করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন পাওয়া ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স আন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি)’ প্রকল্পে এক মোবাইল অ্যাপ তৈরিতে খরচ করা হচ্ছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ২ হাজার টাকা। অথচ অ্যাপটি ‘মানসম্মত’ নয় বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যবহারকারীদেরও বিস্তর অভিযোগ এই অ্যাপ নিয়ে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরকম মানের একটি অ্যাপ তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে! অর্থাৎ একটি অ্যাপের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে এরকম অন্তত ৩০টি অ্যাপ তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে এই অ্যাপের বরাদ্দের অর্ধেক টাকা পরিশোধ করা হয়েছে অ্যাপ ডেভেলপার কোম্পানিকে। আর ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাই বলছেন, অ্যাপটি তৈরিতে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাকিটা খরচ হয়েছে কিভাবে, সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হয় ইআরপিপি প্রকল্প। এক হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার এই প্রকল্পের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসছে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ থেকে। এই প্রকল্পেরই আওতায় গত ১৫ এপ্রিল ‘ব্রেইন স্টেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল অ্যাপ ও জাতীয়ভাবে একটি ‘করোনা কেয়ার সিস্টেম সেন্ট্রাল ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন’ তৈরি করার কাজ দেওয়া হয়। বলা হয়, ১৪ এপ্রিল ‘ব্রেইন স্টেশনে’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চার কোটি ৭৫ লাখ দুই হাজার টাকায় এই কাজ দেওয়া হয়েছে।
পিপিই-মাস্কের দেখা নেই, সাড়ে ৯ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে জাদিদ
বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে অটোমোবাইল কোম্পানির পিপিই, দাম দ্বিগুণ
অ্যাপ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই
গুগল প্লেস্টোরে গিয়ে ‘করোনা বিডি’ নামে অ্যাপটি দেখা যায়। প্লেস্টোরের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদফতর এই অ্যাপটি সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে। ৩০ মার্চ অ্যাপটি রিলিজ পেয়েছে প্লেস্টোরে। সবশেষ গত ১৬ জুন একটি আপডেট হয়েছে অ্যাপটির। ডাউনলোড করার পর দেখা যায়, সেখানে নাম-মোবাইল নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এরপর লগইন করতে হয় পাসওয়ার্ড দিয়ে। কিন্তু কেউ যদি পাসওয়ার্ড ভুলে যায়, তবে তা রিকভার করার কোনো অপশন নেই অ্যাপটিতে।
অ্যাপসটির রিভিউ সেকশনে দেখা যায়, ব্যবহারকারীদের বিস্তর অভিযোগ। প্রতিটি অভিযোগের উত্তরে ডিজি হেলথ নামে একটি আইডি থেকে উত্তর দেওয়া হয়েছে। এসব উত্তরে ব্যবহারকারীর সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখপ্রকাশ করা হয় এবং ফাইভ স্টার রেটিং দিয়ে অ্যাপটিকে উন্নত করতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়।
বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে ‘হরিলুট’: ১ অ্যাপের খরচ পৌনে ৫ কোটি টাকা!
অ্যাপসটিতে করোনা সংক্রান্ত তথ্যের জন্য যে ওয়েবসাইট দেখানো হয়েছে, তা অন্য প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা। এতে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের বুথ খুঁজে বের করার একটি অপশন রয়েছে। তবে সেখানকার তথ্য অসম্পূর্ণ।
ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান যা বলছে
অ্যাপটি নিয়ে জানতে চাইলে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ‘ব্রেইন স্টেশনে’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাইসুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় আমাদের প্রেজেন্টেশন দেখার পরে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক যেভাবে বলেছেন, আমরা সেভাবেই অ্যাপটি তৈরি করেছি। একটি মোবাইল অ্যাপ, এর বাইরে একটা অ্যাডমিন প্যানেল, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের লগইনসহ নানা ধরনের ফিচারের কথা বলা হয়েছিল। অ্যাপটি তৈরির জন্য অনেক ধরনের মতামত এসেছিল। আমরা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে কাজ করেছি। কিছু কারণে ট্রেসিংয়ের জন্য আলাদা ফিচার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, প্রথম থেকেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল, পাসওয়ার্ডের বদলে ওটিপি (ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড, যেকোনো অনলাইন সেবায় তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর বা ইমেইলে পাঠানো হয়) দিয়ে অ্যাপটিতে প্রবেশের ব্যবস্থা করা। কিন্তু ওটিপি সেবাটি যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টটাই মূলত আমাদের কাজ ছিল। আমরা ২৪ মার্চ থেকে কাজ শুরু করেছি। এক বছর পর্যন্ত এটার সবকিছুই আমরা দেখাশোনা করব। ২০২১ সালের ২৪ মার্চ এটার চুক্তি শেষ হলে আমরা পূর্ণ পেমেন্ট পাব।
অ্যাপটির খরচ সম্পর্কে ব্রেইন স্টেশনের প্রধান নির্বাহী বলেন, আমরা গুগল ক্লাউড ব্যবহার করছি। গুগলের বিগ ডাটা সার্ভার ব্যবহার করেছি। হোস্টিংয়ের খরচ বাবদ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা মাসে খরচ হয়। আমাদের মধ্যে প্রথমে ট্রেসিং অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু পরে সেটা আর করা হয়নি। তাই সবকিছু মিলিয়ে বছরে আমাদের এক কোটি টাকার মতো খরচ হবে। এটা আমাদের এক্সপেকটেশন। তারপর থাকছে অ্যাডমিন প্যানেল মেইনটেন্যান্স ও অন্যান্য খরচ।
বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে ‘হরিলুট’: ১ অ্যাপের খরচ পৌনে ৫ কোটি টাকা!
ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের কাজ পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে রাইসুল কবির বলেন, এই কাজ পাওয়ার জন্য আমার এক বন্ধু বিজনেস কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছে। সেই প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। অনেক বছর ধরে সে আমার কাছ থেকে ডোমেইন-হোস্টিং নিতো। আমরা এটি ডেভেলপমেন্ট করতে পারব কি না, জানতে চাইলে আমরা রাজি হয়ে যাই। এক্ষেত্রে বিজনেস অ্যানালাইসিস, কাস্টমারের সঙ্গে প্রেজেন্টেশন— এগুলো করেছে অন্যরা। এক্ষেত্রে প্রপোজাল তৈরি থেকে শুরু করে টেন্ডার দেওয়ার কাজও তারা করেছে।
ব্রেইন স্টেশনের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এখন পর্যন্ত অর্ধেক বিল দেওয়া হয়েছে। বাকিটা কাজের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে দেওয়া হবে।
আলাদা একটি ওয়েবসাইট করার কথা যে বলা হয়েছিল, সেটি করা হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এটি অন্যরা করেছে। এটি প্রকল্পের এই অংশের আওতায় নেই। এই কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় বিধিমালা নীতি মানা হয়েছে কি না— এ বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানা নেই বলেই জানান।
তথ্প্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় তৈরি এই মোবাইল অ্যাপ তৈরিতে কেমন খরচ হতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে সফটওয়্যার ও আইটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্য একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সারাবাংলাকে বলছেন, এই অ্যাপটি ডেভেলপমেন্টের খরচ দুই লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা হতে পারে। সরকারিভাবে ‘বেস্ট কোয়ালিটি’র কাজ করলেও ডেভেলপমেন্ট ও সার্ভার মেইনটেন্যান্স বাবদ এর খরচ পৌনে পাঁচ কোটি টাকা অবিশ্বাস্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান সারাবাংলাকে বলেন, এই ধরনের অ্যাপস আমরা দুই থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে তৈরি করে থাকি গ্রাহকদের জন্য। আর যে সার্ভার হোস্টিংয়ের কথা বলা হচ্ছে, তা তো অবিশ্বাস্য। বেস্ট কোয়ালিটি সার্ভার হোস্টিংয়ের কথা বললে সেটি হতে পারে অ্যামাজন। তাদের হোস্টিংসহ ব্যান্ডউইথ খরচ এংগেজমেন্ট সাপেক্ষে বছরে পাঁচ থেকে ১০ হাজার ডলার, অর্থাৎ চার থেকে আট লাখ টাকা হয়ে থাকে। আমরা গড়ে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যেই এ ধরনের কাজ করে থাকি। কিন্তু অ্যাপের খরচ একেবারেই অবিশ্বাস্য। এমনকি সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অ্যাপসলোর খরচও এত বেশি না।
দেশের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ডেভেলপার এম ডি আসাদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, মানের দিক থেকে এটি খুবই নিম্নমানের একটি অ্যাপ। এটি কিন্তু ডেডিকেটেড অ্যাপ না, প্রগ্রেসিভ ওয়েব অ্যাপ। এর ডেভেলপমেন্টের জন্য দুই লাখ টাকাই যথেষ্ট। অ্যাপটি নিয়ে যা কিছু বলা হচ্ছে, সবই ধোঁয়াশা। বাস্তবতা হলো, বিগ ডাটা অ্যানালাইসিসের কথা বলা হলেও অ্যাপে তার কোনো চিহ্ন নেই। এটি ইউজার ফ্রেন্ডলিও না। গুগল ক্লাউডে হোস্টিং করেও এর দাম সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা হতে পারে। এর বেশি না।
এই অ্যাপ নির্মাতা আরও বলেন, মেইনটেন্যান্সের জন্য কিছু আলাদা বাজেট থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা যোগ করা যেতে পারে। সেই খরচ যদি সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকাও ধরেন, তাহলেও তো এর খরচ ১৫/২০ লাখ টাকার বেশি হয় না। তাছাড়া যে অ্যাপটি নিয়ে কথা হচ্ছে, এটি খুব নিম্নমানের অ্যাপ। বেশি করে ধরলেও এই অ্যাপের খরচ চার-পাঁচ লাখ টাকার বেশি হবে না। সরকারিভাবে আমরা উচ্চমানের কাজ করেও আড়াই লাখ টাকার বেশি বাজেট দিতে পারি না। বলা হয়, খরচ কমান। সেখানে এরকম একটা অ্যাপের পেছনে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ— চিন্তাই করতে পারছি না।
