করোনা ডেডিকেটেড রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ অপরাধ করলে বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তার স্ত্রী সাদিয়া আরবি রিম্মি। র্যাবের অভিযানের পর ৭ জুলাই দুপুরে সর্বশেষ মোবাইল ফোনে শাহেদের সঙ্গে কথা হয় তার। সাহেদ নিরাপদে আছে বলে তাকে জানিয়েছেন। এরপর থেকে শাহেদের মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাচ্ছেন স্ত্রী রিম্মি। স্বামীর অপকর্ম জেনেও তা আড়াল করে এখন নানারকম কথাবার্তা বলছেন তার স্ত্রী। নিজেকে বাঁচাতে নাটক সাজাচ্ছেন শাহেদের লোভী স্ত্রী। মিথ্যাচারের আড়ালে ভোগ-বিলাসী জীবনযাপন করতেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বনানী ডিওএইচএসের ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসার নিচতলায় স্ত্রী সাদিয়া আরাবি রিম্মি ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন প্রতারক শাহেদ। ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া ৯০ হাজার টাকা। রিম্মির মা বিটিভির সাবেক প্রযোজক শাহিদা আরবী। পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট রিম্মি লোভে পড়ে বিয়ে করেছিলেন শাহেদকে। পরিবারও বিয়ে দিয়েছিলেন অবৈধ সম্পদের লোভে। সাইরেন বাজানোর হুটার লাগানো গাড়িতে দেহরক্ষী নিয়ে চলতেন শাহেদের স্ত্রী। শাহেদের পাপের টাকায় তিনি ভোগ-বিলাসী দাম্ভিক জীবনযাপন করতেন। রিম্মিও যেতেন সবখানে ভিআইপিদের সাথে তুলতেন ছবি।
অনেকে বলছেন, প্রতারণা দুর্নীতি অবৈধ অর্থ সম্পদ উপার্জনে নয় তাদের দাম্পত্য কলহ হতো শাহেদের নারী কেলেঙ্কারী নিয়ে।
তবে স্বামীর কর্মকাণ্ড ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রিম্মি সাংবাদিকদের জানান, সর্বশেষ ৭ জুলাই বেলা ২টার দিকে তার স্বামী ফোন করে বলেন যে, তিনি একটি জায়গায় রয়েছেন। ভালো আছেন। পরিবারের সদস্যদের সাবধানে থাকতে বলেন তিনি। এরপর আর কথা হয়নি।
রিম্মি বলেন, অনেক দিন ধরেই তার কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে পরিবারের লোকজন নাখোশ ছিল। এ নিয়ে ২০০৮ সালের দিকে ঝামেলা হয়। এরপর ২ বছর বাপের বাড়ি ছিলেন রিম্মি। ২০১০ সালে আবার স্বামীর সংসারে ফেরেন।
রিম্মি আরো বলেন, পরিবারের সবার বিশ্বাস ছিল শাহেদ বদলে গেছে। সর্বশেষ ৩-৪ বছর ধরে বাইরে থেকে দেখে সবাই সেটাই ধারণা করেন। তবে রিজেন্টে চিকিৎসার নামে যা সামনে এলো তাতে স্পষ্ট সে বদলায়নি। শত চেষ্টা করেও তাকে বদলানো গেল না। স্বামীর এমন অপকর্মের জন্য ‘লজ্জিত ও দুঃখিত’ বলে জানান রিম্মি। তিনি বলেন, করোনার চিকিৎসার নামে শাহেদ যা করেছে তা পীড়াদায়ক। আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। এসব প্রতারণা তার নেশায় পরিণত হয়ে গেছে।
রিম্মি আরো বলেন, বাইরের বিষয় শাহেদ বাসায় আলাপ করত না। তার বিশ্বস্ত কর্মচারীদের এ ব্যাপারে ট্রেনিং দেওয়া ছিল। শাহেদের যেসব প্রতিষ্ঠান ছিল তার উদ্বোধনে হয়তো কখনও কখনও গিয়েছি। রিজেন্টে আমার কোনো পদ নেই। তবে সবাই সবসময় মুখে মুখে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিত।
রিম্মি স্বীকার করেন যে, সুবিধা নেওয়ার জন্যই হয়তো নানা সময় নানা পরিচয় দিত তার স্বামী। মানুষকে দ্রুত প্রভাবিত করতে পারত তার স্বামী। মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ, রিজেন্ট হাসপাতাল, সেন্ট্রাল স্কুলসহ তার স্বামীর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
রিম্মি আরো বলেন, তিনি তাকে বদলে ‘বদলে যাও’। যে জায়গায় এসেছ এটা ধরে রাখ। শেষ পর্যন্ত তার অপকর্ম আবার সামনে আসায় পরিবারের সবাই অপ্রস্তুত। ভালো পরিবারের ছেলে হলেও বিপথগামী ছিল তার স্বামী।
মোহাম্মদ শাহেদ কোথাও শাহেদ করিম নামে পরিচিত। সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের বাসিন্দা। তার বাবা সিরাজুল করিমের একমাত্র ছেলে। তবে শাহেদের মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় সংসারে তার এক মেয়ে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে থেকে এসএসসি পাস করেন সাহেদ। এরপর থেকে ঢাকায়। পরে সাতক্ষীরায় তেমন যাতায়াত ছিল না। মাঝে মাঝে এসে দু-একদিন থেকেই ফিরতেন। তার বাবা সিরাজুল করিম ও মা শাফিয়া করিম এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। সাতক্ষীরাতেই কোটি টাকা সম্পদের মালিক ছিলেন তারা। করিম সুপার মার্কেট নামে তাদের একটা মার্কেট ছিল শহরেই। ২০০৮ সালের দিকে এই সুপার মার্কেট, বাড়িসহ সব সম্পদ বিক্রি করে স্থায়ীভাবে তারা ঢাকা শিফট হয়েছেন বলে জানান সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত ৬ জুলাই সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে নমুনা টেস্ট না করেই রোগীদের করোনার রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ পায় র্যাব। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ, এমডি মাসুদ পারভেজসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ঘটনায় ৯ জন গ্রেপ্তার হয়। তবে শাহেদ এখনও পলাতক। হাসপাতাল দুটি ও রিজেন্ট গ্রুপের অফিস সিলগালা করে দিয়েছে র্যাব।
এদিকে শাহেদের বিরুদ্ধে মানুষের সঙ্গে অসংখ্য প্রতারণার অভিযোগ পাচ্ছে র্যাব। র্যাবের গণমাধ্যম ও আইন শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, শাহেদকে গ্রেপ্তারের জন্য র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।