লিখেছেন জান্নাতুল নাঈম পিয়াল
কমিকস ভক্ত তো অনেকেই আছেন। বলুন তো, একজন একক লেখক-শিল্পী হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশিদিন ধরে একটানা চলা কমিক স্ট্রিপ কোনটি?
এ প্রশ্নের উত্তরে দুটি নাম খুব সহজেই চলে আসবে। জনি হার্টের ‘বিসি’ (৪৯ বছর; ১৯৫৮-২০০৭) এবং হ্যাঙ্ক কেচামের ‘ডেনিস দ্য মেনেস’ (৪৩ বছর; ১৯৫১-১৯৯৪)। কিন্তু যদি বলি, রেকর্ডটির মালিক আসলে আমাদের বাংলা ভাষারই একটি জনপ্রিয় কমিক স্ট্রিপ, ‘হাঁদা ভোঁদা’?
হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও, সম্ভবত নারায়ণ দেবনাথের সৃষ্ট এই বিখ্যাত কমিক স্ট্রিপটিই উপর্যুক্ত রেকর্ডের প্রকৃত দাবিদার। কেননা ২০১৭ সালে ৯২ বছর বয়সে নারায়ণবাবু ‘হাঁদা ভোদা’র কাজ থামিয়ে দিলেও, এর আগে টানা ৫৫ বছর এটি লিখে ও এঁকে গেছেন তিনি।
সেই যে ১৯৬২ সালে শিশুদের মাসিক পত্রিকা ‘শুকতারা’য় ‘হাঁদা ভোদা’ বের করা শুরু করেছিলেন, এরপর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি উপর্যুপরি নতুন নতুন পর্ব তিনি উপহার দিয়ে গেছেন অন্তত তিনটি পৃথক প্রজন্মের অগণিত ভক্তকে।
একটু আগে বললাম যে ‘বিসি’ ও ‘ডেনিস দ্য মেনেস’-এর কথা, তাদের সাথে ‘হাঁদা ভোঁদা’র পার্থক্য হলো, জনি হার্ট ও হ্যাঙ্ক কেচামের বিদায়ের পরও অন্য শিল্পীরা টেনে নিয়ে গেছেন সেগুলো। কিন্তু ঠিক হার্জের ‘টিনটিন’-এর মতোই, নারায়ণ দেবনাথ কাজে ইস্তফা দিয়েছেন দায়িত্ব অন্য কারো কাঁধে সঁপে না দিয়েই।
‘হাঁদা ভোঁদা’র প্রকৃত স্রষ্টার কৃতিত্বটি অবশ্য নারায়ণবাবুর নিজের নয়। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৫০-এর দশক থেকেই হাঁদা-ভোঁদাকে নিয়ে অনিয়মিতভাবে একটি কমিক স্ট্রিপ বের হতো ‘শুকতারা’য়। সেখানে কথা ও ছবির জায়গায় থাকত একটি বোলতার ছবি। ওই বোলতার প্রকৃত পরিচয় হলো, তিনি ছিলেন তৎকালীন প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুলচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়।
১৯৬২ সালে ওই হাঁদা-ভোঁদাকে পরিমার্জন ও সংশোধন করেই নিয়মিত রচনা ও অলঙ্করণ শুরু করেন নারায়ণবাবু। হাঁদা-ভোঁদাকে নিয়ে তার করা প্রথম কাজটির নাম ছিল ‘হাঁদা ভোঁদার জয়’। আর সেই গল্পের বিষয়বস্তু ছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ।
‘হাঁদা ভোঁদা’ই কিন্তু নারায়ণবাবুর একমাত্র জনপ্রিয় সৃষ্টি নয়। পরবর্তীতে তার হাত ও মাথা থেকেই বেরিয়েছে ‘বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘নন্টে ফন্টে’, ‘পটলচাঁদ দি ম্যাজিশিয়ান’, ‘বাহাদুর বেড়াল’, ‘ডানপিটে খাদু আর তার কেমিক্যাল দাদু’ এবং ‘পেটুক মাস্টার বটুকলাল’-এর মতো অসাধারণ সব সৃষ্টি।
তবে সেসব নিয়ে আলাপের আগে বরং নারায়ণবাবুর জীবনের শুরু থেকে শুরু করা যাক। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে। যদিও তার জন্ম ১৯২৫ সালে, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুরে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে পড়াশোনা শেষ করা হয়নি যদিও, কিন্তু যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের পেইন্টিং বিভাগে। আর সে-কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে না পারলেও অপার উৎসাহের সাথে রপ্ত করে ফেলেছিলেন আঁকাআঁকির যাবতীয় কলাকৌশল ও দর্শন। তাছাড়া পারিবারিক ব্যবসায়ে একটু আধটু স্বর্ণালঙ্কারের ডিজাইনও করতেন তিনি, যা তার ছবি আঁকার হাতকে আরো পাকিয়ে তুলেছিল।
বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর ভাগ্যের খোঁজে নারায়ণবাবু নেমে পড়েন শিল্প-সংস্কৃতির জগতে। তবে প্রথমদিকে তার চলার পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। মনের মতো কাজ তো দূর অস্ত, আঁকাআঁকি করে যে অন্তত খেয়ে-পরে টিকে থাকবেন, তেমন কোনো রাস্তাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু ওই যে একবার মাথায় ঢুকে গেছে শিল্পের পোকা, তাই শত কষ্ট সত্ত্বেও হার মানেননি তিনি। বেছে নেননি বিকল্প কোনো পেশা।
যতদিন মন ভরানোর মতো কাজ না পান, ততদিন প্রসাধন সামগ্রীর লোগো, মাস্টহেড আর সিনেমা কোম্পানির বিভিন্ন লিফলেটের কাজ করে যেতে লাগলেন। এরই ফাঁকে ত্রিবেণীর বাংলা অনুবাদেও করে ফেললেন একটি অলঙ্করণ। আর সেখান থেকেই ঠিক করে ফেলা, এমন কিছুই একদিন করা ধরবেন নিয়মিত।
এরপর একদিন নারায়ণবাবুর হাতে এসে পড়ল ‘শুকতারা’ পত্রিকা। তার জীবনের ইউরেকা মুহূর্ত যেন সেটিই। কারণ এমন সুন্দর একটি পত্রিকাতেই যে কাজ করা তার আজন্ম স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগও হাতের মুঠোয় চলে এলো বছর দুয়েকের মধ্যেই।
একদিন কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় কাজ করতে গিয়ে জানতে পারলেন, ‘শুকতারা’ পত্রিকাটি বের করে ‘দেব সাহিত্য কুটির’ নামের প্রকাশনা সংস্থাটি। সেটির প্রুফ রিডারের সহায়তায় অচিরে কর্ণধার সুবোধ মজুমদারের সাথে পরিচয় পর্বটিও সেরে ফেললেন তিনি।
রত্ন চিনতে ভুল করলেন না সুবোধবাবু। নারায়ণবাবুর প্রতিভার প্রমাণ পেয়ে প্রথম দেখাতেই তাকে ধরিয়ে দিলেন তিনটি অলঙ্করণের কাজ। মহা উৎসাহে কাজ তিনটি করে ফেললেন নারায়ণবাবু দ্রুততম সময়ের মধ্যে। তার কাজের প্রতি যথাযথ সম্মানও দেখালেন সুবোধবাবু, তৎক্ষণাৎ ধরিয়ে দিলেন পারিশ্রমিক।
সেদিনের পর আর ২৫ বছর বয়সী নারায়ণবাবুকে ভাবতে হয়নি, নিজের অসামান্য প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে তিনি আসলে কী করবেন জীবনে।
‘হাঁদা ভোঁদা’র দায়িত্ব নেয়ার পেছনে অবশ্য নারায়ণবাবুকে উসকেছিলেন সুবোধবাবু নয়, তার ছোট ভাই ক্ষিরোদবাবু। একদিন তিনি নারায়ণবাবুকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাংলায় প্রায় অনুপস্থিত যে গ্যাগ ধরনের মজার কমিকস, সেটি তিনি করতে চান কি না।
ব্যাপারটি শুনেই মনে ধরে যায় নারায়ণবাবুর। তাই ছোটবেলায় শিবপুরের রকে বসে দেখা পাড়াতো কিশোরদের দুষ্টুমিগুলোকে মাথায় নিয়ে চট করে একটি গল্প তৈরি করে ফেললেন, আর সেগুলোকে খাপে খাপে বসিয়ে ফেললেন হাঁদা-ভোঁদার চরিত্রে। এভাবেই হয়ে গেল ‘হাঁদা ভোঁদার জয়’।
একটু আগে বলছিলাম, ‘হাঁদা ভোঁদা’ ছাড়াও নারায়ণবাবুর সৃষ্টির তালিকায় আছে আরো বেশ কিছু কালজয়ী কমিক স্ট্রিপ। এদের মধ্যে প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘বাঁটুল দি গ্রেট’ এর। সময়টা তখন ১৯৬৫ সাল। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পটভূমিকায় বাঁটুলকে এনে ফেলেছিলেন স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ।
