জামা-কাপড়ে লেগে থাকা করোনাভাইরাস কতক্ষণ বেঁচে থাকে, তা নিয়ে অনেকেরই ভাবনার শেষ নেই। এ নিয়ে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে ছাপা হওয়া এক গবেষণাপত্রের উদাহরণ টানেন কেউ কেউ। বাতাসে ও ভূপৃষ্ঠে কতক্ষণ বেঁচে থাকার ক্ষমতা রয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের, তা নিয়েই সেই গবেষণা। তাতে বলা হয়েছে, বাতাসে তিন ঘণ্টা, তাম্রপাত্রে চার ঘণ্টা, কার্ডবোর্ডে ২৪ ঘণ্টা এবং প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলে দুই থেকে তিন দিনের মতো জীবন্ত থাকে করোনাভাইরাস।
খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই, এই তালিকায় প্রচলিত পোশাক-আশাকের নাম নেই, যদি না আপনি কোপার আর্মারের স্যুট কিংবা কার্ডবোর্ড বক্স গায়ে জড়ান! খবর ফোর্বসের।
কী পরেন আপনি?
এখন প্রশ্ন হলো, এগুলোর মধ্যে কোনটা আপনার পোশাকের কাছাকাছি? নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হওয়া এক আর্টিকেলে একজন অ্যারোসোল সায়েন্টিস্ট ও একজন পেডিয়াট্রিক ইনফেকসাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করে লেখা হয়েছে, সেটি সম্ভবত কার্ডবোর্ড; কেননা, কার্ডবোর্ড ও জামা-কাপড়- উভয়ের মধ্যেই আর্দ্রতা শোষণকারী আঁশ বা সুতো থাকে। বেঁচে থাকার জন্য আর্দ্রতার প্রয়োজন পড়েই ভাইরাসটির। অন্যথায়, এটি দ্রুত শুকিয়ে ও মরে যায়।
তার মানে আমরা ধরে নিতে পারি, আমাদের জামা-কাপড়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে করোনাভাইরাস? হ্যাঁ, সম্ভবত তাই।
মনে রাখা দরকার, পোশাক পুরোটাই যে শুধু সুতোয় হয়, তা নয়। সেখানে বোতাম কিংবা ক্ল্যাপসের মতো অংশগুলো মেটাল কিংবা প্লাস্টিকেরও হয়ে থাকে। তার মানে, ওইসব অংশে থাকলে কিংবা রোদে যেখানে জামা-কাপড় শুকাতে দেবেন, সেই প্লাস্টিক বা মেটালে সেটি দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত জীবন্ত থাকতে পারে করোনাভাইরাস।
এরপর প্রশ্ন আসে, আপনার পোশাক যদি ভিজে যায়, কী হবে তখন? বৃষ্টি, ঘাম কিংবা কান্নার কারণেও পোশাক ভিজতে পারে। তখন সেটি হয়তো স্টিল বা প্লাস্টিকের তারে বা জানালায় আপনি শুকাতে দিলেন। যদি পোশাকটি ঝটপট শুকিয়ে ফেলতে না পারেন, তাহলে সেটিতে ভাইরাসটি কতক্ষণ আশ্রয় নিতে পারবে?
