জনমত ডেস্ক : বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাবেক মন্ত্রী ও নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার সুরভী এবং মাহবুব আলী খাঁন ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যেগে ভার্চুয়াল স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মরহুমের জামাতা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মরহুমের কনিষ্ঠ কন্যা ডাঃ জুবাইদা রহমানের উপস্থিতিতে দোয়া ও স্মরণসভায় প্রধান অথিতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম এ খানকে একজন আদর্শবান ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন সততা, সাহস ও দেশপ্রেম এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গুনের অধিকারী ছিলেন মাহবুব আলী খান। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তালপট্টি দ্বীপ ও জাতিসংগের মাধ্যমে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে তৎকালীন নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে এম এ খানের সাহসী ভূমিকা জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে । তিনি বলেন পারিবারিক ঐতিহ্য, শিক্ষা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে তাদের গোটা পরিবার অনেক উচ্চ আসনে আসীন ছিলেন। মাহবুব আলী খানের কর্মজীবনেও এর প্রতিফলন ঘটেছে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে জাতির সংকট হলো, সৎ মানুষের অভাব, সৎ রাজনীতিবিদের অভাব। মিথ্যাচার এখন সত্যাচারে পরিণত হয়েছে। মিথ্যাচারের সংস্কৃতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে আজ সততা ও দেশপ্রেমের অভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন প্রতিবাদ করার শক্তি যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। শত প্রতিকূলতা স্বত্তেও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্বে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্বভাবে আন্দোলনের জন্য তৈরী থাকতে হবে । ক্ষমতাসীনদের মিথ্যাচারের রাজনীতি, আইনের শাসনের অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশকে খাদের কিনারে নিয়ে গিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সংসদ প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন নাই বিধায় জনগণের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহিতা ও দায়বোধও নেই। স্বাধীনচেতা জাতি হিসেবে এর চাইতে দূর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না।
দলের অন্যতম এই নীতিনির্ধারক বলেন, ক্ষমতাসীনরা রাজনীতিতে পারস্পরিক সম্মান ও সহনশীলতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী উল্লেখ করে তিনি বলেন রাজনৌতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় তাঁকে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন বেগম খালেদা জিয়াকে এতো হয়রানির করার পরেও তিনি মানসিকভাবে শক্ত রয়েছেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল। তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সারা দেশের মানুষ খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে, কখন গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে আসবে। সর্বোপরি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে। তিনি বলেন দেশের ক্ষমতাসীনরা পরবর্তী প্রজন্মকে বিপথগামী করছে এবং প্রতিনিয়ত ইতিহাসকে বিকৃত করে যাচ্ছে । এম এ খানের জীবনী থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এইসব থেকে মুক্তির জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্বভাবে আন্দোলন করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি দেশের সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে ইনশাআল্লাহ এই দল বাংলাদেশে আবারো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, মরহুম এম এ খান বার বার সাহস ও দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন বীর সেনাপতি ছিলেন। স্বাধীনতার মহান ঘোষক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নির্দেশে প্রতিবেশী দেশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এম এ খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের নৌবাহিনী সাহসিকতার সাথে তালপট্টি দ্বীপে লাল সবুজের পতাকা উড়ায় । মুক্তিযুদ্বে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে রণাঙ্গনের এই যোদ্ধা বলেন, আজকে যারা দেশ শাসন করছেন, যারা বাহিনী পরিচালনা করছেন কলিজায় সেই সাহস আছে কিনা আমরা সবাই জানি। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদত বরণের দিন রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে ঢাকা এসে রেডিওতে যে ভাষণ দেন তাতে তৎকালীন নির্বাচিত বিএনপি সরকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার আহবান জানান । তিনি সংকটে-সমরে-দূর্বিপাকে সবসময় মানুষের পাশে ছিলেন। রিয়ার এডমিরাল এম এ খান একজন ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশকে উচ্চ আসনে নিয়ে যেতে তার অবদান ছিল । মরহুম এম এ খান যখন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি তখব সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি বলেন মাহবুব আলী খানের গোটা পরিবারটি নিভৃতচারী ও প্রচার বিমুখ। এম এ খানের সুযোগ্য সহধর্মিনী চ্যারিটেবল সংগঠন সুরভী’র মাধ্যমে দেশের অসংখ্য হতদরিদ্র শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করছেন । হতদরিদ্র ও বস্তিতে বসবাসকারী মানুষদের কল্যানে তাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এই পরিবারের একটিই মূলমন্ত্র তাহলো দেশের জন্য কাজ করা। তিনি বলেন এই পরিবারটি আড়ালে কাজ করে আনন্দ অনুভব করলেও জাতির স্বার্থে উনাদের পাদপ্রদীপে আনতে হবে।
মহান মুক্তিযুদ্বে বীর বিক্রয় খেতাবে ভূষিত এই নেতা আক্ষেপ করে বলেন, দেশে এখন সাহসী দেশপ্রেমিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। চতুর্দিকে আজ তোষামোদকারী স্তাবকের দল। স্বাধীন বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমরা কি যার যার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছি ? তিনি বলেন আজ মাহবুব আলী খানের মতো ত্যাগীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বিধায় দেশ আজ অরক্ষিত। দেশের স্বাধীনচেতা মানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলছে। তিনি বলেন, কোথায় আজ সেই ছাত্র সমাজ ? যারা মূল রাজনৌতিক দল সময়ক্ষেপণ করলেও তারাই লাল সবুজের পতাকা উড়িয়েছিল ? কত স্বাধীনচেতা ছিল সেই সময়ের ছাত্র ও যুব সমাজ।
স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে সাবেক বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসাইন চৌধুরী তাঁর সারগর্ভ বক্তব্য পেশ করেন । তিনি বলেন মরহুম মাহবুব আলী খাঁন একজন কর্তব্যপরায়ণ এবং নিষ্ঠাবান কর্মঠ মানুষ ছিলেন। তিনি সহকর্মীদের সাথে খুবই ভাল ব্যবহার করতেন। তাঁর সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ঐ সময়ে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনকে নৌ দস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয় । তিনি বলেন মাহবুব আলী খাঁন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন । তিনি সেনাবাহিনীতে মহিলাদের যোগদান ও ক্ষমতায়নে বিশেষ উদ্যেগ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করেছিলেন ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কমিউনিটি ও টিভি ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী নেতা পাশা খন্দকার এমবিই । অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এ মালিক, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, নির্বাহী কমিটির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান ও মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আতাউর রহমান পীর। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং দোয়া পরিচালনা করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আবু সায়ীদ আনসারী। ভার্চুয়ালে আরো যুক্ত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, হুমায়ুন কবির, যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, যুক্তরাজ্য বিএনপির সেক্রেটারি কয়ছর আহমেদসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
মাহবুব আলী খান স্মৃতি সংসদ, যুক্তরাজ্যের সৌজন্যে রিয়ার এডমিরাল এম এ খান-এর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিলেতের বহুল প্রচারিত সুরমা পত্রিকায় শ্রদ্ধাঞ্জলি শিরোনামে একটি বিশেষ সাময়িকী ‘স্মরণ সংখ্যা’ প্রকাশ করে । স্মরণ সংখ্যায় রয়েছে তাঁর জীবনগাঁথা। এতে তুলে ধরা হয়েছে এই মহান ব্যক্তিত্বের বর্ণাঢ্যজীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ। স্মরণ সংখ্যায় লিখেছেন রিয়ার এডমিরাল এম এ খানের কনিষ্ট কন্যা বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ডক্টর এম মুজিবুর রহমান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক মাহবুবা জেবিন সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন ও মাহাবুবুর রহমান । এখানে উল্লেখ্য যে, মাহবুব আলী খান স্মৃতি সংসদ, যুক্তরাজ্যের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সোহেল আহমদ সাদিক, কামাল উদ্দিন, আবেদ রাজা, ফয়সল আহমদ, এমাদুর রহমান এমাদ, খালেদ চৌধুরী, শাহজাহান মিয়া, নজরুল ইসলাম মাশুক ও আরিফ আহমদ। মাহবুব আলী খান স্মৃতি সংসদ, যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ঐ দিন বাদ মাগরিব কোরআন খতম ও মিলাদ মাহফিল লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ফুড ব্যাঙ্কে খাদ্য দ্রব্য প্রদান করা হয়।