বিশেষজ্ঞ মন্তব্য
অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা বিডি’ অ্যাপের সার্ভিসেস ডাইভার্সেস যদি আমরা লক্ষ করি এবং একইসঙ্গে ডিজাইন ও কোডিং কম্পলেক্সিটিও যদি বিবেচনায় নিই, এর সবকিছুই ‘লো’ থেকে ‘মডারেট’ লেভেলের। সফটওয়্যার সিস্টেমের সঙ্গে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ডেটা কালেকশানের যে ভলিউম ও পদ্ধতি, এর সার্ভিস লেভেল এবং ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট সবকিছুর ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের যে ইউজার ইন্টারফেস, তা খুবই সফিস্টিকেটেড থাকার কথা অনেক। এই অ্যাপে তেমন কিছুই নেই। এর আরেকটি পারসপেকটিভ আছে— এটি কোথায় ইনস্টলেশন করা হয়েছে এবং ডেটা কালেকশনের সার্ভিসটি কোথায় রাখা হয়েছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি ক্লাউড বেজ বিষয়টি বলছে, তাই এই বিষয়গুলো নির্ভর করছে প্রতিদিন অ্যাপটি কতজন রিচ করছে, তার ওপর। অর্থাৎ ডেটার পরিমাণের ওপর। আগেই বলেছি, এই অ্যাপে ডেটার পরিমাণও খুব অল্প। সার্ভিসেস লেভেলও খুবই স্বল্পমাত্রার।
‘সবকিছু মিলিয়ে ডেভেলপমেন্ট সেন্স থেকে ১০ লাখ বা আরও বাড়িয়ে চিন্তা করলেও ১৫ লাখের বেশি খরচ কোনোভাবেই হতে পারে না,’— বলেন অধ্যাপক রাজ্জাক।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মুখ খুলতে নারাজ
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলে ইআরপিপি প্রকল্পের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম গত ১৪ জুলাই সারাবাংলাকে বলেন, পরদিন তিনি এসব বিষয়ে কথা বলবেন। তবে পরদিন থেকে শুরু করে ২৮ জুলাই পর্যন্ত তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। মোবাইল নম্বরে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। দেখা করার চেষ্টা করা হলেও তিনি দেখা করতে রাজি হননি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরপিপি প্রকল্পের পরিচালক ডা. কাজী শামীম হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সোমবার (২৭ জুলাই) সরাসরি তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি। তাই এখন কোনো বিষয়ে কথ বলতে পারছি না।
ইআরপিপি প্রকল্পের খরচ নিয়ে এমন নয়-ছয়ের অভিযোগ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানের কাছেও।
ইআরপিপি প্রকল্পে ‘সাগর চুরি’
করোনা মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে অনুমোদিত ইআরপিপি প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের তথ্য অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে সারাবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, প্রকল্পটিতে করোনা থেকে সুরক্ষায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে একটি অটোমোবাইল কোম্পানি! জাদিদ অটোমোবাইলস নামে সেই কোম্পানির ঠিকানায় গিয়ে তার অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। তারা পিপিই’র দাম ধরেছে প্রায় ৪ হাজার টাকা, যদিও বাজারে সর্বোচ্চ মানের পিপিই দুই থেকে আড়াই হাজার টাকাতেই পাওয়া যায়। এদিকে প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তিতে ৪৫ দিনের মধ্যে পিপিই সরবরাহের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। অথচ ৮৪ দিন পেরিয়ে গেলেও তা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি, যদিও প্রায় ৩১ কোটি টাকার কাজের মধ্যে ৯ কোটি টাকার বেশি প্রতিষ্ঠানটি তুলে নিয়েছে!
ইআরপিপি প্রকল্পের এমন অনিয়ম-অসঙ্গতিকে ‘সাগর চুরি’ বলে অভিহিত করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ক্ষমতাবানদের একাংশের যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতার সংকট গভীরতর করার পাশবিক উদাহরণ ছাড়া অন্য কোনোভাবে এই ঘটনা ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। এ ধরনের প্রকল্পের অর্থ জোগানদাতা সংস্থাও এই বিব্রতকর দুর্নীতির দায় এড়াতে পারে না। তারা তৎপর হয়ে পর্যাপ্ত পরিবীক্ষণ ও সততার চর্চা করলে এসব প্রকল্প অনুমোদনের আগেই এ ধরনের ‘সাগর চুর’ প্রতিহত করা সম্ভব হতো।