জামা-কাপড়ে কতক্ষণ এই প্রাণঘাতী ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারবে, তা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা এখনো হয়নি। তাই যদি আপনার মনে হয়, কোনো কারণে পোশাকে ভাইরাস লেগেছে, সে ক্ষেত্রে যথাযোগ্য সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
পোশাকে যেভাবে করোনা ছড়ায়:
মনে রাখবেন, আপনি, অর্থাৎ বেশির ভাগ মানুষই বেশ কিছুদিন ধরেই বাসায় রয়েছেন। আর বাইরে একান্ত প্রয়োজনে বের হতে হলেও, যথাযোগ্য সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কারণে আপনার পোশাক ভাইরাসের সংস্পর্শে আশার আশঙ্কা কম। যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা ভাইরাস সংস্পর্শিত কোনো বস্তুর স্পর্শ আপনার পোশাকে লাগে, সেক্ষেত্রেই এই ঝুঁকি রয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা জোরে ফেলা নিঃশ্বাসও এই ঝুঁকির কারণ হতে পারে। যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে নিয়মিত আসেন বা চিকিৎসাসেবায় জড়িত- তাদের পোশাকে সাধারণত এভাবে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।
যদি সন্দেহ জাগে, আপনার পোশাকে জীবাণু লেগেছে, তাহলে যতদ্রুত সম্ভব সেটি বদলিয়ে ফেলুন। তবে কোনো মুদি দোকানে বা পাবলিক প্লেসে এমনটা মনে হলে, তক্ষুনি সেখানে তা করবেন না। কেননা, এত আরও বাড়তি বিপত্তি জুড়ে যেতে পারে। তারচেয়ে বরং পোশাক বদলানোর যথাযোগ্য জায়গায়, যেমন- নিজের বাড়িতে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
পোশাক বদলানোর সময় হাতগুলো মুখের কাছ থেকে দূরে রাখুন:
যখন পোশাক বদলাবেন, তখন নিজের মুখ স্পর্শ করবেন না এবং ওই পোশাকটিকে অন্য কোনো পোশাকের সংস্পর্শে নেবেন না। পাল্টানো হয়ে গেলে পোশাকটি এমন কোনো জায়গায় আলাদা রাখুন, যেন অন্যকিছুর সংস্পর্শে না আসে।
যখনই অন্য কোনো পোশাক পরবেন- হোক সেটি নিজের কিংবা অন্য কারও- তখনো ভাইরাসটি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়ে যায়। তাই সম্ভব হলে ডিসপোজেবল গ্লাভস পরুন এবং ব্যবহার শেষে গ্লাভসটি ফেলে দিন। যদি আপনার কাছে এ রকম গ্লাভস থাকে, তাহলে সেগুলো হরদম ব্যবহার করে অপচয় করবেন না; বরং করোনাভাইরাস সামলানোর মতো পরিস্থিতিতেই শুধু ব্যবহার করুন। আর, যদি গ্লাভস না থাকে, তাহলে সন্দেহজনক পোশাকটি বদলানোর সময় নিজের হাতগুলো মুখের কাছ থেকে দূরে রাখুন; এবং বদলানো হয়ে গেলে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সম্ভব হলে গোসলও করে নিন।
আর করোনাভাইরাস সংস্পর্শিত সন্দেহের সেই পোশাকটিকে ওয়াশিংমেশিনে ধোয়ার সময় টেম্পারেচার সর্বোচ্চ বাড়িয়ে দিন। অন্যদিকে, নিজ হাতে ধুতে চাইলে গরম পানি করে নিন। কাপড় ধোয়ার গুড়ো সাবানের পক্ষে ভাইরাসটিকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। ধোয়া হয়ে গেলে পোশাকটি পুরোপুরি শুকিয়ে ফেলুন; তার ফলে ভাইরাসটির মরে যাওয়া আরও নিশ্চিত হবে।
জুতো বাইরেই খুলে রাখুন:
অন্যদিকে, জুতো প্রসঙ্গে আসি। আপনার জুতোগুলো হয়তো পুরোপুরি ফ্যাব্রিকে বানানো নয়। তাছাড়া, সব জুতো তো ওয়াশিংমেশিনে ঢুকিতে দিতেও পারবেন না, আবার গরম পানি দিয়েও ধুতে পারবেন না!
তাই বাইরে থেকে ঘরে ফেরার সময় জুতো বাইরেই খুলে রাখুন। তারপর ঘরে পরার কোনো জুতো পরে ভেতরে ঢুকুন। ওই জুতোগুলো পরিষ্কারের কোনো চেষ্টা করবেন না, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। জুতো পরিষ্কার করতে গেলে বাতাসে বা তোয়ালেতে ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
পরিশেষে বলি, জামা-কাপড় নিয়ে অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। বরং যথাযোগ্য সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।