প্রশ্নটি অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একার নয়? সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এ প্রশ্ন তুলছেন? তারা বলছেন, এতোদিন কেন নয়? মানেটা হলো দুর্নীতি, অনিয়ম বা অর্থ পাচারের অভিযোগে কেউ ধরা পড়লেই সংবাদমাধ্যমে তাকে নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েন সাংবাদিকরা। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত তারা নীরব থাকেন।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, করোনা টেস্ট কেলেঙ্কারি, সর্বশেষ প্রদীপ কাণ্ডে অনেকেই মিডিয়ার এই সমালোচনা করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সমালোচনা কতটা যৌক্তিক? প্রয়াত মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইন কথাটা প্রায়ই বলতেন, স্বাধীন, সার্বভৌম দেশে সরকার ছাড়া কেউই স্বাধীন নয়। এটা অস্বীকার করার জো নেই, গণমাধ্যম কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নয়। আর এ স্বাধীনতার মাত্রাটাও প্রায়শ’ই ওঠা নামা করে। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সংখ্যা যে কমে গেছে তা হলফ করেই বলা যায়। প্রশ্ন করার কাজ থেকেও প্রায়ই নিজেকে নিবৃত্ত করছে সংবাদমাধ্যম।
এর কারণের তালিকা দীর্ঘ। তবে আলোচিত কেলেঙ্কারি গুলোতে যে, মিডিয়া কোন রিপোর্ট করেনি তা পুরো সত্য নয়। ক্যাসিনো নিয়ে ঢাকার সংবাদপত্রে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল। মোহাম্মদ শাহেদ ওরফে শাহেদ করিমের প্রতারণা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সেভাবে কোন অনুসন্ধান হয়নি সেটা সত্য। বিশেষকরে এমন একজন প্রতারকের বিভিন্ন টকশোতে অংশ নেয়াতো রীতিমতো মিডিয়ার জন্যই বিব্রতকর। তবে রিজেন্ট হাসপাতালের অপকর্ম নিয়ে অভিযানের আগেই রিপোর্ট হয়েছে। একটি টিভি চ্যানেল এ নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করেছে। মানবজমিন এও রিপোর্ট হয়েছে হাসপাতালটির অনিয়ম নিয়ে। যেমন ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই বরকত-রুবেলকে নিয়ে অনেক আগেই মানবজমিনেই অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। জেকেজির কেলেঙ্কারি নিয়েও গণমাধ্যমে আগেই রিপোর্ট হয়।
তাই বলে, নেটিজেনরা গণমাধ্যমের যে সমালোচনা করছেন তা কি অযৌক্তিক? না, এই সমালোচনার যে সুর তার যৌক্তিতা রয়েছে পুরোমাত্রাতেই। এখন যেমন শুধু প্রদীপ কুমার দাশকেই নিয়েই রিপোর্ট হচ্ছে। যেন আর কোথাও ক্রসফায়ার হয় না। খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই বিষয়ের প্রতি ইংগিত করেই লিখেছেন, বাংলাদেশ শুধু টেকনাফ নয়, বাংলাদেশ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা অর্থনৈতিকভাবে যেমন নিষ্ঠুর চাপে রয়েছে তেমনি চিন্তা আর প্রশ্ন করার দিক থেকেও রয়েছে অসহায় অবস্থানে। পুরনো একটি লেখায় ডেকার্টেকে স্মরণ করেছিলাম। তার বিখ্যাত উক্তি-‘আই থিংক, দেয়ারফোর আই অ্যাম’। আমি চিন্তা করতে পারি সেজন্যই আমি আছি। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে কর্তৃত্ববাদের উত্থানও স্বাধীন সাংবাদিকতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ডনাল্ড ট্রাম্প সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে যতো বক্তব্য দিয়েছেন তার হিসাব রাখা দায়। ভারতেও ভিন্ন চিন্তা চাপের মুখে। কয়েকমাস আগে আনন্দবাজার পত্রিকার একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধের শিরোনাম ছিল, ‘বাচ্চারা কেউ শব্দ কোরো না, কর্তাকে কেউ প্রশ্ন কোরো না’।