ভোরের আলো ডেষ্ক: ফরিদপুরে বিশেষ অভিযানকালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকতের গাড়ির গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয় খাদ্য অধিদপ্তরের সিলযুক্ত ১২০০ বস্তা চাল। এই বিপুল পরিমাণ সরকারি চালের উৎস সন্ধান করা হচ্ছে।
এর আগে, গত ৭ জুন দিবাগত রাতে সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ তাদের অনুসারী আরো সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ১২০০ বস্তায় ৬০ হাজার কেজি চালসহ তিন হাজার ইউএস ডলার, ৯৮ হাজার ভারতীয় রূপী ও ২৯ লাখ টাকাসহ সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকদ্রব্য এবং বেশ কয়েকটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জেলা পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, অভিযানকালে বরকতের মালিকানাধীন বাস রাখার শেড হতে এই চালের বস্তা জব্দ করা হয়। বস্তার গায়ে খাদ্য অধিদতপ্তরের সিল রয়েছে। আপদকালীন সময়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সাজ্জাদ হোসেন এসব চাল মজুদ করে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, বরকত কোনো চালের ডিলার না। তাই তার জিম্মায় এ বিপুল পরিমাণ চাল অসৎ উদ্দেশ হাসিলের জন্যই মজুদ করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। প্রকৃত রহস্য অবশ্যই বের হবে।
জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ এই সরকারি চালের বস্তা উদ্ধারের ঘটনায় বরকত ও তার ভাই রুবেলকে আসামি করে কোতয়ালী থানার এসআই জাকির হোসেন বাদি হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫/২৫ বি (২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এজাহারে বলা হয়, ‘সাজ্জাদ হোসেন বরকত কালো বাজারীর উদ্দেশ্যে দেশের এই আপদকালীন সময় অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ চাউল মজুদ করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারায় অপরাধ করেছেন।’
কোতয়ালী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই বেলাল হোসেন বলেন, বরকত ও রুবেল বর্তমানে অস্ত্র আইনে দায়ের করা একটি মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন। ওই রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চাল উদ্ধারের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা এ মামলায় তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা এ মামলার তদন্ত করছেন ফরিদপুর কোতয়ালী থানার এসআই কবিরুল হক। মামলার এই তদন্তকারী কর্মকর্তা অবশ্য প্রাথমিক তদন্ত বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।
ফরিদপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, শহরের বদরপুর এলাকার ওই গাড়ির গ্যারেজ আমি পরিদর্শন করেছি। সেখানে ৫০ কেজি করে চটের বস্তা ও পলিথিনের বস্তায় ওই চাল রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, চটের যে বস্তা পাওয়া গেছে তাতে ২০১৩ সালের সরকারি খাদ্য গুদামের সিল মারা। চালগুলি বাজার থেকে কেনাও হতে পারে বলে তিনি জানান। অবশ্য তবে যে বিপুল পরিমাণ চাউল উদ্ধার হয়েছে তা কোনো ব্যক্তির পক্ষে মজুদ করা আইন বিরুদ্ধ কাজ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফরিদপুর সদরের ইউএনও মাসুম রেজা বলেন, উদ্ধারকৃত ওই চাল নিয়ে তদন্ত করার কোনো নির্দেশনা পাইনি। পুলিশ যে সময় চালগুলি জব্দ করেন ওই সময় জেলার ভারপ্রাপ্তখাদ্য কর্মকর্তা ও প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্ট অফিসার (পিআইও) ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সাজ্জাদ হোসেন রবকত শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি এসবি কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারী ফার্মের মালিক। এছাড়া তিনি জেলাবাস মালিক গ্রুপের বর্তমান সভাপতি ছিলেন। ৭ জুন রাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়ার পর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাস মালিক গ্রুপের সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।