বিলাসবহুল গাড়ির নেশাও ছিল রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদের। নতুন নতুন গাড়ি ব্যবহার করলেও কোনটির রেজিস্ট্রেশন করতেন না। দাপট দেখিয়ে এসব গাড়ি নিয়ে তিনি রাস্তায় ছুটতেন। তার কাছে থাকা ১১টি গাড়ির ছিল না কোনো নিবন্ধন। প্রাডো, হ্যামার ও এক্স-ট্রেল মডেলের গাড়িও আছে এর মধ্যে। এক্স-ট্রেল মডেলের বিলাসবহুল একটি গাড়ি তিনি সম্প্রতি কিনেছেন। এটিরও কোনো রেজিস্ট্রেশন ছিল না। গাড়িটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করেছে।
ভুয়া নিবন্ধনে তার গাড়ি চলতো ঢাকাসহ সারা দেশে। ভিআইপির মতো গাড়িগুলো সাইরেন বাজিয়ে চলার কারণে ট্রাফিক পুলিশ সেগুলোকে আটকানো বা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার সাহস পেতেন না।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে তদবির করার নাম করে ভুক্তভোগী ব্যক্তির কাছ থেকে আগেই গাড়ি কেনার টাকা নিতেন তিনি। পরে তার তদবির করতেন না। গাড়ির কেনার অগ্রিম টাকা তার কাছে চাইতে গেলে তিনি ভুক্তভোগীকে নানা ধরনের হুমকি দিতেন। তার কাছে ১১টি গাড়ি রয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, ওইসব গাড়ি নিবন্ধনহীন। অভিজাত গাড়িগুলো দিয়ে তিনি তার কাজে সুপারিশকারী লোকসহ তাকে শেল্টার দেয়া রাজনৈতিক নেতা ও অন্য পেশার লোকদেরও তা ব্যবহারের সুযোগ দিতেন। গত বছর একটি প্রাডো গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন সিনেমা জগতের এক নায়িকাকে। পরে তার সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ওই গাড়ি ফেরত নেন। এছাড়াও সরকারি একটি দপ্তরের এক কর্মকর্তা তার দেয়া নিবন্ধনহীন একটি গাড়ি ৩ বছর চালিয়েছেন। পরে ওই ব্যক্তি নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় শাহেদের গাড়িটি ফেরত দেন।
গত ৬ই জুলাই রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল পরিচালনা ও ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট দেয়ার কারণে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সূত্র জানায়, এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে র্যাব। গত বুধবার সাতক্ষীরার দেবহাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। শাহেদ এখন ঢাকা মহানগর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে আছে। গতকাল তার রিমান্ডের পঞ্চম দিন অতিবাহিত হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার মুখ্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) এডিসি বদরুজ্জামান জিলু গতকাল দুপুরে মানবজমিনকে জানান, ‘শাহেদকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছি। সে অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছে। তার গাড়িগুলোর সন্ধান চলছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, অভিজাত গাড়ির মাধ্যমেবিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ উদ্ধার করা শাহেদের ছিল একটি প্রতারণপূর্ণ কৌশল।
সূত্র জানায়, শাহেদের কাছে থাকা ১১টি নিবন্ধনহীন গাড়ি রয়েছে। সেগুলো হলো- ঢাকা মেট্রো-গ (২০-১২১৩), ঢাকা মেট্রো-ট (২০-১২১৪), ঢাকা মেট্রো-গ (২৪-২৫২২), ঢাকা মেট্রো-গ (২৬-১৩-১২), ঢাকা মেট্রো-গ (২৬-১৩১২), ঢাকা মেট্রো-গ (২৬-১৩-১১), ঢাকা মেট্রো-গ (২৪-১৩৪৪), ঢাকা মেট্রো-গ (২৪-১৩৪৫), ঢাকা মেট্রো-গ (০১-১২১৩), ঢাকা মেট্রো-ক (০২-১২২৪) এবং ঢাকা মেট্রো-ক (২৪-৪৫১২। তদন্ত সূত্র জানায়, এসব নম্বরের সবক’টিই ভুয়া।
সূত্র জানায়, গাড়ির নম্বর তিনি নিজেই তৈরি করে সড়কে বীরদর্পে চষে বেড়িয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে উত্তরার সিমেন্ট ব্যবসায়ী এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে রাজউকে প্ল্যান পাসের তদবিরের জন্য শাহেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শাহেদ তখন ওই ব্যবসায়ীর কাছে ২২ লাখ টাকার একটি গাড়ি চান। ব্যবসায়ী তাকে একটি গাড়ি দেন। কিন্তু শাহেদ পরে তার কোনো কাজ করে দেননি। ব্যবসায়ী তার কাছে একাধিকবার ঘুরেও তার গাড়ি কেনার টাকা ফেরত পাননি বরং শাহেদ তাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। ওই ভুক্তভোগী উত্তরা পশ্চিম থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তখন তার অভিযোগ আমলে নেয়নি।