আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগ মাথায় নিয়ে স্পেনের সাবেক রাজা হুয়ান কার্লোস আগস্টের শুরুতে দেশ ছাড়েন। তবে রাজা কার্লোসের ব্যাপারে স্পেনের মোহমুক্তি ঘটতে শুরু করেছিল ২০১২ সাল হতেই, সেবছর দুর্ভাগ্যজনক এক হাতি শিকার অভিযানের পর। রাজা কার্লোসের সঙ্গে সেই শিকার অভিযানে ছিলেন তাঁর সাবেক প্রেমিকা করিনা যু সেইন-উইটজেনস্টাইন। বিবিসির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন সেই অভিযানের কাহিনি- কিভাবে রাজা কার্লোস তাকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের একটি উপহার দিয়েছিলেন, কিভাবে তাকে স্পেনের গুপ্তচর সংস্থা হয়রানি করেছিল এবং সর্বোপরি সেই হাতির গল্প।
তবে ২০১২ সালের ১১ ই এপ্রিল রাজা কার্লোস যে হাতিটি হত্যা করেন, সেটি নিয়ে তিনি আসলে কথা বলতে চাননি। গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, হাতিটির বয়স ছিল ৫০ বছর। ওজন ছিল ৫ টন। এটির শুঁড় ছিল এক মিটারের বেশি দীর্ঘ।
যু সেইন-উইটজেনস্টাইন অবশ্য নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না , হাতিটি সম্পর্কে এসব তথ্য আসলেই সঠিক ছিল কীনা।
“আমার আসলে কোন ধারণাই নেই”, বললেন তিনি।
যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের জন্ম ডেনমার্কে, বেড়ে উঠেছেন জার্মানীতে। পেশায় বিজনেস কনসালট্যান্ট।
হ্যাঁ, সেই শিকার অভিযানে তিনি রাজার সঙ্গী হয়েছিলেন। তবে যখন শিকারের জন্য গুলি করা হয়েছিল, তখন তিনি অনেক দূরে ছিলেন।
“আমি পরে গিয়ে সেটা দেখেছিলাম, কারণ এটা দেখার জন্য সবাই সেখানে যাচ্ছিল। কিন্তু দুমিনিট পরেই আমি সেখান থেকে সরে যাই। আমি একজন শিকারি। কিন্তু আমার জীবনে আমি কখনো হাতি শিকার করিনি, কখনো করবো না। আমার জন্য সেই শিকার অভিযানের পুরো অভিজ্ঞতাটি ছিল খুবই বেদনাদায়ক।”
যু সেইন-উইটজেনস্টাইন সেবছর তার ছেলের দশম জন্মদিন পালন করছিলেন। আর এই শিকার অভিযানটি ছিল সেই জন্মদিনে রাজার তরফ থেকে উপহার।
২০০৪ হতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজা কার্লোসের সঙ্গে যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের বেশ রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেসময় তার সন্তানদের সঙ্গেও রাজা কার্লোসের বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে দুজনের এই রোমান্টিক সম্পর্ক সম্পর্কে তখন স্পেনের জনগণ কিছুই জানতো না। রাজা কার্লোস বিয়ে করেছেন ১৯৬২ সালে। রাণী সোফিয়ার সঙ্গে তিনি দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ।
“আমার আসলে এই সফরে যেতে চাইনি। আমার মনে হচ্ছিল রাজা হুয়ান কার্লোস চাইছেন আমি তার কাছে ফিরে যাই। কিন্তু আমি তাকে কোন মিথ্যে আশা দিতে চাইনি। আমার মনে হচ্ছিল, এই সফরে খারাপ কিছু ঘটতে পারে”, বলছিলেন যু সেইন-উইটজেনস্টাইন।
তার এই আশংকার কারণ ছিল, যেটা পরে দেখা গেল। ২০১২ সালের ১৩ই এপ্রিল রাজা কার্লোস তার বিলাস বহুল তাবুতে পড়ে গিয়ে আহত হলেন।
রাজা যখন মাদ্রিদে ফিরলেন, ততক্ষণে মিডিয়া তার এই শিকার অভিযানে বড় কিছু গন্ধ পাচ্ছে। তারা রীতিমত ঝাঁপিয়ে পড়লো এই অভিযানের কাহিনী খুঁজে বের করতে। তখন রাজার জামাতা ইনাকি উরডানগারিনের এক দুর্নীতির তদন্ত চলছিল। সেই তদন্তের সূত্রে শীঘ্রই ফাঁস হয়ে গেল রাজা কার্লোসের হাতি শিকারের গল্প। ইনাকি উরডানগারিন এখনো জেলে বন্দী।
