মাসকাওয়াথ আহসান এর ফেইসবুক থেকে
দৈনিক আমার হবিগঞ্জের প্রকাশক সুশান্ত দাস গুপ্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন। দৈনিক হবিগঞ্জে প্রকাশিত কিছু সত্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে একটি প্রভাবশালী মহল ক্ষিপ্ত হয়ে সুশান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
সুশান্ত তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সেই সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্ত হবার আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আবু জাহির এমপির পক্ষে হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাব আমার বিরুদ্ধে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার প্রকাশিত কিছু নিউজের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে। আমাকে গ্রেপ্তার করে এসপি অফিসে আনা হয়েছে। সবাইকে বলবো ধৈর্য ধরতে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হয়ে আসবো। জয় বাংলা।”
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আহবানে সাড়া দিয়ে উদ্যোক্তা সুশান্ত একে একে আমার ব্লগ, ই-বাংলাদেশ, আমার প্রকাশনী, আমার এমপি’র মতো উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন।
লন্ডন প্রবাসী সুশান্ত ২০১০ সালে আমাকে “ই-বাংলাদেশ” ইংরেজি পোর্টালের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে পাশাপাশি আকুতি জানান, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তার আগেই ইংরেজি ভাষায় নানা অপপ্রচার চলছে এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে; ইংরেজিতে ই-বাংলাদেশে কিছু আর্টিকেল লিখুন; যা এইসব মিথ্যা ভাষণের ভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দিতে পারবে।
আমি শর্ত রেখেছিলাম, প্রকাশক হিসেবে আমার সম্পাদকীয় নীতিতে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
সুশান্ত বলেছিলেন, আমি লন্ডনে থাকি। আমি জানি মিডিয়ার সম্পাদক সার্বভৌম। প্রকাশক সেখানে নাক গলাতে পারেনা। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
সুশান্ত তার এ অঙ্গীকারের প্রতি সুবিচার করেছেন সব সময়। দেশে ফিরে তিনি হবিগঞ্জে একটি বাংলা দৈনিক চালু করেছেন। ফেসবুকে সে পত্রিকার প্রথম “পেইজ মেকআপ” শেয়ার করে পাঠকের অভিমত সংগ্রহ করেছেন। অনলাইন সাংবাদিকতার প্রথম প্রজন্মের মানুষ সুশান্ত; প্রিন্ট মিডিয়া আর হবিগঞ্জের পাঠকের জন্য একটি প্রয়োজনীয় সংবাদপত্র প্রচলনের আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
সুশান্ত কোন কোন প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে গ্রেপ্তার হলেন; সে সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো জানি না। তবে বাংলাদেশে বর্তমানের বাক-স্বাধীনতার সংকট আর দেশটিকে প্রেস ফ্রিডম সূচকে বছরের পর বছর দক্ষিণ এশিয়ায় নিম্নতম অবস্থান দেখে; আশংকা হয়; সুশান্তর প্রচলিত সংবাদপত্রটিকে অংকুরেই বিনষ্ট করতে সক্রিয়; সেইসব লোক যাদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। তারা নিজেদের গণদেবতার ইমেজটিকে রাষ্ট্রীয় কালা-কানুনের জোরে ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। সত্যানুসন্ধান আর সত্য উন্মোচন এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে কঠিন কাজ।
বাংলাদেশের সাংবাদিক ও লেখকেরা কিংবা নাগরিক সমাজের যে কোন সদস্যকে সত্যানুসন্ধান ও সত্যপ্রকাশ করতে দেখলেই; গণদেবতার ইমেজ রক্ষার দায়িত্ব নিয়োজিত মিথ্যার পুলিশেরা তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। করোনার মতো মড়ক কিংবা আম্পানের মতো ঘূর্ণিঝড়ের গণহত্যার ভয়ে মানুষ যখন দিশেহারা; তখনও প্রভাবশালীর “ইমেজ”-এর ভয় মিথ্যা-পুলিশদের লেলিয়ে দিচ্ছে মুক্তমত দমন করতে।
সুশান্ত প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগের সমর্থক। এরকম আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গ্রেপ্তার সাধারণত অন্তর্দ্বন্দ্ব বলে চালিয়ে দেয় সবাই। কিন্তু ক্ষমতা একটি স্বতন্ত্র রাজনীতি। ক্ষমতা নরভোজি হয়; মিথ্যার বেসাতি করে; সহমতের প্রোপাগান্ডা নিয়ে ফুলেল বাসরে মধুচন্দ্রিমা করতে চায় সতত।
ক্ষমতা যেহেতু দুর্নীতি-জুয়া খেলা-বিদেশে টাকা পাচার আর পাপিয়া ভাইরাসের অন্ধকার এক জগত; সেখানে সত্যানুসন্ধান; দুর্নীতির অন্ধকারে আলো ফেলা রীতিমত শাস্তিযোগ্য যেন। সে আলো আওয়ামী লীগের সমর্থক ফেলতে চাইলেও মিথ্যার পুলিশ তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। প্রভাবশালীরা এইভাবে ক্ষমতার “হিজড়ে লাগিয়ে দিয়ে পদ্য লেখে।” ফলে আদালতও জামিন দিতে চায়না গ্রেপ্তার হওয়া সত্যানুসন্ধানীদের। সাংবাদিক কাজল, লেখক দিদারুল, মুশতাক, কার্টুনিস্ট কিশোরের জামিন প্রত্যাখ্যাত হয় ক্ষমতা দলীয় আদালতের আইনি খ্যামটা নাচের স্থূল আসরে।
সুশান্তসহ গ্রেপ্তারকৃত সত্যানুসন্ধানী নাগরিকদের মুক্তি চাই।