লিখেছেন মাহমুদুল হাসান রুবেল
বর্তমান করোনাকালে বিশ্বের প্রতিটি দেশই হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের মেডিক্যাল মাস্ক, পিপিই সংগ্রহ নিয়ে। কানাডা সরকারও এর ব্যতিক্রম নয়। এসব মেডিক্যাল মাস্ক, পিপিই এর জন্য চীনের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। চীনা প্রতিষ্ঠান হুওয়ায়ে নিয়ে আবার চীনের সাথে কানাডার কূটনৈতিক টানাপোড়ন তো আছে। এর মধ্যেও কানাডা সরকার এ দুর্যোগ সময়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে চীন থেকে দ্রুতগতিতে মাস্ক, পিপিই সংগ্রহ করার জন্য। পূর্বে কানাডিয়ান কার্গো বিমান প্রতিষ্ঠান কার্গোজেট এর দুইটি বিমান চীন থেকে খালি হাতে ফিরে আসে। চীনের সাথে কেবল কানাডিয়ান বিমান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এয়ার কানাডার অনুমতি আছে। তারপরও কার্গোজেট বিশেষ অনুমতি নিয়ে কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে চীন সরকার আরো কঠোর হয়ে পড়লে কুইবেক সরকারের মিলিয়ন মিলিয়ন মাস্ক এবং পিপিই চীনে আটকে থাকে। এগুলো কুইবেকে আনার জন্য কুইবেকের কার্গো বিমান প্রতিষ্ঠান নলিনোর এভিয়েশন কাজ পায় এবং লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য টরন্টো এর প্রতিষ্ঠান মোমেন্টাম সলিউশন দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। এই দুই প্রতিষ্ঠান জার্মানীর এক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কার্গো বিমান Antonov An-225 Mriya কে ভাড়া করে কুইবেকের ৮ মিলিয়ন মেডিক্যাল সাপ্লাই পরিবহণ করার জন্য।
এ বিমানটি গত দুই সপ্তাহে পোল্যান্ড, ফ্রান্স এবং জার্মানীতে মেডিক্যাল সাপ্লাই পরিবহণ করে এবং চতুর্থ দেশ হিসেবে কানাডার কুইবেক প্রদেশের মিরাবেল এয়ারপোর্টে ১ লা মে রাত সাড়ে আটটার দিকে অবতরণ করে। চীনের তিয়ানজিং এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় দশ ঘন্টা উড়ে আলাস্কার এনকরেজ বিমানবন্ধরে আসে এবং সেখানে বিমানের ক্রুরা বিশ্রাম নেন। সেখান থেকে প্রায় ৭ ঘন্টা উড়ে মিরাবেল এয়ারপোর্ট এ অবতরণ করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মালবাহী বা কার্গো বিমান Antonov An-225 Mriya. এর দৈর্ঘ্য ৮৪ মিটার, এবং উইংস্প্যান ৮৮.৪ মিটার। এটি আসলে মানুষের তৈরী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিমান। এই ৬ ইঞ্জিন বিশিষ্ট একটি দানবাকৃতির উড়োজাহাজটি প্রায় ৬৪০ টন ভর নিয়ে উড়তে পারে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন সময়ে ইউক্রেনের বিমান প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান আন্তোনভ ডিজাইন ব্যুরো মূলত রাশিয়ান স্পেস শাটল ‘বুরান’ কে বহন করার জন্য এই বিশালাকার বিমানটি তৈরী করে ১৯৮৮ সালে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীতে এই Antonov An-225 Mriya বিমান একটিই আছে এবং ১৯৮৮ সাল থেকে এই বিমানটি বিভিন্ন মালামাল আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৮ সালে বিমানটি আধুনিকায়ন করা হয় এবং বর্তমানে বিমানটি মূলত ব্যবহৃত হয় জরুরী মেডিক্যাল সাপ্লাই পরিবহণে।
মিরাবেল এয়ারপোর্ট এ ডিএইচএল এর এয়ারক্রাফট লোড প্লানার এবং ডেঞ্জারাস গুডস ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত থাকায় সরাসরি বিমানবন্ধরের ক্লাস্টার এরিয়াতে গিয়ে বিমানটি দেখার সৌভাগ্য হয় আমার। এ বিমানটি দেখার পর অন্য বিমানগুলোকে বাচ্চা মনে হয়েছে। বিমানটির ৩২টি চাকা দেখে অবাক লেগেছে। তিন বছর আগে মিরাবেল এয়ারপোর্ট এ Antonov An-124 Ruslan দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। তবে এটা আরো বিশাল।