নেপোলিয়নের প্রখ্যাত উক্তি তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব।
দিগ্বিজয়ী এ মহাবীরের এরকম আরো বহু কথা ইতিহাস বরাবরই আলাদা করে স্মরণ করে। স্মরণ করে তার বীরত্ব, প্রজ্ঞা ও বাহাদুরি। তবে কোন এক অজানা কারণে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ইসলাম গ্রহণের অধ্যায়টিকে সবসময়ই এড়িয়ে চলে ইতিহাস।
মহাবীর নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৭৯৮ সালে কায়রোর জামে আজহার মসজিদে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে জোরালো মত রয়েছে।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ উপলক্ষে তিনি যে বাণী প্রচার করেন তার দলিল কায়রোর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে এখনও রক্ষিত আছে। তৎকালীন বিশেষ ব্যক্তিদের ডায়েরীতে তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সত্যতা পাওয়া যায়।
La Cases নামক একজন- নেপোলিয়নের খুব কাছের মানুষ ছিলেন। তিনি তার ডায়েরীতে নেপোলিয়নের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে, সেন্ট হেলেনায় নির্বাসিত হিসেবে অবস্থানকালে জেনারেল গরগারডের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নেপোলিয়ান বলেছিলেন, ‘আমি মুহাম্মদীয় ধর্মটাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। এতে অল্প হলেও কিছু জিনিস আছে যা আমাদের ধর্মের থেকে অধিক শক্তিশালী।
তিনি আরও বলেন, সব ধর্মের মাঝে মুহাম্মদীয় ধর্ম সবচেয়ে উত্তম।
বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, ১৭৯৮ খৃস্টাব্দে নেপোলিয়ন মিসর আক্রমণ করতে গিয়ে ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি এক বছর মিসরে থাকেন।
সে সময় ১৭৯৮ খৃস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর বহুল প্রচারিত ফরাসি পত্রিকা Gazzette National ou Le Moniteur Universel এ প্রকাশিত সংবাদেও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে আলী নেপোলিয়ন রাখেন বলে খবর বের হয়।
তৎকালীন মিসরের শীর্ষ আলেমদের সান্নিধ্যে এসে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে তিনি পরিপূর্ণ অবগতি লাভ করেন এবং ইসলামী শরীয়তের আলোকে সমাজ ও জীবনের বিধিমালা প্রণয়নের জন্য মতামত ব্যক্ত করেন।
মিসরে অবস্থানের সময় মিলাদুন্নবীর দিন ফরাসি সৈন্যবাহিনীর মাধ্যমে কায়রোর রাজপথে বিশেষ প্যারেডের আয়োজন করে রাসূলের (সা.) প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটান।
তিনি মিসরের গ্র্যান্ড মুফতিকে চিঠি লেখেন, আমি সব জ্ঞানীদের সঙ্গে নিয়ে কোরআনের নীতিমালার আলোকে একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চাই।
তিনি আরো লেখেন, একমাত্র কোরআনের আইন ও শাসনের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ।
আমেরিকান ঐতিহাসিক Juan Cole তার গ্রন্থ Napoleon’s Egypt: Invading the Middle East এ লেখেন, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট রাসূলের (সা.) জীবনাদর্শে খুব বেশি প্রভাবিত ছিলেন। তার মতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
কোরআন ও রাসূলের (সা.) জীবনী অধ্যয়নের পর তার দৃষ্টিভঙ্গীতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এছাড়াও আরো বহু সূত্রে একথা বলা যায় যে, ইসলাম ও রাসূল সা. এর প্রতি নেপোলিয়নের ছিল বিশেষ ভালবাসা ও বিশ্বাস।
জীবনের শেষ সময়গুলোতে তিনি ইসলামের নির্দেশিত পথে নিজেকে পরিচালিত করতেন। অবশ্য গির্জার সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাবেন না বলে তিনি অনেক কিছুই প্রকাশ্যে করতেন না।
ইসলামের প্রতি তার বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার কারণে তৎকালিন মিসরের আলেমরা তাকে মহাসম্রাট উপাধিতে ভূষিত করেন।
পরবর্তীতে ফ্রান্স, ইতালি, বেলজিয়াম, জার্মানি ইত্যাদি দেশে তিনি নেপোলিয়ন কোড বা আইন বিধির যে প্রবর্তন করেন তার অনেকগুলো ধারা ছিলো ইসলামি শিক্ষা ও সভ্যতা থেকে সংকলন করা।
তথ্যসূত্র: ডেইলি পাকিস্তান উর্দূ
লেখক: তোফায়েল গাজালি, পরিচালক, আল কোরআন ইন্সটিটিউট, ঢাকা