সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের শতবর্ষী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী যুক্তরাজ্যে তহবিল সংগ্রহে সাড়া ফেলেছেন।
তহবিলের জন্য লন্ডনের উপকণ্ঠে সেন্ট আলবান্স শহরে নিজের বাড়ির বাগানে প্রতিদিন ৮০ মিটার পথ হাঁটছেন তিনি ১০০ বার করে। ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে তার এই কার্যক্রম, পুরো রোজার মাসে তিনি এই হাঁটা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
মাত্র ১০ দিনে দবিরুলের তহিবলে জমা হয়েছে ৭৮ হাজার পাউন্ডের বেশি অর্থ, যদিও মাত্র এক হাজার পাউন্ড সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলেন তিনি। প্রতি মুহূর্তে তার এই তহবিলে অর্থ জমা পড়ছে।
১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের দিরাই থানার কুলঞ্জ গ্রামে জন্ম নেওয়া দবিরুল ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে। লেখাপড়ার পর সেখানে চাকরির পাশাপাশি কমিউনিটির কাজেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার স্ত্রী খালেদা দবীর চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাজ্য শাখার একজন নেত্রী। আর কমিউনিটিতে সুপরিচিত পেনশনার দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে অনেকেই চেনেন কবি দবিরুল হিসাবে।
কবিতাপ্রেমী দবিরুল ইসলাম চৌধুরী এখনো কোনো সভা-সমাবেশে গেলে স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান। শত শত কবিতা লিখেছেন তিনি। তার লেখা কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংকটে পুরো বিশ্ব যখন টালমাটাল, সেই সংকটে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা ভর করে শতবর্ষী দবিরুলের মাথায়। এর মধ্যে টেলিভিশনে আরেক শতবর্ষী ব্রিটিশ সেনা টম মুরের নিজের বাড়ির আঙিনায় হেঁটে এনএইচএস অর্থাৎ ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের জন্য ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহের খবর দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যোদ্ধা টম মুর নিজের শততম জন্মদিনে বাড়ির সামনে ১০০ চক্কর হেঁটে তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেন। ব্রাউফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা ক্যাপ্টেন মুরের এই আহ্বান সাড়া দিয়ে তহবিলে অর্থ দেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ।
তার এই তৎপরতায় অনুপ্রাণিত হন দবিরুল ইসলাম চৌধুরী, তিনিও দুর্গত মানুষের কল্যাণে ১০০ বছর বয়সে হেঁটে তহবিল সংগ্রহের চ্যালেঞ্জে নেমে পড়েন। তার তহবিলে প্রথম একজন দান করেন ১০০ পাউন্ড।
মাত্র একশ পাউন্ড দিয়ে যাত্রা শুরু করা দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর এই তহবিল ১০ দিনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার পাউন্ডে। তহবিল শেষ পর্যন্ত লাখ পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তার ছেলে আতিক চৌধুরী । সংগৃহীত সব অর্থ দান করা হবে রামাদান ফ্যামিলি কমিটমেন্ট (আরএফসি) নামের একটি চ্যারিটিকে। এই চ্যারিটি ২৬টি সংগঠনকে এই অর্থ সমানভাবে ভাগ করে দেবে, যা দিয়ে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে দুর্গতদের সহায়তা করা হবে।
দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মানুষ যেভাবে সাড়া দিয়েছে তাতে তিনি অভিভূত। তার উৎসাহও আরও বেড়ে গেছে। তিনি রমজানের শেষ পর্যন্ত হাঁটা অব্যাহত রাখবেন। মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং এই দুঃসময়ে আমি একটা কিছু করতে পারছি যতই তা ভাবছি ততই আমার শক্তি বেড়ে যাচ্ছে।”
হাজার হাজার মানুষ যারা অর্থ দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান দবিরুল ইসলাম চৌধুরী।