ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নাম শোনেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই রয়েছে। ছবিতে যে বাড়িটি দেখতে পাচ্ছেন এটি আমেরিকা আবিষ্কারকের বাড়ি। হ্যাঁ, ইতালির জেনোয়া শহরের এই বাড়িতেই জন্ম নিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস।
১৪৫১ সালের ২০ মে এক তাঁতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন এই ইতালীয় নাবিক ও ঔপনিবেশিক। তার বাবা ছিলেন একজন তাঁতি। তিনি তাঁতে উলের কাপড় বুনতেন। ক্রিস্টোফারও যুবক বয়স পর্যন্ত তার বাবার এ কাজে সহায়তা করতেন। ক্রিস্টোফারের শৈশব সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এই বাড়িতে ক্রিস্টোফাররা ১৪৭০ সাল পর্যন্ত ছিলেন। এরপর তারা পাশের এক শহর সাভোনায় চলে আসেন।
ক্রিস্টোফারদের এই বাড়ি ১৮ শতকের দিকে ভেঙে পড়েছিল। এটিকে আবার পুনরায় তৈরি করে নিদর্শন হিসেবে রাখা হয়েছে। এর আগে ১৬৮৪ সালে ফ্রান্সের রাজা চতুর্থ লুই জেনোয়াতে বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন। সেসময়ও বাড়িটি বেশখানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সর্বশেষ ১৯০০ সালের দিকে বাড়িটি পুরোপুরি ভেঙে আবার আগের মতো করেই নতুন করে তৈরি করা হয়।
ক্রিস্টোফারদের এই বাড়িটি তার বাবা ১৮৩৭ সালে জেনোয়া পৌরসভার কাছ থেকে কিনেছিলেন। এই জরাজীর্ণ বাড়িতেই জন্ম আর বেড়ে ওঠা ক্রিস্টোফারের। সম্ভবত দোতলা বাড়িটির নিচে একটি দোকান ছিল। আর বাম দিকে ছিল ভেতরে যাওয়ার দরজা। বাড়ির সামনের দিকের জানালার উপরে বাড়ির নাম এবং ইতিহাস কিছুটা লেখা আছে।
বর্তমানে বাড়িটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সারা বছরই পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমায় আমেরিকা আবিষ্কারকের বাড়িটি দেখতে। এখানে এসে হয়তো অনেকেই অনুধাবন করার চেষ্টা করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাসের শৈশব কেমন ছিল। তরুণ বয়সে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সমুদ্রযাত্রা করেন।
১৪৭৭ সালের দিকে তিনি পর্তুগালের লিসবনে চলে যান কলম্বাস। সেখান থেকে তিনি ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক বন্দরগুলোতে নৌ অভিযান পরিচালনা করেন। ১৪৮৩ সালে পর্তুগালের রাজা জন দ্বিতীয়র কাছে কলম্বাস তার পরিকল্পনা জমা দেন। তাতে ছিল আটলান্টিক হয়ে পশ্চিমের দিকে ইন্ডিজে (এশিয়া) যাওয়ার পরিকল্পনা।
রাজা যখন তার পরিকল্পনায় রাজি হলেন না, তখন তিনি তা স্পেনের রাজা ও রানির কাছে পেশ করেন। স্পেনের রাজ দরবার তার অভিযানে অনুমোদন দেয়। তাকে ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জের গভর্নর হিসেবেও নিযোগ দেন। ১৪৯১ সালে আটলান্টিক অভিযানে তিনি ব্যবহার করেছিলেন রহস্যময় এক মানচিত্র।
অভিযানের শুরু থেকে পুরো সময়টায় তাকে আলোর দিশা দিয়েছে এক মানচিত্র। আরো জানা যায়, এই মানচিত্রটিকে ঘিরেই পরিকল্পনা নির্ধারণ করতেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। এই মানচিত্রটি ছিল জার্মান মানচিত্রকার হেনেরিকাস মারটেলাসের তৈরি করা। অবশ্য এই মানচিত্র প্রস্তুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল আরো কিছু কিংবদন্তীর। বহু পুরনো সেই মানচিত্রটি সময়ের ব্যবধানে একসময় অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
কলম্বাস কিউবা আবিষ্কার করেন। আমেরিকা মহাদেশের ঠিক কোথায় কলম্বাস জাহাজ থেকে নেমেছিলেন তা নিয়ে শত শত বছর ধরে বিতর্ক চলেছে। অন্তত ১০টি স্থানের বাসিন্দারা দাবি করেন, কলম্বাস তাদের সেই জায়গাগুলোতেই প্রথম পদধূলি দেন। তবে আমেরিকায় নামার পর কলম্বাস ভেবেছিলেন তিনি ভারতে পৌঁছেছেন।
কলম্বাস তার দ্বিতীয় অভিযাত্রায় ক্যারিবিয়ান সাগরে ডোমিনিকা আবিষ্কার করেন। তবে কলম্বাসের আবিষ্কারের আগে অনেক নাবিক আমেরিকার দিশা পেয়েছিলেন। এছাড়াও কলম্বাসের আবিষ্কারের শত শত বছর আগেও আমেরিকায় মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। তারপরও আমেরিকা আবিষ্কারকের নাম হিসেবে বিশ্বের ইতিহাসে নাম উঠে এসেছে এই ইতালিয়ান নাবিকের।