ভোরের আলো ডেষ্ক: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রায় ৩০ জন সংসদ সদস্য (এমপি) ও কেন্দ্রীয় নেতা। তাদের অনেকের স্ত্রীও প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত। ইতিমধ্যে করোনায় মন্ত্রীসহ দলীয় এমপি এবং নেতা মারাও গেছেন। সবমিলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও নেতাদের ভেতরে। খুব জরুরি না হলে একেবারেই বাসার বাইরে বেরুতে চাচ্ছেন না তাদের কেউই। এই অবস্থায় এসব মন্ত্রী, এমপি ও নেতার কাছ থেকে গরিব, অসহায় ও দুস্থ মানুষ যেসব ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছিলেন তা একরকম বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অনেক ত্রাণগ্রহীতা।
ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা বলছেন, ত্রাণ তৎপরতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কারণেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভেতরে সংক্রমণের হার বেশি। ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ হয়নি, বাড়তি সাবধানতায় থাকতে গিয়ে এ কাজে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কিন্তু থেমে নেই মানুষের পাশে থাকার প্রচেষ্টা। মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। আবার খাদ্য সংকটে থাকা মানুষের সংখ্যাও এখন কম।
এ প্রসঙ্গে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সাধারণ ছুটি বা লকডাউন ব্যবস্থা চালু থাকায় অসহায় মানুষরা খাদ্য সংকটে ছিল। কাজ বন্ধ থাকায় জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ে তাদের। তখন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সরকার পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখন সে অবস্থা নেই। ধান কাটাসহ গ্রামে-গঞ্জে প্রচুর কাজ জুটেছে। খেটে খাওয়া মানুষ সেসব কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন। অসহায়-দুস্থদের খাদ্য সংকট তেমন নেই। তবে শহরাঞ্চলে সেই অর্থে এখনো কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। এখানে দুস্থ-অসহায় মানুষরা কিছুটা কষ্টভোগ করছে। নিজের এলাকায় তার ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, যার প্রয়োজন রয়েছে, তার কাছে ঠিকই পৌঁছে যাচ্ছে ত্রাণ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক সবার মধ্যে বিরাজ করছে। তাই সাবধান ও সতর্ক থাকার কারণে জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় হয়তো কম যাতায়াত করছেন। তাছাড়া সংসদে বাজেট অধিবেশন চলায় এমপিরা সবাই ঢাকায়। জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে সংগ্রাম বলেন, ‘সশরীরে এলাকায় না গেলেও মোবাইল ফোনে আমরা সবাই যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি এলাকার মানুষের সঙ্গে। বাড়তি সাবধানতা মানতে গিয়ে ত্রাণ সহায়তায় হয়তো কিছুটা ভাটা পড়েছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারক খান বলেন, এখন কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। সবাই কাজ করা শুরু করেছেন। ফলে দুস্থ্-অসহায়দের খাদ্য সংকট সেরকম নেই। তারা কাজ করে খাবার জোগাড় করছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ও সরকারের পক্ষ থেকে যেখানে যা দরকার তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ফারক খান বলেন, মানুষকে নিরাপদ রাখতে ও নিজেরা নিরাপদ থাকতে রাজনীতিবিদদের চলাচল এলাকায় কমেছে। কিন্তু এলাকার মানুষের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, করোনাভাইরাস এমন একটি দুর্যোগ যার সঙ্গে পুরো পৃথিবীর মানুষ অপরিচিত। এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মতো আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মী একটু তো আতঙ্কিত। তবে রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের পাশে থাকার কাজটি অব্যাহত আছে।
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ত্রাণ সরবরাহ করে চলেছেন। তিনি বলেন, সারা দেশেই ত্রাণ বিতরণ আগের মতো দৃশ্যমান নেই এটা সত্য। করোনাভাইরাসের কারণে যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তারা একটু সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করছেন। দৃশ্যমান না থাকলেও ত্রাণ বিতরণ চলছে। প্রকৃতপক্ষে যাদের প্রয়োজন তাদের হাতে নীরবে এখন যাচ্ছে ত্রাণ।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা রাজেস সিংহ বলেন, ‘আমি নিজ এলাকা গাইবান্ধা ও ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্ত আছি। ফলে ত্রাণ কার্যক্রম সরাসরি দেখার সুযোগ হয়েছে। আমার দল ও সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে আত্মীয়করণ, মুখচেনা বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণে কিছুটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। তিনি বলেন, অবশ্য আগের মতো ত্রাণ সহায়তাও নেই, অনেকেই কাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ হওয়ায় ত্রাণের প্রয়োজনও কমেছে।
ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হক সজীব বলেন, ‘এলাকায় খেটে খাওয়া মানুষের হাতে এখন অনেক কাজ। তারা কাজ করেই খাবার জোটাচ্ছেন ত্রাণের দিকে তাকিয়ে নেই।’ তিনি বলেন, ত্রাণদাতা নেতারা করোনার বিরূপ প্রভাবে সরাসরি এলাকায় আসা-যাওয়া কমিয়েছেন বলে ত্রাণ তৎপরতা দৃশ্যমান নেই। তবে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’