শুরুতে বোধহয় কাহিনীর কাঠিন্যের কারণেই খুদে পাঠকরা তেমন একটা গ্রহণ করেনি বাঁটুলকে। কিন্তু সেই তারাই অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে দারুণ ভালোবেসে ফেলল বাঁটুলকে। গোলাপি রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি আর কালো হাফপ্যান্ট পরা, ৪০ ইঞ্চি বুকের ছাতি সমৃদ্ধ, কাঠির মতো সরু ও খালি পা-ওয়ালা বাঁটুলকে ভালো না বেসে কীভাবেই বা পারা যায়! তাছাড়া বাঁটুলের সাথে যে রয়েছে তার দুই ভাগ্নে, ভজা ও গজাও।
ব্যক্তিগতভাবে এই বাঁটুলকেই নিজের সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি বলে মনে করেন নারায়ণবাবু।
এদিকে শুরুটা যে ‘হাঁদা ভোঁদা’কে দিয়ে, ১৯৬৯ সালে ঠিক তাদেরই আদলে তিনি তৈরি করেন ‘নন্টে ফন্টে’। ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকার জন্য সৃষ্ট এই কমিক স্ট্রিপের দুই কিশোর চরিত্র নন্টে-ফন্টে প্রথম দুই বছর হুবহু হাঁদা-ভোঁদার মতোই ছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালে এসে অনেকটাই বৈচিত্র্য আসে তাদের চরিত্রে। এছাড়াও যোগ হয় নন্টে-ফন্টের হোস্টেল জীবন, হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট আর কেল্টুদার মতো চরিত্র।
‘নন্টে ফন্টে’-র এই পরিবর্তনের পেছনে একটি বড় ভূমিকা ছিল মনোরঞ্জন ঘোষ রচিত ‘পরিবর্তন’ বইটির। ১৯৫০ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটি থেকে পরবর্তীতে বাংলা চলচ্চিত্র হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে সেই চলচ্চিত্রের হিন্দি রূপান্তরও হয়েছিল ‘জাগৃতি’ নামে। তবে বই আকারে ‘পরিবর্তন’ এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে ছিল বহুদিন। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৭২ সালে আবার যখন সেটির পুনর্মুদ্রনের সিদ্ধান্ত হয়, সেখানে অলঙ্করণের দায়িত্ব পান নারায়ণবাবু।
অলঙ্করণের সুবিধার্থে বইটি ভালো করে পড়েন তিনি। আর পড়তে পড়তেই তার মনে ধরে যায় গল্পের দুই বালকের হোস্টেল জীবনের কথা। এছাড়া ভালো লাগে হোস্টেলের মোটাসোটা ভোজনরসিক সুপারিনটেনডেন্ট কিংবা হোস্টেলের রাঁধুনি চরিত্রটিকেও, প্রায়ই যার রান্নাঘর থেকে চুরি যায় খাবার। মূলত এই বইয়ের মজার ও ভালোলাগার বিষয়গুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই নতুন সংযোজনগুলো তিনি ঘটিয়েছিলেন পরবর্তী সময়ের ‘নন্টে ফন্টে’ কাহিনীতে।
‘হাঁদা ভোঁদা’ যখন শুরু করেছিলেন, তখন বাংলা ভাষায় কমিকসের আবেদন প্রায় ছিল না বললেই চলে। অনেকটা একা হাতেই একটি জয়যাত্রার জন্ম দিয়েছিলেন নারায়ণবাবু, যা অব্যাহত থাকে তার পরের প্রতিটি সৃষ্টিতেই। বিশেষত ‘বাঁটুল দি গ্রেট’-এর মাধ্যমে বাংলাভাষী শিশুদের মাঝে কমিকপ্রীতির একটি অভূতপূর্ব জোয়ার আসে।
প্রথমদিকে কয়েকটি একই রকম চরিত্র নির্মাণের পর নারায়ণবাবু উদ্যোগী হন ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের চরিত্রদের নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে। যেমন- পটলচাঁদ চরিত্রটি (১৯৬৯ সালে সৃষ্ট) একজন জাদুকর, যে তার মেধা দিয়ে পাড়াতো সব সমস্যার সমাধান করে। বাহাদুর বেড়াল (১৯৮২ সালে সৃষ্ট) খুবই অদ্ভূত ও বুদ্ধিমান একটি প্রাণী, যা তার নিজের জন্যই বারবার কাল হয়ে দাঁড়ায়। ডানপিটে খাদু আর কেমিক্যাল দাদুর (১৯৮৩ সালে সৃষ্ট) সাথে অনেকটাই সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন মর্টি ও রিকের। বটুকলাল (১৯৮৪ সালে সৃষ্ট) নামের স্কুল শিক্ষকটি আবার খুবই পেটুক, যে সবসময় সুযোগ খোঁজে খাবার চুরির, কিন্তু ছাত্রদের কারণে তার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
