শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য মোটেও ভালো যায়নি ২০১৯-২০ অর্থবছর। ভয়াবহ পতনের কবলে পড়ে অর্থবছরে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন।
পতনের কবলে দিনের পর দিন পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীরা মতিঝিলের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এমনকি দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতীকী গণঅনশনও করেছেন তারা ২০১৯-২০ অর্থবছরে।
শেয়ারবাজারকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এরপরও বাজার পরিস্থিতি ভালো হয়নি। উল্টো অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ত্রাস সৃষ্টি করা মহামারি করোনার কারণে বাজারের পতন আরও বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এমন অর্থবছর ভুলতে চাইবেন বিনিয়োগকারীরা।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ৯৯ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে তা নেমে এসেছে তিন লাখ ১১ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ বাজারে মূলধন কমেছে ৮৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম ওই পরিমাণ কমেছে। সে হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে ৮৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ পরিমাণ অর্থ হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে অর্থবছরজুড়ে শেয়ারবাজারে পতন চলায় সূচক, লেনদেনসহ সব খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৪২১ পয়েন্ট। অর্থবছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৮৯ পয়েন্টে। অর্থাৎ এক অর্থবছরে ১ হাজার ৪৩২ পয়েন্ট প্রধান মূল্যসূচক হারিয়েছে ডিএসই।
প্রধান সূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও। ১ হাজার ৯২৯ পয়েন্ট নিয়ে অর্থবছর শুরু করা সূচকটি অর্থবছর শেষে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪০ পয়েন্টে। অর্থাৎ ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকটি কমেছে ৫৮৮ পয়েন্ট।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আরেকটি সূচক ‘ডিএসই শরিয়াহ’। শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত এ সূচকটিও বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। ১ হাজার ২৪৪ পয়েন্ট নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পা দেয় ডিএসই শরিয়াহ সূচক অর্থবছর শেষে ৯২৫ পয়েন্টে নেমেছে। অর্থাৎ এক অর্থবছরে সূচকটি থেকে হারিয়েছে ৩১৯ পয়েন্ট।
সূচকের ভয়াবহ পতনের সঙ্গে অর্থবছরজুড়ে ছিল লেনদেন খরা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৭৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৯৩ কোটি। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬৮ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা।
এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সর্বনিম্ন আইপিওর রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অর্থবছরটিতে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠানের আইপিও এসেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ অর্থবছরে ১১৯ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন পেয়েছে। অর্থাৎ বছরে গড়ে আইপিও দেয়া হয়েছে ১০টি।
বিএসইসির এ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে চারটি। তার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫টি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯টি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫টি এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৬টি আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়।
এছাড়া ১০১২-১৩ অর্থবছরে ১২টি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১০টি, ২০১০-১১ অর্থবছরে সাতটি, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১২টি এবং ২০১৮-০৯ অর্থবছরে সাতটি আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়।