প্রতারক শাহেদ জড়িত ছিল মাদক কারবারেও। অনলাইনে শাহেদ মাদক কারবার পরিচালনা করতো। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বিদেশ থেকে আনতো মাদক ‘ব্লু আইশ’। অনলাইনে মাদক ব্যবসার বিষয়টি দেখভাল করতো রিজেন্ট গ্রুপের ট্রান্সপোর্ট শাখার জেনারেল ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন। আর নিয়ন্ত্রণ করতো তার কর্মচারী রাহিদ এবং সুমন। দুইটি অনলাইন ঠিকানায় মাদকের কারবার চালাতো শাহেদ। সেগুলো হচ্ছে- ইন্টারেস্ট বিডি.কম এবং আরেকটি কক্সবিডি.কম। কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা থেকে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসতো সে।
সেগুলো ঢাকার অভিজাত হোটেল থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতো। শাহেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার লোকজন অনলাইন দুইটির ঠিকানা বন্ধ করে দিয়েছে। মাদকের কারবারে শাহেদের সঙ্গে আরো যারা জড়িত তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও রুপালি পর্দা সিনেমা জগতের প্রযোজক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সে ঢাকার সিনেমার এক টপ নায়কের বিশ্বস্ত পরিচালককে একটি ছবি নির্মাণে শেয়ারে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছিল। টপ নায়কের আশ্বাসেই সে ওই টাকা দিয়েছে। পরে ছবিটি নির্মাণ হয়নি। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ওই দ্বন্দ্ব টপ নায়কও মিটাতে পারেনি। পরে সিনেমা পাড়ার এক বিখ্যাত নায়িকার মাধ্যমে ওই টাকার ফয়সালা হয়েছিল। ওই নায়িকা আগে উত্তরা এলাকায় বসবাস করতেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় শাহেদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
সেই পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। কয়েক বছর ধরে ওই নায়িকা সিনেমায় অনিয়মিত আছেন। তবে শাহেদের সঙ্গে ওই নায়কের কোনো অপরাধের যোগসাজশ আছে কিনা তা গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন।
শাহেদ এখন ঢাকা মহানগর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে আছে। গতকাল তার রিমান্ডের ষষ্ঠদিন অতিবাহিত হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদরত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ডে শাহেদ নানা টালবাহানা করছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে বেশি বেশি করে হাঁচি ও কাশি দিচ্ছে। যাতে তাকে যেন বেশি প্রশ্ন না করা হয়।
অনেক সময় সে নীরব থাকছে। কখনো সে নিজেকে করোনা রোগী হিসেবে কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি তার কাছে তার সমস্ত প্রতারণার কোনো উত্তর না পাওয়া যায় তাহলে তাকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড নেয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে মামলার মুখ্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) এডিসি বদরুজ্জামান জিল্লু জানান, ‘রিমান্ডে শাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়ানোর জন্য শাহেদ অনলাইনে মাদকের কারবার চালিয়ে গেছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে শাহেদ কক্সবাজার ভ্রমণ করার সময় সেখানে একটি অভিজাত হোটেলে টেকনাফের অশ্বিন কুমার নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে শাহেদকে সে অনলাইনের মাধ্যমে মাদকের কারবার করার পরামর্শ দিলে সে তা লুফে নেয়। অশ্বিন কুমার মূলত তাকে মাদক সরবরাহ করতো। শাহেদ মাদক পরিবহনে এম্বুলেন্স ব্যবহার করতো। অনলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে অভিজাত শ্রেণির মাদক ব্লু আইশ দেশে নিয়ে আসতো। সেই মাদক সে ঢাকার একাধিক অভিজাত হোটেলগুলোতে সরবরাহ করতো। মাদকের টাকা লেনদেন হতো হুন্ডি ও বিকাশে।