সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে গেছে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। দেশে লঞ্চ ডুবিতে সম্প্রতি মা’/ রা গেছে অনেক মানুষ। পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হানী ঘটেছে প্রায় ৩৩ জনের মত মানুষের। তবে এ সব ঘটনার উপরে যে ঘটনাটি বেশি ছাপিয়ে গেছে তা হলো লঞ্চ ডুবিতে ১৩ ঘন্টা পানির নিচে আটকে থাকা সুমনের ঘটনা। যাকে নাকি তের ঘন্টা পর পানি থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এবার এ নিয়ে একটি লেখনি লিখেছেন দেশের একজন নারী লেখক। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো:-
করোনার এই দুঃসময়ে আইসোলেশন সেন্টার, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন সিলিন্ডার সব থুইয়া জায়গায় জায়গায় পাগলা গারদ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে অতীব জরুরি ভিত্তিতে। অতি সুখে এই দেশে চৈতা পাগল, লইট্যা পাগল, বইদা পাগলের সাথে যুক্ত হচ্ছে নিত্য নতুন করোনা পাগল।
এ যুগের গুহাবাসী চিকিৎসক, নার্সরা আজ এই জায়গায় এসেছেন কাপড় খুলে গুহায় রেখে। তাইতো তারা জানেনা কিভাবে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস পরতে হয়। এদেরকে সঠিকভাবে পিপিই পরাতে গিয়েই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অহর্নিশ যত কষ্ট। আবার এই রাক্ষুসে ডাক্তার, সেবকরা একমাসে কুড়ি কোটি টাকার খাবার সাবাড় করেছে। হাজার হাজার টাকার ডিম, কলা আর ব্রেড! কি রাজকীয় কপাল তাদের! অথচ মূমুর্ষ করোনা রোগীদের সামাল দিতে গিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডাক্তাররা মুখের মাস্ক সরিয়ে এক ফোঁটা পানি খেতে পারেন না। তারপর তো রয়েছে সংক্রমণের ভয়।
দেশের প্রথম সারির অর্ধশত ডাক্তারের মৃ’/ ত্যু হয়েছে করোনায়। এই তালিকা আরো দীর্ঘ হবে। একটা পরিবারের আজন্ম স্বপ্ন তথা একটা দেশের মূল্যবান সম্পদ এই মানুষগুলো মারা যাচ্ছে একে একে। অথচ আমাদের কোন অপরাধবোধ নেই। আছে তামাশা আর তাচ্ছিল্যের অমরবাণী.. ভেন্টিলেটর প্রয়োজন নেই, ভেন্টিলেটরে ঢুকলেই মানুষ মা’/ রা যায়। শ্বাসকষ্টে ভোগা আধ মরা মানুষ ভেন্টিলেটরে ঢুকাইলে মানুষ ম’/র’/ বো না বাঁচবো?
লঞ্চ ডুবিতে মা’/ রা গেলো কত মানুষ। লা’/শে’/ র স্তুপ দেখে বুক ধরানো যায় না। আপনজনের গগনবিদারী কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী।
ছোট বেলা বাড়ির সামনের বড় পুকুরে সাঁতারের কসরত দেখাতে গিয়ে বেঠাঁইতে চলে গিয়েছিলাম একবার। সঙ্গী সাতারুরা তখন কান ডুবিয়ে চিতে, কাইতে সাঁতারে ব্যস্ত। আমার চিৎকার, বেঁচে থাকার আ’/র্ত’/না’/ দ কারো কানে যায় নি। মৃ’/ ত্যু’/ কে অবধারিত ভেবে আমিও ত’/লি’/ য়ে যেতে থাকি অতলে। পাশের বাড়ির এক মহিলা ডু’/ব’/ ন্ত কিশোরীর চুল দেখে পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ে টেনে তুলেন।
নিশ্চিত মৃ’/ত্যু’/ র হাত থেকে বেঁচে গেলেও চোখে অন্ধকার দেখি অনেকক্ষণ। অথচ ঢেউ বিহীন পুকুরের পানিতে ডু’/বা’/ র দুই মিনিটও হবে না মনে হয়। নাক দিয়ে পানি ঢুকে মগজ ছুঁয়েছে। নেত্র নালির জ্বলায় মুখে ভাষা আসেনি। নির্বাক ছিলাম কতক্ষণ জানিনা। বেঁচে ফেরার স্মৃতি আজও তাড়া করে আমাকে। পানিতে নেমে ডুব, সাঁতার দূরে থাক, পা ভেজাতেও আমার ভয় করে।
সুতরাং তেরো ঘন্টা ডুবন্ত লঞ্চে আটকে থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় বেঁচে ফেরা সুমন বেপারীকে নিয়ে অতিউৎসাহ এই মূহুর্তে অনন্ত জলিলের জলন্ত জোকস ছাড়া কিছু নয়। লঞ্চডুবিতে বিটলামির আরেক গুরুত্বপূর্ণ নমুনা তদন্ত কমিটি গঠন। এই পর্যন্ত ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও প্রাণহানী নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি কি উদ্ধার করেছে? ঝড়বৃষ্টি, করোনা উপেক্ষা করে নিখোঁজ যাত্রীদের লা’/শে’/ র খুঁজে আপনজনদের চোখের জলের প্লাবন নামছে বুড়িগঙ্গায়।
করোনায় কর্মহীন মানুষ। পেটের দায়ে পিতামাতা শিশু সন্তান নিয়ে ঘুরছে বিক্রির জন্য। সন্তানের মুখে খাবার দিতে না পেরে কেউবা দিচ্ছে গলায় দড়ি। এই অবস্থায় টাকা খরচ করে কে যাবে করোনা টেস্টে?
কত মানুষ ভাগ্য ফেরাতে শহরে এসে ঘুরিয়েছিলো জীবনের চাকা। আজ চাকরি, ব্যবসা হারিয়ে মালপত্র বিক্রি করে রিক্ত হাতে ছুটছে গ্রামের বাড়ি। কিন্তু যার গ্রামের বাড়ি নেই, সে যাবে কোথায়?
করোনার এই বৈশ্বিক ক্রান্তিকালে ডব্লিউএইচও বলছে আরো ভয়ের কথা, “মহামারির সবচেয়ে খারাপ দিন এখনো আসেনি।”
হায় মাবুদ, তুমি রহম করো আমাদের। জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর ও পেট বাঁচানোর খাদ্যসামগ্রী রেখে মস্তিষ্ক বাঁচানোর গারদের প্রয়োজন বেশি এখন। সব পাগল একসাথে রাস্তায় নেমে আসলে সামাল দিবে কে? দেশে যে পাগল মন্ত্রণালয় নেই।
এ দিকে করোনার কারনে এখন সারা দেশে চলছে একটি অস্থিরতম অবস্থা। তার মধ্যে আবার এমন ধরনের ঘটনা নিয়ে দেশের স্যোশাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সব খানে তৈরী হয়েছে নানা ধরনের সমালোচনা মূলক কথা। যার ফলে দেশের এই সংকটকালেও এমন ধরনের ঘটনা বেশ হতাশ করছে দেশের মানুষকে।