ভোরের আলো রিপোর্ট, ঢাকা অফিস: বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপিসহ মোট আটজন ভিআইপি এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন একজন এমপি। আক্রান্ত সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। কভিড-১৯ আক্রান্ত আইনপ্রণেতারা হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিরাজগঞ্জ-১ আসনের মোহাম্মদ নাসিম, বান্দরবানের এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ এর এবাদুল করিম বুলবুল, জামালপুর-২ এর ফরিদুল হক খান, চট্টগ্রাম-১৬ এর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং নওগাঁ-২ এর এমপি শহীদুজ্জমান সরকার।
এ ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও করোনা আক্রান্ত হয়ে ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে অবনতির দিকে গেলে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে বিমান বাহিনীর একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার নিয়ে আসা হয়।
কভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে ‘আশঙ্কাজনক’ অবস্থায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গত সাত দিন ধরে সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজধানীরশ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে তার ‘ব্রেন স্ট্রোক’ হওয়ার পর সেখানেই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা নাসিমের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি এখনো ‘ডিপ কোমায়’ রয়েছেন। মেডিকেল টিমের সদস্যরা গতকাল দুপুরে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে এমন তথ্য জানান। মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আমরা (মেডিকেল বোর্ড) শনিবার বিকালে যে অবস্থা দেখেছিলাম আজকেও (রবিবার) তিনি একই অবস্থায় আছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা হতে চলেছে, এর মধ্যে শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি কোমায় আছেন। তার অবস্থার কোনো উন্নতিও হয়নি, অবনতিও হয়নি। ওনার পালস আগে যেভাবে চলছিল সেভাবেই চলছে। এ সময় মোহাম্মদ নাসিমের অবস্থা আগেরই মতোই সংকটাপন্ন বলেও জানান তিনি। প্রথম করোনা আক্রান্ত হন নওগাঁর শহীদুজ্জামান সরকার। গত ১ মে সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। শুরু থেকেই ন্যাম ভবনে নিজের ফ্ল্যাটে ‘আইসোলেশনে’ ছিলেন তিনি। দুই দফা পরীক্ষার পর রিপোর্ট আসে তিনি সংক্রমণমুক্ত। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি করোনাভাইরাস থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে এখন স্বাভাবিক কাজ করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরবন্দী থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা না হলে ঘরে বসেই এ রোগ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।’
সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম আক্রান্ত বীর বাহাদুর উশৈসিং। ৬০ বছর বয়সী বীর বাহাদুর আগে থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার ডায়াবেটিসও রয়েছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় গত শনিবার তার করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। গতকাল বান্দরবান থেকে তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে আসা হয়।
সংসদ সদস্যদের মধ্যে পুরো পরিবারসহ আক্রান্ত হয়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তার পরিবারের ছয় সদস্যসহ তার বাড়ির মোট ১১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদ রহমান নগর এলাকার বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল জানিয়েছেন। এমপি মোস্তাফিজুর, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে, এক নাতনি ও এক জামাতা, তিন গৃহপরিচারিকা ও তার নিজের কভিড-১৯ পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ এসেছে। জামালপুরের এমপি ফরিদুল হক খানের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় ৪ জুন। ৬৭ বছর বয়সী ফরিদুল আপাতত জামালপুরে নিজের বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। পরীক্ষায় পজিটিভ ফল এসেছে। তাই বাড়িতে সম্পূর্ণ আইসোলেশনে থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলছি। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসার পর তার বড় ভাই ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম জানিয়েছেন, নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসার পর থেকে বাসাতেই তার ভাইয়ের চিকিৎসা চলছে। সরকারি দলের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আক্রান্ত সংসদ সদস্যদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসার খবর সংসদ থেকে নেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করি তারা দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।
এর বাইরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাসার চারজন কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এদিকে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে চট্টগ্রামের আরেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর আক্রান্তের খবর এলেও তিনি জানিয়েছেন, তিনি নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। তিনি সুস্থ আছেন।
ডা. জাফরুল্লাহর অবস্থা স্থিতিশীল : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থা এখনো স্থিতিশীল। গত দুই দিন ধরেই তার শ্বাসকষ্ট রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত তা কমেনি। ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে থেকে তাকে নিয়মিত অক্সিজেন নিতে হচ্ছে। তবে কাশি কিছুটা কমেছে। খেতেও তার কষ্ট হচ্ছে। ডা. জাফরুল্লাহর চিকিৎসক গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মামুন মুস্তাফি জানিয়েছেন, ‘স্যারের অবস্থা স্থিতিশীল’। এদিকে গতকাল রাতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফরহাদ জানান, শুক্রবার রাতে স্যারকে (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) আবারও প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। তাকে ডায়ালাইসিসও করানো হয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্লাজমা থেরাপি নিলেন তিনি। গত ২৫ মে ৭৯ বছর বয়সী জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তিন দিন ধানমন্ডির বাসায় আইসোলেশনে থাকার পর ধানমন্ডির নগর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কামরান ঢাকায় : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আবদুল মোমেনের প্রচেষ্টায় সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় এনে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে কামরানের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর শনিবার সকালে তিনি শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি হন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান বলেন, করোনার উপসর্গ ছাড়াও বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ডায়াবেটিস, হার্ট ও ফুসফুসে সমস্যা ছিল। সিলেটের অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সিলেটে তার চিকিৎসা চলছিল। তবে তার পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছায় তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।