স্পেন তখন এক কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বেকারত্বের হার ছুঁয়েছে ২৩ শতাংশ। রাজা কার্লোসের কোমরের ভাঙ্গা হাড় জোড়া দিতে অস্ত্রোপচার করা হলো। এরপর তাকে প্রথম প্রকাশ্যে দেখা গেল হাসপাতালে একটি লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটার সময়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কেমন আছেন তিনি।
উত্তরে রাজা বললেন, “আমি দুঃখিত। আমি ভুল করেছি। তবে এরকমটা আর ঘটবে না।”
স্পেনের যে রক্তাক্ত, যন্ত্রণাময় ইতিহাস, সেখানে রাজা কার্লোসের এমন একটা অবস্থান ছিল, যেটাকে মনে করা হতো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ১৯৭৫ সালে ফ্রান্সিসকো ফ্রাংকোর মৃত্যুর পর তিনি ছিলেন স্পেনের রাষ্ট্রপ্রধান। তার তত্ত্বাবধানেই স্পেনে স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৮১ সালে অভ্যুত্থানের এক চেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছে। রাজা কার্লোস ছিলেন জনপ্রিয়। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা যেন এক বিরাট ধাক্কা খেল। রাজার ভাবমূর্তির বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।
“সংকট গুরুতর রূপ নিল, কারণ বোতসোয়ানায় রাজার সফর বেশ কিছু বিষয়কে সামনে নিয়ে আসলো”, বলছেন হোসে আন্তনিও যারযালেহোস। তিনি স্পেনের ডানপন্থী এবং রাজতন্ত্র সমর্থক সংবাদপত্র এবিসির সাবেক সম্পাদক।
“প্রথমত হচ্ছে, রাজা কার্লোস তার স্ত্রী রাণী সোফিয়ার প্রতি অবিশ্বস্ত। দ্বিতীয়ত, একটা বিরাট অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রাজা এমন একটি দেশ সফর করছেন, যেদেশে স্পেনের কোন দূতাবাস নেই। এর মানে হচ্ছে, রাষ্ট্রপ্রধান সেখানে কী করছেন, সে সম্পর্কে স্পেনের সরকারের কোন ধারণাই নেই, স্প্যানিশ সরকারের নজরের পুরোপুরি বাইরে তিনি। আর তৃতীয়ত, এটি ছিল বেশ বিলাসবহুল এক সফর। আমরা কেউ জানি না, এই সফরের খরচ কে দিয়েছে। এই পুরো ঘটনা রাজার ব্যাপারে খুবই বাজে একটি ছবি তুলে ধরলো।”
রাজা হুয়ান কার্লোসের সঙ্গে যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০০৪ সালের ফেব্রয়ারীকে এক শিকারের অভিযানে।
যু সেইন-উইটজেনস্টাইন বলছিলেন, সেই অভিযানে রাজার শটগানটিতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
“আমার আবার শটগান সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল। আমি তাকে ব্যাখ্যা করছিলাম, সমস্যাটা কোথায়। আমার মনে হলো, তিনি বেশ অবাক হয়েছেন।”
ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠতে লাগলো।
“পরের কয়েক মাস আমাদের মধ্যে টেলিফোনে বেশ কথা হতো। আমরা প্রথম সাক্ষাৎ করি গ্রীস্মের শুরুতে। আমরা দুজনেই বেশ হাসতাম। আমাদের দুজনের মধ্যে যেন অনেক মিল। দুজনেই প্রায় একই ধরণের বিষয়ে আগ্রহী- রাজনীতি, ইতিহাস, ভালো খাবার, ওয়াইন…”
“আমি তখন লন্ডনে থাকি। আমি মাত্রই আমার নিজের কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করেছি। আমি তখন দুই সন্তানের মা, একা সংসার সামলাই। আমরা দেখা করতাম মাদ্রিদে বড় এক বাগান বাড়ির এক ছোট্ট কটেজে। আমরা দুজনে এক সঙ্গে ঘুরতাম।”
“প্রথম বছরটায় আমার বেশ সমস্যা হচ্ছিল। কারণ আমি ব্যস্ত ছিলাম। তারও অনেক কাজ ছিল। কিন্তু এর মধ্যেও তিনি দিনে দশবার আমাকে ফোন করতেন। মানে আমি বলছি, একেবারে শুরু থেকেই আমাদের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠ, জোরালো এবং অর্থবহ একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।”
একটা পর্যায়ে যু সেইন-উইটজেনস্টাইন রাজাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাদের এই সম্পর্কে রাণী সোফিয়ার অবস্থান কোথায়?
