সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যাকে কেন্দ্র করে এবার মুখোমুখি অবস্থানে দাড়িয়েছে রাষ্ট্রের দুই নিরাপত্তা বাহিনী র্যাব ও পুলিশ। প্রকাশ্যে না আসলেও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুসছে র্যাবের কর্মকর্তারা।
সিনহা হত্যার পর মামলার তদন্ত ও ওসি প্রদীপসহ আসামিদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে র্যাবকে। কিন্তু পুলিশের বাধা ও অসহযোগিতার কারণে র্যাব সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো-সিনহা হত্যাকে চাপা দেয়ার জন্য পুলিশ সিনহার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলা করেছিল। এই মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য টেকনাফের তিনজনকে সাজানো কথিত প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাজানো সাক্ষীও বানিয়েছিল।
পরে পুলিশের ওই তিন সাক্ষী গণমাধ্যমকে বলেছেন-তারা এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাদেরকে জোর করে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে। সাদা কাগজে তাদের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে। তাদের এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পরই গত সোমবার র্যাব তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডেকে আনে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে র্যাব বুঝতে পারে যে, সিনহা হত্যার সঙ্গে তাদেরও সংশ্লিষ্টতা আছে। এরপর মঙ্গলবার তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কিন্তু র্যাব তাদেরকে গ্রেফতার দেখানোর পরই টেকনাফ থানার পুলিশ সদস্যরা মধ্যরাতে ওই তিনজনের বাড়িতে গিয়ে তাদের স্বজনদের দিয়ে র্যাবের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করতে বাধ্য করে।
আটক নুরুল আমিন ও নিজামুদ্দিনের পরিবারের লোকজন বলেছেন, রাতের বেলা পুলিশ এসে আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলে। এরপর আমাদেরকে বলে-সাদা কাগজে সই দেয়ার জন্য। আর বলতে হবে যে-সাদা পোশাকে লোকজন এসে তাদেরকে তুলে নিয়ে গেছে।
পুলিশের এই কর্মকাণ্ড একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচার হওয়ার পরই দুই বাহিনীর মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে যায়। প্রচন্ড ক্ষুব্দ হয়ে উঠে র্যাব কর্মকর্তারা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে র্যাবের ভেতর চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। কক্সবাজার জেলায় অবস্থানরত র্যাব সদস্যরা এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। আর র্যাবের উত্তেজনা কমানোর জন্য দুই বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠকও হয়েছে।
এরপর, আসামিদেরকে রিমান্ডে আনার কথা থাকলেও গতকাল সারাদিন কারাগারের সামনে বসে থেকেও আসামিদেরকে আনতে পারেনি র্যাব। বিকেলে তারা ক্ষুব্দ হয়ে ফিরে আসে।
জানা গেছে, এতদিন পুলিশের যেসব কর্মকর্তারা ওসি প্রদীপ থেকে সুবিধা নিয়েছিল তারা এখন বিচার কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। র্যাবকে তারা সঠিকভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না।
এদিকে শিপ্রা দেবনাথ ও সিফাত যে রিসাের্ট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো সে সময়ের ভিডিও ফুটেজে কয়েক রাউন্ড গুলি ও সিনহার ল্যাপটপের দেখা গেলেও এখনও পর্যন্ত তার হদিস মেলেনি। শুধু তাই নয় রিসোর্ট থেকে উদ্ধার হওয়া গুলি দেখানো হয়েছে ঘটনা স্থল থেকে উদ্ধার।