অনলাইন ডেস্ক:
নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল চীনের উহান। অভিযোগ রয়েছে, তাদের কোনো ল্যাব থেকেই এ ভাইরাস ছাড়া হয়েছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু থেকেই চীনকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে হয়েছে। কাজটি করোনা মোকাবেলার চেয়েও কোনো অংশে কম কঠিন হচ্ছে না। নিজেদের ঘর সামাল দেয়ার পর চীন এখন বিশ্বের অনেক দেশকে সংকট মোকাবেলায় সাহায্য করছে। তবু প্রশ্ন থেমে নেই। চীনই কি এই মহামারীর নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে?
শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চীন। এশিয়া ও আফ্রিকার মতো অনুন্নত মহাদেশের বহু দেশেই তারা বিপুল পরিমাণ মেডিকেল সরঞ্জামাদি পাঠিয়েছে। তবে চীনের জন্য সমালোচনার ভাগটাও কম ভারী নয়। বিশেষ করে করোনাভাইরাস যখন প্রথম শনাক্ত হয় তখন তারা এটি নিয়ে লুকোচুরি করেছে এবং বাকি বিশ্ব থেকে গোপন রাখতে চেয়েছে। কাজটির কারণে তাদের জন্য সমালোচনা জুটেছে।
আবার চীনের প্রকাশ করা তথ্য নিয়েও অনেকের সন্দেহ রয়েছে। ১৭ এপ্রিল চীনা কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, উহানে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ২৯০ জন বাড়বে। তার মানে, আগে প্রকাশিত সংখ্যার ৫০ শতাংশ বেশি মানুষ মারা গেছে হুবেই প্রদেশের এ শহরে।
চীন বিশ্বের চোখে ‘ভিলেন’ হয়ে থাকতেও ইচ্ছুক নয়। সমালোচনা যা-ই আসুক কূটনৈতিকভাবে তা মোকাবেলা করছে এশিয়ান জায়ান্টরা। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া। এছাড়া চীনের কূটনীতিকরা টুইটার, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে তাদের বার্তা বিশ্ববাপী ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন।
এ মাসের শুরুর দিকেই গণমাধ্যমে নেতিবাচক একটি খবর আসে। বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সময় দক্ষিণ চীনে অবস্থানরত আফ্রিকান নাগরিকরা চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপেক্ষিত, এমনকি বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন। এ খবরে নড়েচড়ে বসেন চীনা কর্মকর্তারা। কেননা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকা মহাদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ওই মহাদেশটির রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সুসম্পর্ক তৈরি করেছে চীন। এখন এমন নেতিবাচক খবরে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, যা কিনা ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবেও তাদের ক্ষতি করতে পারে। চীন অভিযোগ তুলেছে, চীনের সঙ্গে তাদের আফ্রিকান মিত্রদের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে এটি পশ্চিমা বিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি অপপ্রচার।
চীনে বর্ণবাদ নিয়ে সিএনএনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় যে খবর এসেছে, সে ব্যাপারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই দোষারোপ করেন। তার কথায়, ‘করোনাভাইরাস মহামারীর সময় এশিয়ান আমেরিকানরা বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন, এ ব্যাপারে কী বলবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর?’
এই তো কিছুদিন হলো হুয়া ও অন্য কিছু চীনা কর্মকর্তা টুইটারে নাম লিখিয়েছেন, যাদের কিনা দীর্ঘদিন ধরেই নিষিদ্ধ করে রেখেছিল চীনা সরকার। গোটা বিশ্বের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার প্রয়াসে তারা এখন এ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিকে ব্যবহার করতে চাইছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা ঝাও লিজিয়ান টুইটার ব্যবহার করে নিয়মিতই পশ্চিমা বিশ্বকে ঝাঁজালো জবাব দিচ্ছেন। বলা বাহুল্য, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে এই ঝাও শক্তভাবেই পশ্চিমা মিডিয়াকে সামাল দিয়ে চলেছেন।
চীনা কূটনীতিকরা চিরাচরিতভাবেই বাইরের বিশ্বের কাছে পরিচিত শান্ত ও ধীরস্থির হিসেবে। এ নিয়ে দেশটির ট্যাবলয়েড দ্য গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, ‘চীনা কূটনীতিকরা একটি সময় চীন কিংবা বহির্বিশ্বে পরিচিত ছিলেন রক্ষণশীল হিসেবে। বিশ্বব্যাপী আমাদের কূটনীতিক ও জনগণকে রহস্যময় হিসেবে দেখা হয়। এখন সময় এসেছে পশ্চিমা বিশ্বের অযাচিত সমালোচনার যথোচিত জবাব দেয়ার।’
সূত্র: সিএনএন ও বিবিসি
(ভোরের আলো/ফআ)