তিনি আমাকে বললেন, রাজসিংহাসনে বসে কাজ চালানোর জন্য তাদের দুজনের মধ্যে একটি সমঝোতা আছে, কিন্তু এর বাইরে তারা দুজনে একেবারেই আলাদা জীবন-যাপন করেন। রাজা আমাকে বললেন, তার সঙ্গে আরেক নারীর বিশ বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক মাত্রই তারা ছিন্ন করেছেন। তবে তার হৃদয়ে এবং জীবনে সেই নারীর জন্য একটি বিশেষ জায়গা আছে।”
রাজা এবং যু সেইন-উইটজেনস্টাইন বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। তিনি রাজার বন্ধুদের সঙ্গেও সময় কাটাতেন। তার সন্তানদের সঙ্গেও দেখা হতো।
২০০৯ সালে তার বাবাকে দেখতে আসলেন রাজা কার্লোস।
“আমার বাবা আমাকে ফোন করলেন এবং জানালেন রাজা কার্লোস তাকে দেখতে এসেছিলেন। রাজা তাকে জানিয়েছেন, তিনি আমাকে ভালোবাসেন এবং আমাকে বিয়ে করতে চান। তিনি আমার বাবাকে আরও বললেন, এই কাজটা সোজাসুজি করা সম্ভব নয়, এতে সময় লাগবে। তিনি আমার বাবাকে জানিয়ে রাখতে চান যে, আমার ব্যাপারে তিনি বেশ সিরিয়াস।”
যু সেইন-উইটজেনস্টাইন জানান, সে বছরেরই প্রথম দিকে রাজা কার্লোস তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
“যখন এরকম কিছু ঘটে, সেটা অবশ্যই বেশ আবেগময় একটা ব্যাপার। আমিও তার বেশ প্রেমে পড়েছিলাম। কিন্তু আমি একজন রাজনৈতিক কৌশলবিদ। কাজেই আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, এই কাজটা খুব কঠিন হবে। আমার মনে হচ্ছিল, এটি স্পেনের রাজতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।”
“সে কারণেই আমি এই কাজে খুব বেশি উৎসাহ দেইনি। আমি এই প্রস্তাবকে গ্রহণ করেছিলাম আমাদের সম্পর্কের গভীরতার একটি প্রতীক হিসেবে। এটা যে আসলেই ঘটবে, সেটা নয়।”
সে বছরেরই শেষের দিকে এসে তাদের রোমান্টিক সম্পর্কের অবসান ঘটে।
“আমার বাবা যকৃতের ক্যান্সারে ভুগছিলেন এবং ডাক্তাররা বলেছিলেন তিনি বড় জোর আর মাত্র কয়েক মাস বাঁচতে পারেন। কাজেই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার বাবার সঙ্গে সময় কাটাবো। আমাদের বাবা-মেয়ের সম্পর্ক ছিল বেশ ঘনিষ্ঠ। কিন্তু আমার বাবার শেষকৃত্য শেষ হওয়ার পরই রাজা আমাকে জানালেন, তিন বছর ধরে আরেক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক চলছে। আমি বিরাট একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম।”
“আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়লাম- এরকমটা আমি মোটেই আশা করিনি। বাবার মৃত্যুর পর আমার একটি আবেগময় সমর্থন দরকার ছিল। অথচ ঘটলো বিপরীত, আমাকে বিরাট এক ধাক্কা দিল এটি। তিনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর, আমার বাবাকে দেখতে যাওয়ার পর এরকমটি ঘটবে, আমি আশাই করিনি। কয়েক মাস আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।”
যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের বিশ্বাস ছিল, রাণী সোফিয়া ছাড়া রাজা কার্লোসের সঙ্গে একমাত্র তারই এরকম্ একটি একান্ত সম্পর্ক আছে।
“আমি তাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলাম, একই সঙ্গে অন্য কোন নারীর সঙ্গে যদি তিনি সম্পর্ক রাখেন, সেটা আমি মেনে নেব না। আমার মনে হয় শেষকালে তিনি নিজের এসব কাজের জন্য লজ্জিত হয়েছিলেন। কিন্তু আমি আসলে এই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারিনি।”
যদিও তাদের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল, তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব অক্ষুন্ন রইলো। কারণ রাজা কার্লোস যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের সন্তানদের সঙ্গেও বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০০৯ সালের শেষের দিকে রাজা হুয়ান কার্লোস যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন।
