মৃত্যুর মিছিলে আরো ৩৯ রোডম্যাপ ঝাপসা পদক্ষেপ কত দূর

বেলা আড়াইটায় কয়েক মিনিটের জন্য থমকে যায় বাংলাদেশ। মাস তিনেকের বেশি হলো এটাই রুটিন। এখন অবশ্য প্রায় সব মানুষেরই ব্যক্তিগত ও কাছের অভিজ্ঞতায় হানা দিয়েছে কোভিড-১৯। কেউ নিজে আক্রান্ত হয়েছেন, কারো পরিবারের সদস্য আক্রান্ত, কারওবা দূরের, কাছের পরিচিতজন। ফেসবুক খুললেও একই ছবি। সামনের দিনগুলো কেমন যাবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। আবার কেউ কেউ বলছেন, অনিশ্চয়তা কেন? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা তো তা খোলাসাই করে দিয়েছেন। যদিও পরে তিনি তার বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন।

প্রথম দুই মাস চলে যায় সাধারণ ছুটি না লকডাউন তা বুঝতে বুঝতেই। গত কয়েকদিন ধরে কেবল শোনা যাচ্ছে, রেড, ইয়েলো। কিন্তু তা আর কার্যকরের তেমন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত জোন ভিত্তিক লকডাউন কার্যকর হবে কি না তাও খোলাসা করছেন না কেউ। এই সমন্বয়হীনতা অবশ্য শুরু থেকেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আর মন্ত্রণালয়ের একটিই কথা ছিল আমরা প্রস্তুত। সে যাই হোক মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। গতকালও তালিকায় যোগ হয়েছে আরো ৩৯ জনের নাম। আক্রান্ত ইতিমধ্যে লাখ ছাড়িয়েছে।

প্রশ্ন হলো- এই মিছিল কোথায় গিয়ে থামবে? এটি থামানোর কার্যকর কোন উদ্যোগ কি নেয়া হবে। এর কোনো উপায় কি আছে? সময় কি ফুরিয়ে গেছে? নাকি এখনো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নানা প্রশ্ন। বিশ্বের অনেক দেশই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এসব দেশ অবশ্য এখন দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের আতঙ্কে রয়েছে। আবার কিছু কিছু দেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। নানা খামখেয়ালি করে সময় নষ্ট করেছে।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো তো অবশ্যই সম্ভব। যেসব দেশ করোনার মহামারীকে কমিয়ে এনেছে তারা কিন্তু চেষ্টা করে কমিয়েছে। আপনা আপনি কমেনি। এক্ষেত্রে জোন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত খুবই একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এটা কার্যকর করা দরকার। এখন তথ্য উপাত্তের জন্য বসে থাকার দরকার নেই। এখানে  যে মানদণ্ড বলা হয়েছে রেড জোন করার জন্য সেখানে লাখে ৬০ জন রোগী ছাড়া আরও মানদণ্ড আছে। যেমন যে অঞ্চলে খাদ্যের অভাব দেখা দিতে পারে অর্থাৎ যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষ থাকেন। সেখানে রেড জোন করা যেতে পারে। তারপর যেখানে খুব মানুষ চলাচল করে। কোনো একটি ঘনবসতি এলাকা, বাজার, ঘাট কিংবা বাস  স্টেশন। সেই জায়গাটা বন্ধ করে দিয়ে স্বাস্থ্য বেষ্টনী করে সেখানে রেড জোন করা যেতে পারে। কাজেই ঘনবসতি এলাকা যেখানে সংক্রমণ খুবই ছড়িয়ে পড়তে পারে সেখানে ১ লাখে ৬০ জন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। এটা খুবই দ্রুত করা দরকার। কারণ আমরা কিন্তু সুযোগ হারাবো যদি হঠাৎ করে বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে এক লাফে অনেক রোগী বেড়ে যায়। তাহলে কিন্তু ক্ষয়ক্ষতিটাও বাড়বে। যেভাবে উহানে, নিউ ইয়র্কে, ইতালিতে হয়েছিলো। আমাদের এখানে কিন্তু এরকম কিছু ঘটেনি। আমাদের কিন্তু সুযোগ আছে সেটা বন্ধ করার। ঘনবসতি এলাকাগুলোতে এখনই স্বাস্থ্য বেষ্টনী করে প্রত্যেক লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির টেস্ট করা দরকার। এবং টেস্ট করার পর মূল্যায়ন করা যেতে পারে সেটা কতটুকু বেড়েছে বা কমেছে। যেভাবে পূর্ব রাজাবাজারে হচ্ছে। এক্ষেত্রে যত দেরি করা হবে তত ক্ষতি হবে। যেখানে সংক্রমণ খুবই কম সেখানেও বেষ্টনী দেয়া দরকার। যেটাকে সবুজ এলাকা বলা হয়েছে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং এর মাধ্যমে এলাকাকে তারা করোনা মুক্ত করতে পারে। সবুজ এবং লাল এ দুটো এখনই ঘোষণা করা উচিত। লাল এলাকায় সংক্রমণ কমাতে হবে। সবুজ এলাকায় যতটুকু কম আছে সেটাকে মুক্ত করা দরকার। এদুটো কিন্তু খুবই সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে সরকার জোন ভিক্তিক যে লকডাউনের ব্যবস্থা করেছে এটা দ্রুত কার্যকর করা উচিত। একবারে পুরো দেশকেতো আর অচল করে দেয়া যায় না। সে জন্যই অঞ্চল ভিক্তিক লকডাউন করা হচ্ছে। তবে এটা যেন যথাযথভাবে করা হয়। এবং লকডাউন কার্যকর করার আগে যেন জনগণকে জানিয়ে দেয়া হয় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগে থেকেই ক্রয় করে রাখতে পারেন। যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা। তা না হলে কিন্তু এই লকডাউন কার্যকর হবে না।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে পরিস্থিতির উত্তরণ আমাদের করতেই হবে। সম্ভব-অসম্ভব কোনো শব্দ ব্যবহার না করে আমাদের প্রত্যেকের চেষ্টা করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। এটা বিভিন্নভাবে করা যায়। আমরা ইকোনমিকে নিশ্চিত করে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে চাই। যার জন্য বলা হয়েছে রেড, ইয়েলো, গ্রীণ জোনে ভাগ করা। যাতে করে অর্থনীতি বাঁধাগ্রস্ত না হয়। তার মানে এই নয় যে গ্রীণ জোনে আমাকে সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে না। সবক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাটা জরুরি। অত্যাবশকীয় না হলে যেখানে সম্ভব অর্থাৎ অফিসে উপস্থিত না হয়ে যদি বাসায় বসে কাজ করা সম্ভব হয় তার ব্যবস্থা করা। রোগীকে এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিকে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, যাদেরকে বাড়িতে আইসোলেশন করা যাচ্ছে না তাদেরকে হাসপাতাল বা কোনো ইনস্টিটিউশনে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা। তৃতীয় হচ্ছে, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং আরো জোরদারভাবে করা। এগুলোর সবকিছুর ক্ষেত্রে যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