দেশে করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে করেন বাংলাদেশের শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইনফেকশনটা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে, সেটা যে সহসা কমবে তার কোন লক্ষণ নেই।
সোমবার বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনভাইরাস মহামারির প্যার্টান বা আক্রান্তের সংখ্যা নির্দেশকারী গ্রাফে এর ওঠানামার চিত্রটা দেখলে দেখা যাবে, বিশে এপ্রিল ৪৯২জনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। তারপর দৈনিক আক্রান্তের এই হার ওঠানামা করে এখন ৬শ’র কোঠায় পৌঁছেছে।
দিনে দিনে এই কার্ভটা উঠে যাচ্ছে। সমস্ত ইনফেকটেড লোকের ৫৫% ঢাকা সিটিতে। আর সব আক্রান্তের ৮৭% ঢাকা বিভাগে। ঢাকায় সংক্রমণের বিষয়টা ঠিকমত নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলেই তার মনে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশ হাজারের ওপর। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬৮৮, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হওয়া রোগী।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, গত ২৮শে এপ্রিল গার্মেন্টস খুলে দেয়া হয়েছে এবং এর কী প্রভাব পড়বে তা আমরা পাওয়া শুরু করব ১২ই মে থেকে। দোকানপাটও এতদিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেবার যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তার প্রভাবে এই গ্রাফ আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে।
অধ্যাপক ইসলাম মনে করেন এই সংক্রমণ যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। হার্ড ইমিউনিটি- অর্থাৎ কিছু লোক মারা যাবে, এবং অনেক মানুষ ইমিউন (প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাস প্রতিরোধী) হয়ে যাবে।
তবে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ভাইরাসটি যদি এর মধ্যে মিউটেট করে (আচরণ পরিবর্তন করে), তাহলে কিন্তু তা নাও হতে পারে। কারণ মিউটেট করলে সেটা নতুন ভাইরাসে পরিণত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট যেটা আমরা এখন করছি, সেটাও আবার তখন কাজে লাগবে কি না তাও জানা নেই।
বাংলাদেশে উচ্চ মানের লকডাউন আরোপ করা সম্ভব না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটির ওপর ভরসা করেই থাকতে হবে।
আমরা চেষ্টা তো করলাম এক মাস ধরে। পারছি না তো। সবাই চেষ্টা করেছে। পুলিশ চেষ্টা করেছে, আর্মি চেষ্টা করেছে, ভলান্টিয়াররা চেষ্টা করেছে। আমরা পারছি না।
অধ্যাপক ইসলাম বলেন, আমেরিকা বা ইতালিতে কর্তৃপক্ষ যেভাবে লকডাউন কার্যকর করতে পারে, বাংলাদেশ সেভাবে এই লকডাউন কার্যকর করতে পারছে না। বাংলাদেশে মানুষজনের যে বিহেভিয়ার্যাল প্যার্টান (আচরণের ধরন) আর বাংলাদেশ সরকারের যে সক্ষমতা, এই দুটা বিবেচনায় নিয়ে সরকার এইরকম আচার-ব্যবহারওয়ালা জনগোষ্ঠিকে প্রকৃতভাবে লকডাউন করাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, সরকার অবশ্যই চেষ্টা করছে, কিন্তু সরকারের সক্ষমতার একটা থ্রেসহোল্ড আছে অর্থাৎ এর বেশি সরকার সক্ষম না।