“আমাকে তিনি কয়েকটি দুঃসংবাদ জানালেন। তার ফুসফুসে একটি টিউমার ধরা পড়েছে। তার ধারণা, এটি ক্যান্সার। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তিনি বললেন, তার পরিবার এখনো বিষয়টি জানে না। আমি তাকে এ অবস্থায় ছেড়ে যেতে চাইনি। কাজেই আমি তার একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পাশে থাকলাম, যখন কীনা তিনি এরকম অসুস্থ।”
২০১০ সালে রাজা কার্লোসের অপারেশন হলো। এ সময় রাজা যু সেইন-উইটজেনস্টাইনকে অনুরোধ করলেন হাসপাতালে তার পাশে থাকার জন্য।
“অপারেশনের আগে আমি হাসপাতালে তার বেডের পাশে একটি সোফায় ঘুমিয়েছিলাম। কারণ তিনি বেশ নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু বায়োপসি রিপোর্টে দেখা গেল, তার টিউমারটি আসলে খারাপ কিছু নয়।”
এরপর রাজার পরিবার এসে পৌঁছালো হাসপাতালে।
“রাজপরিবারের স্টাফরা আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বললেন। রাণী সোফিয়া এবং রাজকর্মচারীরা যখন বুঝতে পারলেন আমার সঙ্গে রাজার সম্পর্ককটা কতটা সিরিয়াস, তারা আমার ব্যাপারে বেশ রুঢ হয়ে উঠলেন।”
তবে তা সত্ত্বেও রাজার সঙ্গে যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের বন্ধুত্বপূণ সম্পর্ক অব্যাহত রইলো।
“তিনি ধীরে ধীরে অপারেশন থেকে সেরে উঠলেন। আমি মাঝে মধ্যে মাদ্রিদে যেতাম তার অবস্থা দেখতে। তিনি ঠিকমত সেরে উঠছেন কীনা, তা দেখতে।”
এর পরের ঘটনা ২০১২ সালে, বোতসোয়ানায়। একটি মৃত হাতি, রাজার ভাঙ্গা কোমর।
যু সেইন-উইটজেনস্টাইন বলেন, “আমিই যে রাজাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছিলাম, সেটা কিন্তু কোথাও বলা হয়নি। কারণ এ নিয়ে আসলে কোন পরিকল্পনাই ছিল না।”
“আমরা একটা প্রাইভেট প্লেনে করে ফিরে আসি। আমরা জানতাম, রাজার শরীর খুব ভালো নয়। তার সঙ্গে দুজন ডাক্তার ছিলেন। সেকারণে আমি বেশ ভয় পাচ্ছিলাম। তাকে অপারেশনের জন্য তৈরি রাখা হয়েছিল। আমি খুব নার্ভাস ছিলাম, তাকে জীবিত অবস্থায় দেশে ফেরত নিতে পারবো কীনা, সেটা নিয়ে আমার মনে চিন্তা হচ্ছিল।”
কিন্তু বোতসোয়ানায় রাজার এই শিকার অভিযান মিডিয়ার জন্য এক বিরাট কাহিনী হয়ে দাঁড়ালো। যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের ধারণা, পুরো ব্যাপারটি ছিল পূর্ব-পরিকল্পিত।
“আমার ধারণা দুর্ঘটনা যদি নাও ঘটতো, তাহলেও এই অভিযানের কথা ফাঁস হতো। ২০১১ সাল হতেই রাজার মেয়ে এবং মেয়ের জামাইকে নিয়ে কেলেংকারির কথা প্রকাশ পাচ্ছিল। এ নিয়ে এস্টাবলিশমেন্টের এবং রাজপরিবারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। রাজপ্রাসাদের ভেতরের অনেক শক্তিও সক্রিয় ছিল। তারা রাজাকে সিংহাসন ত্যাগে বাধ্য করার জন্য চেষ্টা করছিল।”
বোতসোয়ানা থেকে রাজা কার্লোসের শিকার দল ফিরে এলো মাদ্রিদে গভীর রাতে। রাজা কার্লোসকে সোজা নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে।
“যে মূহূর্তে সেই সফর থেকে ফিরলাম, তারপর থেকে যেন আমি সারাক্ষণ নজরদারিতে।”
“আমাকে ওয়ালিস সিম্পসন রূপে চিত্রিত করার জন্য যেন একটা প্রচারণা শুরু হলো (ব্রিটেনের রাজা অস্টম এডওয়ার্ডের প্রেমিকা ওয়ালিস সিম্পসন, যার জন্য তিনি সিংহাসন ছেড়েছিলেন)। কিংবা আমি যেন লেডি ম্যাকবেথ। এক অশুভ চরিত্র, যে এই চমৎকার মানুষটিকে এই শিকার অভিযানে নিয়ে গেছি দেশের এক বিরাট অর্থনৈতিক সংকটের সময়।”
যু সেইন-উইটজেনস্টাইন জানান, আফ্রিকায় এই সফরের পর থেকেই তার ওপর স্পেনের গুপ্তচর সংস্থার নজরদারি শুরু হয়। মোনাকোতে তার ফ্ল্যাটটি নাকি ছিল প্রথম টার্গেট।
“আমি যখন ভ্রমণ করছি তখন আমার অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে সেখানে লোকজন থাকছিল। আমি হঠাৎ আমার সিকিউরিটি কোম্পানি থেকে একটা মেসেজ পেলাম, তারা বললো, স্পেন থেকে তোমার বন্ধুরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তখন আমি রাজাকে টেক্সট পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা, কী হচ্ছে। তিনি আমাকে বললেন, পাপারাজ্জিদের কাছ থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য ওরা সেখানে গেছে।”
“তিনি যদি সত্যিই আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, তিনি তো মোনাকোর প্রিন্স অ্যালবার্টকে ফোন করতে পারতেন। তিনি আমারও দীর্ঘদিনের বন্ধু। তিনি বলতে পারতেন, আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু উদ্বেগ আছে, আপনি কি করিনার ফ্ল্যাটটির ওপর একটু নজর রাখতে পারেন?”
তাহলে এরা কী খুঁজছিল?
“ওরা কাগজপত্র খুঁজছিল। একেবারে আঁতিপাতি করে। সেখানে তারা ছিল কয়েক সপ্তাহ ধরে।”
এরা ঠিক কী ধরণের কাগজ পত্রের সন্ধানে ছিল, সেটা তিনি জানেন না।
যু সেইন-উইটজেনস্টাইন জানান, ব্রাজিলে যখন তিনি কাজে গিয়েছিলেন, সেখানেও তাকে অনুসরণ করা হচ্ছিল। তিনি বেনামি মৃত্যুর হুমকিও পেলেন। তাকে বলা হলো, মোনাকো আর নিসের মাঝখানে অনেক টানেল আছে। যেন তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে প্রিন্সেস ডায়ানা কিভাবে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তিনি আরো জানান, সুইজারল্যান্ডে তার অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে লিভিংরুমে কেউ প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু সম্পর্কে একটা বইও রেখে এসেছিল।
২০১২ সালের শেষ দিকে লন্ডনে স্পেনের গুপ্তচর সংস্থার যিনি প্রধান, তিনি এসে দেখা করলেন তার সঙ্গে। তার নাম ফেলিক্স স্যানয রোলডান।
“তিনি বললেন, রাজা তাকে পাঠিয়েছেন। আমি যেন মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলি, সেজন্যে আমাকে হুঁশিয়ার করে দেয়া হলো।”
“তিনি আমাকে বললেন, যদি আমি এসব কথা না শুনি, তাহলে আমার বা আমার সন্তানদের শারীরিক নিরাপত্তার কোন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না।”
বিবিসি ফেলিস্ক স্যানয রোলডানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে। (তিনি এখন আর স্প্যানিশ ইন্টেলিজেন্সের প্রধান নন)। কিন্তু কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি এখন একটি স্প্যানিশ কোম্পানির উপদেষ্টা। তারাও মিস্টার রোলডানের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
তবে এটা ঠিক যে, ফেলিক্স স্যানয রোলডান রাজা কার্লোসের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
“যখন ফেলিক্স স্যানযকে স্পেনের গুপ্তচর সংস্থা সিএনআই্ এর প্রধান করা হয়, তখন তাদের দুজনের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি রাজাকে সবসময় রক্ষা করতেন”, বলছে ভিলানুয়েভা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ফারনান্দো রুয়েডা। তিনি স্প্যানিশ ইন্টেলিজেন্স সংস্থা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ।
“তবে ফেলিক্স স্যানয প্রথম প্রধান নন, যিনি রাজাকে করিনার সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এ্ই কাজ তার আগের প্রধানরাও করেছেন। তারা বলেছেন, করিনাকে বিশ্বাস করা উচিৎ নয়”, বলছেন তিনি।
তাহলে যু সেইন-উইটজেনস্টাইন হয়রানির যে অভিযোগ করছেন, সেটা সম্পর্কে তার মন্তব্য কি?
