কোম্পানির আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে জালিয়াতি করার অভিযোগে আমেরিকায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক টেকনোলোজি স্টার্টআপ কোম্পানি ইউপ্লাসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) শওকত শামীম।
মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) অভিযোগ, শওকত শামীম কোম্পানির আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে একাধিকবার বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার অর্থ জালিয়াতি করেছেন।
ইন্টারনেটের ভিডিও বিশ্লেষণের একটি উন্নত মেশিন লার্নিং সরঞ্জাম হিসেবে যাত্রা শুরু করে ইউপ্লাস। এর সিইও ৪৮ বছর বয়সী শওকত শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা বলেছিলেন, কোম্পানিটি বছরে লাখ লাখ ডলার আয় করে এবং তাঁদের শতাধিক ক্রেতা রয়েছে। ক্রেতাদের মধ্যে ফরচুন ৫০০ কোম্পানিও রয়েছে বলে বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা তথ্য দেন তিনি।
চলতি সপ্তাহে এসইসির বিবৃতিতে বলা হয়, একজন বিনিয়োগকারী যখন এসব দাবি প্রমাণে তথ্যের জন্য চাপ দেন, তখন শামীম জালিয়াতি গোপনের চেষ্টা হিসেবে ওই বিনিয়োগকারীকে ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, শামীমের এই কর্মকাণ্ড উন্মোচিত হয় ২০১৯ সালের শেষ দিকে। ওই সময়ে তিনি নির্দিষ্ট কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে স্বীকার করেন যে প্রকৃতপক্ষে ইউপ্লাসের মোট আয় পাঁচ লাখ ডলারেরও কম। আর ২০১৩ সালে যাত্রার পর থেকে কোম্পানিটির মূল্য পরিশোধকারী ক্রেতা মাত্র চারজন।
২০১৩ সালে ইউপ্লাস প্রতিষ্ঠা করেন শওকত শামীম। ওই বছরের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে মোট প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার মূলধন জোগাড় করে ইউপ্লাস। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ডলার ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সংগ্রহ হয়। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৩০ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে এসব তহবিল সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। এসব বিনিয়োগকারীর মধ্যে ব্যক্তি, ছোট তহবিল কিংবা প্রতিষ্ঠানও ছিল।
এসইসির সানফ্রান্সিসকো আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক এরিন ই স্নাইডার বলেন, ‘অভিযোগ অনুযায়ী শামীম ও ইউপ্লাস কোম্পানিতে বিনিয়োগে লাভের ফাঁপা গল্প ছড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে এর আর্থিক কর্মক্ষমতা এবং ক্রেতার ভিত্তিবিষয়ক মিথ্যা তথ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ের তহবিল সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির সময় প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই সত্যি কথা বলতে হবে।’
একটি আর্থিক তহবিল ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ইউপ্লাসে মোট প্রায় ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিনিয়োগ করা হয় ছয় লাখ ডলার। ওই তহবিল বিনিয়োগ কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য ব্যক্তিগতভাবেও ইউপ্লাসে হাজার হাজার ডলার বিনিয়োগ করেন বলে জানিয়েছে এসইসি।
লিংকডিন প্রোফাইল অনুযায়ী, শওকত শামীম ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা কলেজে লেখাপড়া করেছেন। ১৯৯৪ সালে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার জেলা আদালতে দায়ের করা এসইসির অভিযোগে বলা হয়েছে, শওকত শামীম ও ইউপ্লাস আমেরিকার কেন্দ্রীয় পুঁজিবাজার আইনের জালিয়াতবিরোধী ধারা লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্থায়ী আদেশও চেয়েছে এসইসি। এর পাশাপাশি শামীমের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও ঘোষণা করেছে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া জেলার মার্কিন অ্যাটর্নির কার্যালয়। দোষী সাব্যস্ত হলে শওকত শামীমের কমপক্ষে ২০ বছরের জেল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।