কয়েকটি জনরা কমিকসের মাধ্যমেও আলোড়ন তোলেন নারায়ণবাবু। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গোয়েন্দা কৌশিক রায়কে নিয়ে তার নিজের লেখা ১৪টি গল্পের ধারাবাহিক, এবং দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘ইন্দ্রজিৎ ও ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ (১৯৭০)।
গোয়েন্দা কৌশিক রায়ের প্রথম আবির্ভাব ঘটেছিল ১৯৭৫ সালে ‘সর্পরাজের দ্বীপে’ গল্পের মাধ্যমে। সে ছিল ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা বাহিনীতে কর্মরত একজন সিক্রেট এজেন্ট। তার ডান হাত ছিল ইস্পাতের তৈরি, যেটি দিয়ে সে বুলেট, স্লিপিং গ্যাস ও ফায়ার লেসারের মতো অস্ত্রচালনা করত। এছাড়া মার্শাল আর্টেও সে ছিল খুবই পারদর্শী।
বাংলা সাহিত্যে এখনও কমিকশিল্পীদেরকে খুব একটা সম্মান দেয়া হয় না। কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক, গীতিকারদের থেকে অনেকটা দূরে প্রান্তিক অবস্থান তাদের। কিন্তু নারায়ণবাবু ভালোবাসেন নিজেকে কার্টুনিস্ট বা কমিকস আর্টিস্ট বলার চেয়ে শিশু সাহিত্যিক হিসেবেই পরিচয় দিতে। কারণ তিনি তো শুধু আঁকেনই নি, গল্প লিখেছেনও। বরং বলা যায়, একই সাথে গল্প লেখা ও আঁকার ‘ডাবল ডিউটি’ পালন করেছেন তিনি। ফলে সাহিত্যাঙ্গনে তার অবদান যে কোনো অংশে কম নয়।
এসব অবদানের স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন অনেক। একে একে মিলেছে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার আর পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বড় সম্মান বঙ্গবিভূষণ। একমাত্র ভারতীয় কার্টুনিস্ট হিসেবে ডি.লিটও অর্জন করেছেন তিনি।
অর্থাৎ জীবদ্দশাতেই অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন নারায়ণবাবু। তবু কি তার কোনো অতৃপ্তি আছে? মনে কোনো ক্ষোভ কি জন্মেছে এ কারণে যে তাকে অত বেশি মানুষ চেনে না, যত মানুষ চেনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিককে, কিংবা সত্যজিৎ রায়ের মতো চলচ্চিত্র নির্মাতাকে? তার সৃষ্টিগুলোকেও কি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া যেত না?
নারায়ণবাবুর জীবনীকার শান্তনু ঘোষ বলেন:
“নারায়ণবাবুর কাছে কমিক আঁকা ছিল একটা নয়টা-পাঁচটা চাকরি করার মতো। তিনি এটাকে কখনোই খুব মহান কোনো অর্জন হিসেবে দেখেননি, যেটির কোনো প্রামাণ্য দলিল বা সম্মানের প্রয়োজন। প্রাপ্য স্বীকৃতিটা তার জীবনে অনেক দেরি করে এসেছে। কিন্তু তাই বলে তিনি কখনো নিজের রাস্তা থেকে সরে গিয়ে সেসবের পেছনে ছোটেননি।”
অবশ্য নারায়ণবাবুর নিজের মনে কোনো অসন্তোষের জায়গা না থাকলেও, শান্তনুবাবুর মনে যথেষ্টই ক্ষোভ রয়েছে, কেননা সম্প্রতি ‘নন্টে ফন্টে’র ৫০ বছর পূর্তিটাও অনেকটা নীরবে-নিভৃতেই হয়েছে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংগঠনই এগিয়ে আসেনি এই বিশেষ মাইলফলক উদযাপন করতে।
সত্যিই, কাগজে-কলমের স্বীকৃতির বাইরে আরো কিছুও বোধহয় একজন সৃষ্টিশীল মানুষের প্রাপ্য, যা থেকে ৯৫ বছরের নারায়ণবাবু আজ বঞ্চিত। তাই তো শিবপুর রোডে শিবপুর হিন্দু গার্লস স্কুলের কাছে একটি দোতলা বাড়ির একতলায় আজকাল একাকীই কাটছে তার জীবনের শেষ দিনগুলো।