“কেউ জানে না, এই অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যে।”
“তবে এটি আমাকে অবাক করবে না। যদি গুপ্ত সংস্থা মনে করে, স্পেনের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তারা তখন তাদের যত উপায় আছে, সব উপায়ে চেষ্টা করবে এরকম কাগজপত্র ফিরে পেতে।”
তবে হাতি শিকারের অভিশাপ থেকে যেন মুক্তি পেলেন না রাজা কার্লোস। ২০১৪ সালে তিনি রাজসিংহাসন ত্যাগ করলেন তার ছেলে ফেলিপেকে সিংহাসনে বসিয়ে। সাবেক রাজা হিসেবে এরপরও তাকে নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। যেতে হবে বাণিজ্য সফরে, ঘুরে বেড়াতে হবে বিশ্ব। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে।
মধ্যপ্রাচ্যে যেসব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাজা কার্লোস গড়ে তুলেছিলেন, সেগুলো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হতে লাগলো। বিশেষ করে যারা আর্থিক কেলেংকারির তদন্ত করছিলেন তারা। স্পেনের পুলিশ বিভাগের এক সদস্যের গোপন রেকর্ডিং ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর শুরু হলো বিচার বিভাগীয় তদন্ত। এই পুলিশ সদস্য ধনী এবং ক্ষমতাবান লোকদের সঙ্গে তার টেলিফোন আলাপ রেকর্ড করেছিল। এর মধ্যে যু সেইন-উইটজেনস্টাইনও ছিলেন।
২০০৮ সালে স্পেনের মিডিয়ায় এই রেকর্ডিং ফাঁস হয়ে গেল। একটি রেকর্ডিং এ শোনা গেল একটি নারী কন্ঠ। স্প্যানিশ ভাষায় এই মহিলা বলছেন, “স্পেনের সাবেক রাজা কিভাবে এত টাকা পান? তিনি একটা প্লেনে চড়ে কোন একটা আরব দেশে যান… সেখান থেকে তিনি সুটকেস ভর্তি নোট নিয়ে ফেরেন। কোন কোন সময় ৫০ লাখ নিয়ে আসেন। নোট গোনার জন্য তার মেশিন আছে। আমি এটা নিজের চোখে দেখেছি।”
করিনা যু সেইন-উইটজেনস্টাইন কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেন নি যে এটি তার কন্ঠ। কিন্তু এসব রেকর্ডিং যখন প্রকাশিত হলো, তা স্পেনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলো। এরপর সুইজারল্যান্ডে তদন্ত শুরু হলো। তদন্ত শুরু হলো স্পেনে।
এই কেলেংকারির কেন্দ্রে আছে প্রয়াত সৌদি বাদশাহর কাছ থেকে দশ কোটি ডলার পাওয়ার অভিযোগ। যে অর্থ নাকি রাখা হয়েছিল একটি সুইস ব্যাংকের একাউন্টে। এই ব্যাংক একাউন্টটি আবার পানামা ভিত্তিক একটি অফশোর ফাউন্ডেশনের। আর এই ফাউন্ডেশনের সুবিধেভোগী হচ্ছেন রাজা হুয়ান কার্লোস।
সুইজারল্যান্ডের তদন্ত কর্মকর্তা রাজা হুয়ান কার্লোসের সঙ্গে সম্পর্কিত তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছেন। সৌদি আরবে একটি হাইস্পীড রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য একটি স্প্যানিশ কোম্পানিকে যে কাজ দেয়া হয়েছে, তার সঙ্গে এই অর্থের কী সম্পর্ক সেটাও দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তা। অর্থাৎ, এটি কোন ঘুষ ছিল কীনা।
স্পেনের সুপ্রিম কোর্টও সাবেক রাজা হুয়ান কার্লোসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তবে আদালত কেবল সেই সব অভিযোগের তদন্ত করতে পারবে, যেগুলো ঘটেছে তিনি ২০১৪ সালে সিংহাসন ছাড়ার পর।
তারপর এলো সেই আকস্মিক ঘোষণা। আগস্টের শুরুতে সাবেক রাজা ঘোষণা করলেন, তিনি স্পেন ছেড়ে চলে গেছেন। দু সপ্তাহ ধরে নানা জল্পন-কল্পনা চললো, তিনি কোথায়। অবশেষে স্পেনের রাজপ্রাসাদ থেকে জানানো হলো, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন।
এই পুরো কাহিনীতে তাহলে করিনা যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের ভূমিকা কী? সুইজারল্যান্ডের তদন্ত কর্মকর্তারা যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে, তিনি তাদের একজন। কারণ কী?
কারণটা হচ্ছে, ২০১২ সালে বোতসোয়ানায় দুর্ঘটনার পর তৎকালীন রাজা কার্লোস সৌদি আরব থেকে পাওয়া দশ কোটি ডলারের যা অবশিষ্ট ছিল, তার মধ্যে সাড়ে ছয় কোটি ইউরো যু সেইন উইটজেনস্টাইনকে দিয়েছিলেন।
“আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। কারণ উপহারের অংকটা ছিল বিশাল”, বলছেন তিনি।
“আমি অবশ্য বলবো, তিনি তার উইল সম্পর্কে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছিলেন ২০১১ সালে। তিনি তখন তার মৃত্যু সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেছিলেন এবং বলছিলেন তিনি তার উইলে কী লিখে যেতে চান।”
“তিনি আরও বলেছিলেন তিনি আমার জন্য কিছু করতে চান। কিন্তু কোন সময় তিনি অর্থের অংকটা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেননি। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন যে, তার ইচ্ছে তার পরিবার মেনে নেবে না।”
তিনি জানান, তিনি এই অর্থ পেয়েছিলেন তার মোনাকোর ফ্ল্যাটটি যখন তছনছ করা হয়, এবং তার সঙ্গে যখন স্পেনের গুপ্তচর সংস্থার প্রধান সাক্ষাৎ করেন, তারপর।
এই অর্থ তার একাউন্টে ট্রান্সফার হওয়ার পর তিনি মাদ্রিদে যান রাজাকে ধন্যবাদ দিতে। তিনি বলছেন, রাজা তাকে বলেছিলেন, তার সঙ্গে যে আচরণ তিনি করেছেন, সেজন্যে তার অপরাধবোধ হচ্ছে। “আমার মনে হয় আমাকে যেরকম চাপ দেয়া হয়েছিল, আমার মান-সন্মানের যে ক্ষতি করা হয়েছিল, সেটা বুঝতে পেরে তিনি বেশ আঘাত পেয়েছিলেন।”
যু সেইন-উইটজেনস্টাইন সুইজারল্যান্ডের তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস, রাজা তাকে ভালোবেসে এই অর্থ দিয়েছেন।
“আমার মনে হয়, তিনি যে আমাকে কতটা মূল্য দিতেন, আমি যে তার কাছে কী ছিলাম, সেটার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এটা করেছেন। তার সবচেয়ে খারাপ দিনগুলোতে আমি যে তার দেখাশোনা করেছি, এটা ছিল সেজন্য্ কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।”
তিনি দাবি করছেন, সাবেক রাজা তার অর্থ লুকানো বা পাচার করার জন্য তাকে দেননি। যদিও ২০১৪ সালে রাজা এই অর্থ ফেরত চেয়েছিলেন।
“২০১৪ সালে রাজা বেশ মরিয়া চেষ্টা চালালেন, যাতে আমি তার কাছে ফেরত আসি। এ পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারলেন, আমি ফেরত আসবো না। তখন তিনি একদম ক্ষেপে গেলেন। তখন তিনি সবকিছু ফেরত চাইলেন। আমার মনে হয়ে তিনি রেগে-মেগে এটা করেছিলেন।”
“সুইস তদন্তকারীদের কাছে তিনি বলেছেন, তিনি আসলে কখনোই আমাকে দেয়া অর্থ ফেরত চাননি। আর তার অর্থও আমার কাছে রাখেননি।”
তবে রাজা কার্লোস এই যে কয়েক মিলিয়ন ইউরো উপহার দিয়েছেন যু সেইন-উইটজেনস্টাইনকে, তা নিয়ে স্পেনের গণমাধ্যমে তীব্র আলোচনা চলছে। এটা নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। স্পেনে যখন ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন এই কাহিনী ফাঁস হয়।
ইভেট টরেন্ট বার্সেলোনার এক তরুণ আইনজীবী। তিনি অনলাইনে এই আবেদন জানালেন যাতে করে এই অর্থ স্পেনের জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য ব্যয় করা হয়।
“স্পেনের ক্লান্ত-শ্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা হাজার ঘন্টা করে কাজ করছে ন্যূনতম সরঞ্জাম নিয়ে, কাজেই এটাই হচ্ছে সবচেয়ে ন্যায্য দাবি।”
আড়াই লাখের বেশি মানুষ এই আবেদনে সই করলো। তো সাবেক রাজা যে তার সাবেক প্রেমিকাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপহার দিয়েছে, সেটার কী করা উচিৎ বলে মনে করেন টরেন্ট?
