ডোনাল্ড ট্রাম্প
বর্ণাঢ্য ভালোবাসার জীবন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। আবেদনময়ী সাবেক পর্নো তারকা স্টোর্মি ডেনিয়েলসের দাবি অনুযায়ী ট্রাম্পের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক ছিল। নির্বাচনী প্রচারণার আগেই বিপুল অঙ্কের অর্থ দিয়ে তার মুখ বন্ধ করেছেন ট্রাম্প। অবশ্য ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এমন অপবাদ অস্বীকার করা হয়েছে। এর মধ্যে মাইকেল উলফের বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি : ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ প্রকাশের পর মার্কিন মিডিয়া হামলে পড়েছে। খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অতীত সময়ের আলো-আঁধারি নিয়ে। এসব নিয়ে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনবার বিয়ে করেছেন। তার সব স্ত্রীই সুন্দরী। দাম্পত্যের বাইরেও তার নারীদের নিয়ে এখন মার্কিন মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছেই। বর্তমান ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। মডেল মেলানিয়ার সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্ক চালাচ্ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০০৫ সালে মেলানিয়াকে বিয়ে করেন তিনি। সেই বইয়ে দাবি করা হয়েছে, হোয়াইট হাউসে আলাদা বিছানায় ঘুমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া।
জন এফ কেনেডি
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্যও কেনেডি ছিলেন ব্যাপকভাবে আলোচিত। জগদ্বিখ্যাত সুন্দরী মেরিলিন মনরোর সঙ্গে ছিল তার গভীর প্রণয়। মনরো ছাড়াও জাইনি ম্যানসফিল্ড, ওডেরি হেপবার্ন, এঞ্জি ডিক্সনসহ অনেক সেলিব্রেটি শয্যাসঙ্গী হয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের। তবে কিছু বছর আগে মার্কিন কিংবদন্তি অভিনেত্রী ও সংগীত শিল্পী মেরিলিন মনরোর সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও তার ভাই রবার্ট এফ কেনেডির যৌনতার দৃশ্য সংবলিত একটি টেপ নিলামে উঠেছে বলে খবর আসে গণমাধ্যমে। বহু বছর ধরে যৌনতার টেপটি এক ব্যক্তি তার বাসায় সংরক্ষণ করে আসছিলেন। কিন্তু এটি মনরোর সাবেক সঙ্গী জো ডিম্যাগিওকে আঘাত করতে পারে বিধায় তিনি জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি। এটা অনেকেই নিশ্চিত করেছেন জন এফ কেনেডির সঙ্গে গোপন প্রেমে ঠিকই মজেছিলেন দর্শকনন্দিত হলিউড অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো। বেপরোয়া যৌন জীবনই হয়তো জন এফ কেনেডির মৃত্যুর কারণ বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
রাজা পঞ্চম সুলতান মুহাম্মদ
সাংবিধানিক রাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় চিনা ঐতিহ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় অভিভাবক হিসেবে রাজা থাকেন। ২০১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সুলতান ইসমাইল পেত্রার অসুস্থতাজনিত কারণে তার পরিবর্তে মুহাম্মদ পঞ্চম কেলানটানের সুলতান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০১৮ সালে ২২ নভেম্বর মস্কোতে রুশ সুন্দরী ওকসানা ভোয়েভোদিনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি। আর এ ঘটনা জনসম্মুখে আসার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি রাজসিংহাসনও ত্যাগ করেন। ওকসানা ভোয়েভোদিনা একজন রুশ মডেল।
তিনি রিহানা অক্সানা নামেও পরিচিত। আকস্মিকভাবেই সিংহাসন ছাড়ার ঘোষণা দেন মালয়েশিয়ার পঞ্চম রাজা সুলতান মুহাম্মদ। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করার আগে পদত্যাগ করা তিনিই প্রথম মালয়েশীয় রাজা। তবে এই সম্পর্ক টিকেনি। যদিও তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে সন্তান জন্ম নিয়েছিল তবুও ওকসানা ভোয়েভোদিনার একটি ভিডিও প্রকাশ পায়। যেখানে একটি সুইমিংপুলে তাকে অন্য পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এরপরই সবখানে ওঠে আলোচনার ঝড়। চরম বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হন পঞ্চম সুলতান মহাম্মদ।
সিলভিও বারলুসকোনি
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছিলেন ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি। বিতর্ক যেন কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছিল না তার। সবচেয়ে বড় বিষয়, তাকে ঘিরে হওয়া বিতর্কগুলোর অধিকাংশই নারীকেন্দ্রিক। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো মিডিয়ায় অকাট্য প্রমাণসহ উপস্থাপিত হয়। আর বিষয়টি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সবার কাছে সব কিছু পরিষ্কার হওয়ার পরও সিলভিও বারলুসকোনি নিজে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। তিনি নিজে অস্বীকার করলে কি হবে তার স্ত্রী ভেরোনিকা ল্যারিও স্বামীকে অসুস্থ মানসিকতার পুরুষ অভিহিত করে ডিভোর্স দেওয়ার ঘোষণা দেন। সিলভিও বারলুসকোনির বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ ছিল ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী ব্যালে ড্যান্সারের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা। রুবি রুবাকুওরি নামের ওই কিশোরী ড্যান্সার বারলুসকোনির কাছ থেকে উপহার হিসেবে সাত হাজার ইউরো এবং একটি ডায়মন্ড নেকলেস নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও অনৈতিক সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে। এই নারীর বিরুদ্ধে চুরি-চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। এসব মিলিয়ে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায় বারলুসকোনি। যৌন কেলেঙ্কারি, অবৈধ সুবিধা গ্রহণ ও কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগের মুখে ৭৬ বছর বয়সী বারলুসকোনি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।
