পদের নাম বন সহায়ক। শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাশ। কাজ, হাতি তাড়ানো অথবা বনভূমির পাহারাদার। তাও আবার চুক্তিভিত্তিক। মাসিক ভাতা মাত্র ১০ হাজার রুপি। তাতেই বা কি যায় আসে? কাজেও বা লাজ কিসের? তাই বেকারত্ব ঘোচাতে বন সহায়ক পদে আবেদন করলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বহু পিএইচডি, এমএসসি, এমএ পাশ যুবকরা। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট দেখে চক্ষু চড়কগাছ বনকর্তাদের!
এখানেই শেষ নয়। রাজ্যে শূন্যপদ মাত্র দু’হাজার। বুধবার ছিল আবেদন জমা দেয়ার শেষ দিন। আবেদনের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০ লাখ। লিখিত কোনো পরীক্ষা নয়। নিয়োগ হবে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে। সেই প্রক্রিয়া কীভাবে সামলে উঠবেন, তা ভেবেই এখন ঘুম ছুটেছে বনদপ্তরের কর্মকর্তাদের। শুধু পুরুলিয়া জেলায় আবেদনকারীদের ইন্টারভিউ নিতে সময় লাগবে কম করে এক হাজার দিন!
জানা গেছে, জেলার চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন চারটি বড় ট্রাঙ্কেও ধরেনি। অবশেষে বিশাল আকারের ৪৫টি বস্তায় চেপেচুপে ধরানো হয়েছে আবেদনপত্র। বনদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এই প্রথমবার সিভিক ভলান্টিয়ারের ধাঁচে বন সহায়ক পদে নিয়োগ হতে চলেছে। কিন্তু এত সংখ্যক আবেদন জমা পড়বে, তা ভাবতেই পারছি না। যোগ্যতার বিচারেও কাকে রাখবেন আর কাকে বাদ দেবেন, তা নিয়েও কপালের ভাঁজ চওড়া হচ্ছে বনকর্তাদের।
বনদপ্তর সূত্রে খবর, আবেদন নেয়ার প্রক্রিয়া শেষ। এবার স্ক্রুটিনির পালা। তবে সেই স্ক্রুটিনিতে খুব বেশি আবেদনকারীর নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আবেদনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা খুবই কম। এই গ্রাউন্ডে সেভাবে কাউকে বাদ দেয়া যাবে না। একমাত্র বয়সের কারণে কিছু আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই বেশিরভাগ আবেদনকারীই ইন্টারভিউয়ে ডাক পাবেন বলে অফিসাররা মনে করছেন। প্রার্থী বাছাই করবে তিন সদস্যের ইন্টারভিউ বোর্ড। সেই বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে দু’জন ডিএফও এবং একজন চিফ কনজারভেটর অব ফরেস্ট। রাজ্যের ২৩টি জেলাকে ৯টি জোনে ভাগ করে ইন্টারভিউ নেয়া হবে। পুরুলিয়ার ডিএফও রামপ্রসাদ বাদানা বলেন, ‘বুধবার পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে। তাই প্রকৃত সংখ্যা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে যা খবর পেয়েছি, তাতে পুরুলিয়া জেলাতেই লক্ষাধিক আবেদন জমা পড়েছে। বহু উচ্চ শিক্ষিত যুবকও আবেদন করেছেন।’
অফিসারদের বক্তব্য, প্রতিদিন ৬ ঘণ্টায় সর্বাধিক ১০০ জনের ইন্টারভিউ নেয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে শুধু পুরুলিয়া জেলায় আবেদনকারীদের ইন্টারভিউ নিতে এক হাজার দিন লাগার কথা। এই সমস্যার কথা জানিয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে ইন্টারভিউ বোর্ডের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আবেদনকারীর সংখ্যা স্ক্রুটিনির পর জানা যাবে। ইন্টারভিউ বোর্ডের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। দরকার হলে শনি, রোববারও ইন্টারভিউ নেয়া হবে।’
হাতি তাড়ানো, গাছের চারা লাগানো, বনদপ্তরের জমি রক্ষা করা সহ নানা কাজের জন্য বন সহায়ক নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতিটি জেলার বনদপ্তরের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে চাকরি প্রার্থীদের। আবেদন জমা নেয়ার সময় তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা। তখনই জানা যায়, বহু আবেদনকারী এমন রয়েছেন, যারা উচ্চশিক্ষিত।
সূত্র : বর্তমান