আমি জানি না এই অর্থ অবৈধ কীনা। কিন্তু যদি চলমান তদন্তে প্রমান হয় যে এটি অবৈধ, তাদের এটি ফেরত দেয়া উচিৎ।
এ ব্যাপারে যু সেইন-উইটজেনস্টাইনের কী মত?
“আমি এটা সুইজারল্যান্ডের তদন্তকারীদের ওপর ছেড়ে দেব”, বলছেন তিনি। “এটা নিয়ে আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করা ঠিক হবে না।”
“কারণ আমি মনে করি, এক্ষেত্রে, সবারই সবকিছু ফেরত দেয়া উচিৎ। আমার কাছে যেটা অসাধারণ মনে হয়, তা হলো, একটি পরিবার গত ৪০ বছর ধরে যেভাবে কাজকর্ম চালিয়েছে, তার সবকিছুর জন্য তারা এখন একজন মাত্র ব্যক্তির ওপর মনোযোগ দিচ্ছে। আর সেটা হচ্ছে আমি। তাদের এখতিয়ারে তো আরও শত শত একাউন্ট আছে।”
করিনা যু সেইন-উইটেজনস্টাইন বলছেন, তাকে নিয়ে এবং রাজার কাছ থেকে তিনি যে অর্থ পেয়েছেন, তা নিয়ে এই যে লেগে আছে সবাই, এর কারণ স্পেনের গুপ্তসংস্থা সিএনআই এর পেছনে আছে, এগুলো সব তাদের ষড়যন্ত্র।
গত কয়েক বছরে যুক্তরাজ্যে তার বিরুদ্ধে সংঘটিত অনেক অপরাধের বিষয়ে পুলিশের কাছে যত অভিযোগ তিনি দায়ের করেছেন, সেগুলোর রেফারেন্স নম্বর তিনি বিবিসিকে দিলেন।
“আমাকে হয়রানি করা কখনোই বন্ধ হয়নি, এটি বরং আরও বেড়েছে”, বলছেন তিনি।
“তবে যুক্তরাজ্যে যখন এ নিয়ে মোকাদ্দমা শুরু হবে, তখন আমরা এ নিয়ে কথা বলবো। এই মামলায় সব কিছু দেখা হবে। হুয়ান কার্লোস হবেন এই মামলার বিবাদী, তবে একমাত্র বিবাদী নন।”
তবে এই মামলা এখনো শুরুই হয়নি।
তবে স্পেনের গুপ্তচর সংস্থা সিএনআই এর ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ ফার্নান্দো রুয়েডা বলছেন, করিনা যু সেইন-উইটেজনস্টাইনের দাবিগুলো নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।
“সবকিছু যেখানে প্রকাশ হয়ে গেছে, তখন আর স্পেনের সিক্রেট সার্ভিস কেন তাকে বৃটেনে এসে হয়রানি করবে তা বোধগম্য নয়। তিনি আসলে যা করছেন, তা হলো নিজেকে ভিক্টিম সাজিয়ে রক্ষার চেষ্টা।”
“করিনার সমস্যা হচ্ছে ওর বিরুদ্ধে এখন অনেক মামলা ঝুলছে, এবং তাকে ব্যাখ্যা করতে হবে কেন তার কাছে ৬ কোটি ইউরো আছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হতে পারে। কিন্তু স্পেনের আইন অনুযায়ী হুয়ান কার্লোসের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গঠন করা যাবে না”, বলছেন তিনি।
তবে এরকম আইনি ঝামেলায় ফেঁসে যাওয়ার পরও যু সেইন-উইটজেনস্টাইন বলছেন, সাবেক রাজার সঙ্গে সম্পর্কের জন্য তিনি মোটেই দুঃখিত নন।
“হুয়ান কার্লোসের সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কের জন্য আমি মোটেই দুঃখ করি না। তার জন্য আমার আন্তরিক অনুভূতি ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটা যেদিকে গড়িয়েছে, সেটাতে আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি।”
(সূত্র বিবিসি বাংলা)