সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন, এক মিনিট নীরবতা পালন, বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শণ এবং আলোচনা সভা। দিবসের শুরুতে সকাল ৯.১৫ ঘটিকায় বাংলাদেশ হাউজে মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয় দূতাবাসের সকল সদস্যদের নিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। এ সময় জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। পরবর্তীতে বিকাল ৫.০০ ঘটিকায় দিবসের দ্বিতীয় কার্যক্রম শুরু হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীগণ যোগদান করেন। উল্লেখ্য যে, কোভিড-১৯ মহামরীর প্রেক্ষাপটে স্বাগতিক দেশের আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাইকমিশন এই দিবস উদযাপন করে।
দূতাবাসের প্রথম সচিব মিস অপর্না রানী পালের সঞ্চালনায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমেই উপস্থিত সকলকে নিয়ে মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । এরপর বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সকল নিহত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে জনাব চিরঞ্জীব সরকার, উপহাইকমিশনার, জনাব সাখাওয়াৎ হোসেন, কাউন্সেলর, জনাব দেওয়ান হোসেনে আইয়ুব, কাউন্সেলর ও জনাব শাকিল মাহমুদ, কাউন্সেলর। বাণী পাঠের পর বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের উপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এ পর্যায়ে একটি উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ আলোচনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রবাসী বাংলাদেশীগণসহ মাননীয় হাইকমিশনার মহোদয় বক্তব্য প্রদান করেন। মান্যবর হাইকমিশনার জনাব মিজানুর রহমান তাঁর বক্তব্যের শুরুতে শোকাবহ আগস্টে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা যেমন অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ, তেমনি বঙ্গবন্ধু, বাঙালি জাতি আর বাংলাদেশ একই সুতোয় গাঁথা। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি মিত্র বাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ, আর্ন্তজাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের অতি দ্রুত স্বীকৃতি পাবার ক্ষেত্রে সফল হন। কিন্তু ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ও বিয়োগান্ত ঘটনায় জাতির এই উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়। মান্যবর হাইকমিশনার আরো বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির শুভ মুহুর্তে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পলাতক হত্যাকারীদের বিচারের কাজ সম্পূর্ণ করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি সাধন এবং বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের স্বপক্ষে লড়াই করার উদ্দেশ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার কর্মসূচী এই স্বপ্নের ধারাবাহিক বাস্তবায়ন প্রয়াস। মান্যবর হাইকমিশনার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান।
হাইকমিশনার মহোদয় আরো বলেন যে, করোনা সংকটকালেও আমাদের দূতাবাস প্রবাসীদের ডিজিটাল এবং ডাকের মাধ্যমে কনস্যুলার সেবা প্রদান করেছে। কানাডায় আটকে পড়া বাংলাদেশীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশীদের জন্য “ডক্টরস পুল” গঠন করেছে যাতে তাঁরা যে কোন সময় করোনা বিষয়ে তাঁদের করণীয় সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ পেতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে করোনা পূর্ববর্তীকালে বেশ কিছু সেমিনারের আয়োজন করেছে। মুজিব বর্ষে কানাডার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যাতে বাংলাদেশে নেয়া যায় সে ব্যাপারে হাই কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কানাডার কর্তৃপক্ষ আশ্বস্থ করেছেন যে, এশিয়া অঞ্চলে তাঁর ভবিষ্যৎ যে কোন সফরে বাংলাদেশ তাঁর সফরসূচিতে বিবেচ্য হবে।
অত্র মিশনের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ ও কাডানার মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যে কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগে ও মানব সম্পদ রপ্তানি ক্ষেত্রে পরিসর বাড়ানোর জন্য হাইকমিশন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত উল্লেখযোগ্য প্রবাসী বাংলাদেশীগণ হলেন জনাব কবির চৌধুরী, জনাব শাহ বাহাউদ্দিন শিশির, জনাব মতিন মিয়া, জনাব মাসুদ সিদ্দিকী, জনাব মুন্সি বশির, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুহিবুর রহমান এবং জনাব হাসানুজ্জামান তারা সকলে একমত প্রকাশ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীগণ বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য জোর দাবী জানান।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয় উপস্থিত সকলকে নিয়ে “বঙ্গবন্ধু কর্নার” উদ্বোধন করেন। মান্যবর হাইকমিশনার মহোদয় উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর কর্নারে বঙ্গবন্ধুর উপর পুস্তক, ডকুমেন্টরিসহ বিভিন্ন উপকরণ থাকবে যা সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশীগণসহ আমন্ত্রিত অতিথিগণ এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের শেষে ১৫ই আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত করেনা থেকে মুক্তি কামনা, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
সংবাদদাতা: দেওয়ান হোসনে আইয়ুব, কাউন্সেল, রাজনৈতিক, অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন