সামুন ভূইয়া: একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপান্তে দাড়িয়ে আজ আমাদের অকপটে স্বীকার করতেই হবে যে, সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে যেসব ক্ষনজন্মা বিরল প্রতিভা নিজেদের জীবন দেশ, জাতি আর মানব কল্যাণে উৎসর্গ করে সভ্যতার ইতিহাসে চির স্বরণীয় হয়ে রয়েছেন তারমধ্যে বাংলাদেশের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নি:সন্দেহে অন্যতম।
আমি মেজর জিয়া বলছি” শহীদ জিয়ার সেই দৃঢ় কন্ঠে ইস্পাত কঠিন সাহসী উচ্চারনই( ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ) সেদিন দিক নির্দেশনাহীন অসহায় জাতিকে দিয়েছিলো সাহস, শক্তি ,নিশ্চয়তা ও সঠিক গন্তব্যস্হল। নিঃসন্দেহে শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রথম পথ দেখানো সাহসী অগ্রনায়ক, তিনিই বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক।
শহীদ জিয়ার আবারো সেই সাহসী তূর্যবাণী ’’আমি মেজর জিয়া বলছি’’ দৃঢ় কন্ঠে ধ্বনিত হল উনিশ পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালে নভেম্বর এর প্রথম সপ্তাহে চলে ক্যু পাল্টা ক্যু। গোটা দেশ,গোটা জাতি যখন প্রায় অন্ধকারে, জাতির গৌরব সেনা বাহিনী দিক নির্দেশনাহীন-নেতৃত্বহীন,সবাই উৎকন্ঠিত,কি হতে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশে, রাষ্ট্রের প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্ব পর্যায়ে স্থবিরতা বিরাজমান, গোটা জাতি উৎকন্ঠিত, দেশবিরোধী আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে গ্রাস করতে উদ্যত, ঠিক সেই মুহূর্তে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আবার ও শহীদ জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটে ধুমকেতুর মতো- ত্রাণকর্তার ভুমিকায়। জাতি আবারো খুঁজে পায় সঠিক নেতৃত্ব- আলোর দিশা । জাতির এই চরম সংকটময় মুহূর্তে দুঃসময়ের কান্ডারী হিসাবে আবারো শহীদ জিয়ার আবির্ভাব যেন সদ্য স্বাধীন দিশেহারা বাংলাদেশের জন্য মহান মাবুদের পক্ষ থেকে আশির্বাদ।একাত্তরে যেমনি শহীদ জিয়ার কন্ঠে স্বাধীনতা ঘোষনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী ছাত্র-যুব-জনতা ঝাপিয়ে পড়েছিলো তৎকালীন ঘৃণিত শক্তি পাক হানাদারদের উপর,তেমনি পচাত্তরের সাতই নভেম্বর ও বাংলাদেশের ছাত্র-যুব-জনতা, বাংলার আকাশ বাতাস মুখরিত করে শ্লোগান আর মিছিলের স্রোত দিয়ে তৎকালীন দিক নির্দেশনাহীন রাজনৈতিক পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে শহীদ জিয়াকে মুক্ত করেছিলো-সেদিন ও সিপাহী জনতার মহা বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদ জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের ইজ্জত আর আব্রুকে আবারো ও রক্ষা করেছিলেন।
সুতরাং শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক আর স্বাধীনতা রক্ষাকারী, শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট,শহীদ জিয়াই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, শহীদ জিয়াই আধুনিক আর আত্বনির্ভরশীল স্বনির্ভর বাংলাদেশের সৃষ্টা, শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক।
এটাই সত্যিকারের ইতিহাস, এটাই সত্য আর এটাই বাস্তবতা ।কালজ্বয়ী এই মহানায়ক আজ থেকে ৩৯ বছর পূর্বে দেশী আর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে তৎকালীন সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে নির্মম ভাবে শাহাদত বরণ করেন।পতন ঘটে বিংশ শতাব্দীর এক কালজ্বয়ী উজ্জ্বল নক্ষত্রের, পতন ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের এক বীর মহাপুরুষের, পতন ঘটে আধুনিক আর আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার এক সুমহান কারীগরের, পতন ঘটে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সফল রাষ্ট্রনায়ক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তকের।
একথা সত্য শহীদ জিয়া আজ দৈহিকভাবে এই নশ্বর পৃথিবীতে আমাদের মাঝে নেই।কিন্তু তার উনিশ দফা কর্মসূচী,তার দেশপ্রেম,গঠন মূলক জনকল্যাণকর রাজনীতি ও মানবপ্রেমের কারণে তিনি আজও অমর,আজ ও তিনি আমাদের অনুপ্রেরনার উৎস। বাংলাদেশের সত্যিকারের ইতিহাসের পাতায় তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে অনাদি অনন্তকাল।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একটি কুচক্রী মহল শহীদ জিয়ার নামকে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। তারা তাদের নোংরা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা আর বিভ্রান্তিকর অপ- প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।তারা হয়তো জানে না শহীদ জিয়া মানেই বাংলাদেশ। শহীদ জিয়া তার আদর্শ, তার দেশপ্রেম,কর্ম ও অবদানের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের জনগণের ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন-স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে মণিকোঠায়। হাজারো চেষ্টা করেও বাংলাদেশের সাধারন জনতার ভালোবাসা থেকে শহীদ জিয়াকে যেমন বঞ্চিত করা যাবে না,তেমনি ১৮ কোটি জনগণের হৃদয় থেকেও শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না- সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মহানায়ককে মহান রাব্বুল আল্ যেন জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন- আজকের গণতন্ত্র বিহীন স্বৈরতন্ত্রের বাংলাদেশে দিশেহারা অসহায় জাতি আবারো যেন খুঁজে পায় সঠিক গন্তব্য সেই শক্তি, সেই তৌফিক মওলা তুমি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে দান করো-আমিন।
লেখক: সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।