রাজধানীর উত্তরা থেকে লাঞ্ছনা, হয়রানি ও মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত টিকটক সেলিব্রেটি ইয়াসিন আরাফাত অপু ওরফে ‘অপু ভাই’কে তার এক সহযোগীসহ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উত্তরা (পূর্ব) থানার উপপরিদর্শক আজিজুর তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরা থেকে অপু (২০) ও নাজমুলকে আটক করা হয়। তিন দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে আজ ঢাকার একটি আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
চীন ও সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ভিডিও শেয়ারিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটক ও লাইকিতে নাচ, গান, কৌতুকের ছোট ভিডিও বানিয়ে শেয়ার করা যায়।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির ছেলে অপুর এই দুই প্ল্যাটফর্মে কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার আছে। তার অদ্ভুত চুলের স্টাইল, সংলাপের নিজস্বতা ও হাসির জন্য তিনি সুপরিচিত। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভিডিও তৈরির জন্য সম্প্রতি তিনি ঢাকায় এসে দক্ষিণখান এলাকার একটি বাড়িতে থাকছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অপু ও তার সহযোগীরা গত রোববার সন্ধ্যায় উত্তরা এলাকায় কয়েকজন স্থানীয় অধিবাসীর ওপর হামলা চালালে এক ভুক্তভোগী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, গত রোববার সন্ধ্যায় অপু ও তার সহযোগীরা উত্তরা সেক্টর-৮ এলাকার একটি রাস্তায় ভিডিও তৈরি করার সময় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান রবিন তার তিন বন্ধুকে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাস্তা বন্ধ থাকায় রবিন গাড়ির হর্ন বাজালে অপু ও তার সহযোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রবিন ও তার বন্ধুদের মারধর করেন। এ ঘটনায় রবিন ও তার দুই বন্ধু গুরুতর আহত হন।
রবিনের বন্ধু হাসিবুল হক এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখলে তা ভাইরাল হয়।
হাসিবুল বলেন, ‘২ আগস্ট সন্ধ্যায় সেক্টর-৮ এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলাম। সে সময় হঠাৎ দেখলাম প্রায় ৬০-৭০ জন কিশোর-কিশোরী অদ্ভুত হেয়ার স্টাইলের একজনের সঙ্গে দেখা করতে সেখানে এলো।’
এর মধ্যে হাসিবুলের বন্ধু রবিন সেখানে তার গাড়ি নিয়ে এলে তারা তিন বন্ধু গাড়িতে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।
তিনি বলেন, ‘কয়েক গজ সামনে টিকটক-লাইকি গ্যাং রাস্তা আটকে দিলো। রবিন গাড়ির হর্ন বাজালে ওই কিশোররা রেগে যায় এবং আপত্তিকর ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।’
‘তাদের সমস্যা কি জিজ্ঞাসা করলে ওই গ্রুপের কয়েকজন কিছু না বলেই রবিন ও শাকিরকে হেলমেট ও কাঠের টুকরো দিয়ে মারতে শুরু করে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, সে সময় ঘটনাস্থলে তাদের আরও কয়েকজন বন্ধু এলে, তাদের ওপরও হামলা চালায় ওই কিশোররা।
হাসিবুল বলেন, ‘আমাদের মারছেন কেন জানতে চাইলে- তারা বলে- “আমরা পুরো বাংলাদেশ চালাই। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে ৫০০ লোক আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। আপনার বাবাকে গিয়ে বলেন যে আমরা আপনাকে মারছি”।’
হাসিবুল জানান, তারা ছোটবেলা থেকেই উত্তরায় বড় হয়েছেন এবং তাদের এলাকায় তাদের এভাবে মারধর করা হবে তা কখনও ভাবেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলায় অপু এবং আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হল- বেআইনি সমাবেশ, অন্যায়ভাবে বাধা দেওয়া, লাঞ্ছিত ও আহত করা এবং চুরি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তরা ডিভিশন) উপকমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, ‘অপু ও তার সহযোগীরা কিশোর-গ্যাং সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করছে কিনা তা তদন্ত করা হবে। মাদক ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত করা হবে।’