নিকোলাস সারকোজি
আলোচিত-সমালোচিত ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। সারকোজি স্বরাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী থাকাকালে সিসিলিয়া তার উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের পরিণয়ের ঘটনাকেও বেশ বিচিত্রই বলা চলে। ১৯৮৪ সালে এক বিখ্যাত টিভি উপস্থাপকের সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয়েছিল সিসিলিয়ার। শহরের তৎকালীন মেয়র হিসেবে সারকোজিও উপস্থিত ছিলেন সিসিলিয়ার বিয়েতে। বিচিত্র ব্যাপার হচ্ছে, বিয়ের সেই অনুষ্ঠানেই নাকি নববধূ সিসিলিয়ার প্রেমে পড়েন সারকোজি। বিয়ে হয়ে গেলেও সিসিলিয়াকে জীবনে পাওয়ার আশা ছাড়েননি তিনি। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় সত্যি সত্যিই সারকোজির টানে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে সংসার আর দুই সন্তানকে ফেলে ঘর ছাড়েন সিসিলিয়া। এত কিছুর পরও সারকোজির জীবনে সিসিলিয়া এক সময় হয়ে গেলেন ইতিহাস। ২০০৭ সালে সিসিলিয়াকে ডিভোর্স দেন। এরপর নানা ঘটনা-রটনার অবসান ঘটিয়ে ২০০৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন ইতালিয়ান পপগায়িকা ও সুপার মডেল কার্লা ব্রুনিকে। এ সম্পর্ক নিয়েও নাকি চলছে দারুণ টানাপড়েন!
জেফারসন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ও তার চাকরানি শেলি হামিংয়ের প্রেম নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মতো এতটা আলোচিত ও রগরগে না হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ও শেলি হামিংয়ের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল মিডিয়ায় অন্যতম চর্চিত বিষয়। এটাই মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রথম কোনো যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা। আর এ ঘটনাটি এমনই আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয় যে, এ সংক্রান্ত গল্প এখনো মানুষ চর্চা করে। ১৮০২ সালে জেফারসনের চাকরানি শেলি তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন ও একটি সন্তানের পিতৃত্ব রক্ষার দাবি নিয়ে হাজির হন। জেফারসন সব কিছু অস্বীকার করেন এবং পরবর্তী সাত বছরের জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় আসীন হন। তখনো এ নিয়ে বিতর্ক চলছিল। শুরুতে পাশ কাটিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ১৮০৮ সালে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শেলির অভিযোগটি প্রমাণিত হয় এবং জেফারসন শেলির একটি সন্তানের ভরণপোষণে বাধ্য হন।
বিল ক্লিনটন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ঘটে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়। উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দারুণ বিপাকে পড়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে মনিকা লিউনস্কির বয়স যখন ২২ বছর তখন ক্লিনটনের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের প্রেম বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের কর্মচারী মনিকা লিউনস্কির রসালো প্রেমকাহিনি জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই নড়েচড়ে বসেন। কারণ ওটাই ছিল ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টের এ রকম নারী কেলেঙ্কারির প্রথম ঘটনা। ক্লিনটনের বিষয়টি যতটা না ছিল স্ক্যান্ডাল, তার চেয়ে অনেক বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে রাজনৈতিক চড়াই-উতরাইয়ে যতটা বেগ পেতে হয়েছে, সে রকমটা হয়নি সাধারণ মানুষের বেলায়। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন জনগণ ছিল ক্লিনটনের প্রতি দারুণ সহানুভূতিশীল। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে একটা পজিটিভ রেসপন্স আদায় করে নিতে পেরেছিলেন ক্লিনটন।
রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড
রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড প্রেমের জন্য সিংহাসন ছেড়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন। অষ্টম এডওয়ার্ড তখনো রাজা হননি। সুদর্শন এডওয়ার্ডের সঙ্গে পরিচয় হয় সুন্দরী ওয়ালিসের। প্রথম দেখায় এডওয়ার্ড প্রেমে মজলেও ওয়ালিস তখন দ্বিতীয় স্বামীর ঘর করছেন। সামাজিক বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করে প্রেমে জড়ালেন দুজনই। কিন্তু এ সম্পর্ক মানতে নারাজ রাজপরিবার। তত দিনে সিংহাসনে বসলেও কথা রটেছে দেশ-বিদেশে। সবখানে এই প্রেম কাহিনি নিয়ে মুখরোচক ঘটনা ছড়াতে থাকে। এদিকে বিব্রত রাজা এডওয়ার্ড ওয়ালিসকে বিয়ে করলে ছাড়তে হবে সিংহাসন। এডওয়ার্ড বিয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। ফলে ১৯৩৬ সালের ১০ ডিসেম্বর এডওয়ার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসন ছেড়ে দেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৩৭ সালের মে মাসে অষ্টম এডওয়ার্ড ও ওয়ালিস সিম্পসন বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রেমের ইতিহাসে স্থাপিত হলো এক অনন্য নজির।