করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা (এমপি) নিজ নিজ এলাকামুখী হতে চাচ্ছেন না। করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়াতে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতেই মূলত তারা এলাকায় যেতে আগ্রহী নন; এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিতে ও সব ধরনের প্রয়োজন মেটাতে তারা মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে সক্রিয় থাকছেন।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ জন এমপির সঙ্গে কথা হয়েছে দেশ রূপান্তরের। তারা বলেন, সশরীরে এলাকায় না থেকেও কাজ করছেন এমপিরা। মোবাইল ফোন এবং ফেইসবুক লাইভসহ অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে এলাকার জনগণের খোঁজ রাখা সম্ভব হচ্ছে। এসব এমপি আরও বলেন, সারা দেশের প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় করোনা সংক্রমণ ঘটেছে। কোনো এলাকাই নিরাপদ নয়। তারা জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় গেলে কমবেশি মানুষের জনসমাগম ঘটে। এর ফলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সম্ভাব্য সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকায় না গিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। একজন এমপি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন ডিজিটাল যুগ। মোবাইল ফোন ছাড়াও সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কার্যক্রম সামাল দেওয়া যায়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাড়তে থাকায় কোনো কোনো এমপি আতঙ্কিতও। তবে প্রকাশ্যে আতঙ্কের কথা প্রকাশ করছেন না কেউই। ফলে বেশিরভাগ এমপিই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। ঢাকায় তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ন্যাম ভবনের বাসায় অবস্থান করছেন অধিকাংশ এমপি।
ঢাকায় থাকা এমপিদের কাছে ‘জনপ্রতিনিধিদের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জন্য’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে তারা বলেন, জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা আছে। এলাকায় না গেলেও ডিজিটাল মাধ্যমে জনগণের অভাব-অভিযোগ শুনছেন, সমাধান দিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাস অন্য দুর্যোগের চেয়ে আলাদা। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হয়, শারীরিক দূরত্ব মানতে হয়। এগুলো মাথায় রেখে জনপ্রতিনিধিদের এলাকার মানুষদের জন্য কাজ করতে হয়। এ দুর্যোগের শুরু থেকেই আমরা কাজ করছি। সবসময় এলাকায় থেকেই জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকতে হবে তা কিন্তু নয়। এখন যোগাযোগব্যবস্থা অনেক উন্নত। আমরা কেউ এলাকায় যাই আর না যাই জনগণের সেবা কিন্তু থেমে নেই। মোবাইল ফোনসহ অন্য মাধ্যমে মুহূর্তেই সমস্যা জানা যায় এবং সমাধানও করা যায়। আমরা এভাবে মানুষের পাশে রয়েছি।
কুষ্টিয়ার এমপি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আসল কথা হলো এলাকায় মানুষের প্রয়োজন মেটানো; প্রত্যেক সংসদ সদস্যই সেটা নিজে উপস্থিত থেকে হোক বা না থেকেও হোক করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সবাই যার যার অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।
মাদারীপুরের এমপি ও আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘প্রতিনিয়তই এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। ঢাকায় থেকেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। জনগণের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। মোবাইল ফোন এবং অনলাইনের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ত্রাণ কার্যক্রমসহ নানা কাজ চলছে আমাদের।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী দিনাজপুরের এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনাকালেও ঢাকায় বসে থাকিনি। বেশ কয়েকবার এলাকায় গিয়েছি। এলাকার মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনেছি, সাধ্যমতো সমাধান করেছি। আওয়ামী লীগের সাবেক এ সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘এলাকার গরিব-দুঃখী ও খেটেখাওয়া ২০ হাজারের অধিক পরিবারের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।’ তিনি বলেন, সংকটের এ সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলাকার মানুষের সঙ্গে কানেকটেড আছি।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমপি ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, ‘এলাকায় যাওয়া-আসা করেছি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার মানুষের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করছি। মোবাইল ফোনসহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রায় সব কাজই সচল রয়েছে।’