ভোরের আলো ডেষ্ক: কয়েক বছর ধরে বিশ্ব থেকে নিজেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র। করোনা মহামারীর সংকটের মধ্যে দেশটি আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এমন বিচ্ছিন্নতা দেশটির প্রায় সাড়ে তিনশ’ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়নি। যেন এক অচেনা পথে ছুটে চলেছে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি এ দেশটি।
একদিকে কোভিড-১৯-এর অভিশাপে এক ‘অচ্ছুত রাষ্ট্র’ হয়ে উঠছে। আরেকদিকে মিত্র দেশগুলোর কাছেও গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।
মূলত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হযবরল নেতৃত্বের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের এই হাল। করোনাকালে নিজ দেশের জনগণের প্রতি যেমন উদাসীনতা দেখিয়েছেন ট্রাম্প, ঠিক একইভাবে বাকি বিশ্ব বিশেষ বন্ধু দেশগুলো থেকে নজর ফিরিয়ে নিয়েছেন। সিএনএন, এনপিআর ও সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেস।
এনপিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোভিড-১৯-ই যুক্তরাষ্ট্র এমনকি পুরো বিশ্বের জন্যই একটা বড় সংকট তৈরি করেছে।
ভালো বা মন্দ হোক, প্রায় প্রত্যেকটা আন্তর্জাতিক সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই দিকনির্দেশনা, সহযোগিতা ও পদক্ষেপের আশা করেছে বিশ্ব। মার্কিন কর্তারাও সংকট উত্তরণে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু করোনা মহামারীর মতো একটা বড় সংকটকালে সেটা আর ঘটেনি। অন্য দেশ দূরে থাক, নিজের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ দেশগুলোর জন্যও নয়। ফলে নেতা সংকটে পড়েছে বিশ্ব।
সিএনএন বলেছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের এই পতন এখন ক্রমেই একটা ‘হরর শো’তে পরিণত হচ্ছে। আর্থিক ও সামরিক এই পরাশক্তি এখন নিজ দেশের করোনা সামলাতেই ব্যস্ত।
কিন্তু এক্ষেত্রেও বড় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে দেশটির বর্তমান নেতৃত্ব ও প্রশাসন। সেকথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন শীর্ষ সরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি।
চলতি সপ্তাহেই তিনি বলেছেন, ‘করোনার কারণে মহাসংকটের মুখে যুক্তরাষ্ট্র।’ বিশ্বের ভয়াবহ করোনাপীড়িত দেশগুলোর তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে আমেরিকা।
কিন্তু সব দিক দিয়ে বিশ্বের উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও সংক্রমণ ২৫ লাখ পার হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের। এর জন্য ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের অযোগ্যতা ও উদাসীনতাকেই দায়ী করছে মার্কিন সচেতন মহলের একাংশ।
সিএনএন বলেছে, মূলত ট্রাম্পের সাড়ে তিন বছরের শাসনই আমেরিকার আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও মর্যাদা ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে এর ভবিষ্যৎ ভূমিকাও বড় এক অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ঢোকার পর একের পর এক যেসব পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন, তাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে মার্কিন নেতৃত্ব। আর এসব কিছু তিনি করেছেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ (আমেরিকা আগে) নীতির নামে।
প্রথমেই সীমান্ত সুরক্ষার নামে অসংখ্য দেশের সঙ্গে মার্কিন সীমান্ত বন্ধ করেছেন। এরপর একে একে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরান পরমাণু চুক্তি, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এরপর ইউরোপের সঙ্গে সামরিক জোট ন্যাটো এবং এশিয়ার সামরিক জোটগুলো থেকে প্রত্যাহারের পাঁয়তারা করছেন।
করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও চরম অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন ট্রাম্প। এক্ষেত্রে বহু বিশেষজ্ঞই করোনা নিয়ে তার বাজে দৃষ্টিভঙ্গি ও অ্যাপ্রোচকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন।
যেমন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবেত্তা ও গবেষক টিমোথি গার্টন অ্যাশ এনপিআরকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে করোনা মহামারীর মোকাবেলায় চীনের চেয়ে একটা ভালো দৃষ্টান্ত রাখতে পারত যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু বাস্তবতায় তেমনটা ঘটেনি।’ অ্যাশের মতে, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অনেক ইউরোপীয় দেশের চেয়ে বাজে পারফরম্যান্স মার্কিন স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং দেশটির রাজনীতিকদের।
উল্টো নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চীনের বিরুদ্ধে গরল উগরে দিতে ব্যস্ত ট্রাম্প প্রশাসন। এতে উঠতি বিশ্বশক্তি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে।
তাতেও বিপদ দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, চীন-আমেরিকা ঠাণ্ডা লড়াই বিশ্বের জন্য ভাইরাসের থেকে বড় হুমকি।