের অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীর অভ্যাস ও ব্যবহারভেদে অনেক কিছু শিখতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই গুরত্বপূর্ণ অনেক কাজ, যেমন- হেলথ মনিটরিং, হোম অটোমেশনসহ আরো অনেক কিছুই নিজে থেকে করতে পারে।
এআই এবং আইওটির মাধ্যমে সাফল্য অর্জনের উপায়
যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি এআইওটিতে বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হয়।
রিয়েল-টাইম অ্যানালিটিক্স
সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক ঘটনা চিহ্নিতকরণ এবং ইভেন্ট স্ট্রিম প্রসেসিং ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ডাটা সেট বিশ্লেষণ করা। সদা-পরিবর্তনশীল যেকোনো ডেটা বিশ্লেষণের জন্য রিয়েল-টাইম অ্যানালিটিক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশেষ করে এটি যেসব ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা হলো-
- সেন্সর থেকে প্রতিনিয়ত সমষ্টিগত তথ্য পর্যবেক্ষণ ও সংগ্রহের ক্ষেত্রে, যার মাধ্যমে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন ডাটা কিংবা এমন ধরনের প্রবণতা সম্পর্কে আগে থেকেই জানা সম্ভব হয় যেটা সিস্টেমকে অকার্যকর করে ফেলতে পারে। এটা ডিভাইসগুলোকে এমন সক্ষমতা প্রদান করে যাতে তারা স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট স্মার্ট ভূমিকা রাখতে পারে, যেমন- বিভিন্ন ধরনের নোটিফিকেশন পাঠানো থেকে শুরু করে সিস্টেম বন্ধ করা পর্যন্ত সকল বিষয়ে।
- রিয়েল-টাইমে বিভিন্ন অপারেশন অপটিমাইজ করতে, প্রেডিকটিভ এনালাইসিস করতে কিংবা তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যপারে।
- রিয়েল-টাইমেই বিভিন্ন ধরনের সংকটপূর্ণ জটিল অবস্থার প্যাটার্ন বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এবং ডিভাইসে কোনো অস্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ ঘটছে কি না, যেমন- ব্যাংকিং লেনদেন কিংবা হুমকি সনাক্তকরণের নানা বিষয় এর মাধ্যমে নজরে রাখা সম্ভব হয়।
- সেন্সর থেকে প্রাপ্ত ডেটা বৈধকরণ (Validating) এবং পরিচালনা (Handling ) করা সম্ভব হয়। এটি নিশ্চিত করে যে ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে যেকোনো বিলম্ব যথাযথভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং ডেটা স্ট্রিমে প্রাসঙ্গিক ডেটার প্যাটার্ন সনাক্ত করা হয়েছে।
অ্যাপ্লিকেশন অ্যানালিটিক্সের উদ্দেশ্য সাধন করা
আলাদা আলাদা প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর নির্ভর করে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে বিশ্লেষণ ব্যবস্থা মোতায়েন করা। বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিভেদে, বিশ্লেষণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবায়ন কৌশল নির্বাচন ও প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন- কখনও কখনও ডেটা ঘটনাস্থলেই বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন হতে পারে, আবার অন্য কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে হয়তো ডাটাকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার দরকার হতে পারে।
কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তাকে সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত করা
এআইওটির সাফল্য যে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা ব্যতিত অর্জন করা সম্ভব নয় এ কথা বলাই বাহুল্য। এআইওটি বাস্তবায়নের জন্য মেশিন লার্নিং, ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং এবং কম্পিউটার ভিশন নিয়ে খুব নিবিড়ভাবে কাজ করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ-
- গবেষণাভিত্তিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং ক্লিনিক্যাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বৃহৎ পরিমাণের ডাটা নিয়ে কাজ করতে হয় যেগুলো চিকিৎসকদেরকে যথাযথ দিক নির্দেশ করতে পারে।
- ভিজ্যুয়াল যেকোনো চিত্র বিশ্লেষণ করতে ডিপ লার্নিং এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা।
- মেডিকেল হিস্ট্রি কিংবা পণ্য/সেবার প্যাটার্নের উপর ভিত্তি করে রোগী কিংবা ক্রেতার প্রোফাইল তৈরি করা।
ইউনিফিকেশন অফ লাইফ-সাইকেল
কোনো একটা নিদির্ষ্ট ক্ষেত্রে এআইওটিকে সফল হতে হলে, সম্ভাব্য সকল প্রকার ডাটা সেটকে এক্সেস করার দরকার হয়। অর্থাৎ গোটা অ্যানালিটিকস লাইফ-সাইকেলকে পর্যায়ক্রমে একটা আরেকটার সাথে সংযুক্ত করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন-
- ইভেন্ট স্ট্রিম প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে হাই ভলিউম, হাই রেট এবং লো লেটেন্সির ডেটা বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে। এর ফলে সেট প্যারামিটারের উপর ভিত্তি করে যেকোনো ঘটনাকে ফিল্টার করা সম্ভব হয়।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ঘটনার রিয়েল-টাইম ডেটা স্ট্রিমিং করার ক্ষেত্রে। এর ফলে সিস্টেম একই জাতীয় বিভিন্ন ডেটা সেট বিশ্লেষণ করে এবং সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপটি নেয়।
- ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং এনভায়রনমেন্টে নির্ভুলতা বৃদ্ধির জন্য বিগ ডাটা অ্যানালিটিকস ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
- অ্যানালিটিক্যাল মডেল পরিচালনা করার ক্ষেত্রে, যা যেকোনো অ্যানালিটিক্যাল মডেলের পুরো জীবনচক্র জুড়ে ক্রমবিকাশ এবং পারফরম্যান্স স্তরের সন্ধানের বিষয়ে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শেষ কথা
এআই এবং আইওটি একসাথে এমন সব সমস্যার সমাধান করছে যা সম্পন্ন করা শুধু অত্যন্ত কঠিনই নয়, বরং বেশ ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষও বটে! এমনকি এটি অনেক সমস্যার সমাধান আগে থেকেই করে ফেলতে পারে যা হয়তো পরবর্তীতে ঘটতে পারতো! এআইওটির মাধ্যমে অসংখ্য সংযুক্ত ডিভাইস থেকে প্রাপ্ত রিয়েল-টাইম ডেটা একবারেই সংগ্রহ এবং পরিচালনা করে কোনো একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ ব্যবহার করা যায়।
এই বিষয়টি একটা সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের আইওটি সিস্টেমকে সম্ভব করে তুলছে, যেটা শুধু অসামান্যই নয়, বরং মহাবৈপ্লবিকও বটে! আইওটি যেটা করতে পারে না সেটা কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা করতে পারে, এবং যেটা কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা করতে পারে না সেটা আইওটি করতে পারে। আর এই দুইয়ের সংমিশ্রণ ‘এআইওটি (AIoT)’ বলতে গেলে সবকিছুই করে ফেলতে পারে!