২০০৯ সালে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সামিয়া খাতুন তার গবেষণা কাজের জন্য ব্রোকেন হিল এলাকায় যান। তার গবেষণার বিষয় ছিল, অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষিণ এশিয়ানদের আগমনের ইতিহাস। তিনি ওই মসজিদের ভেতরের ‘পবিত্র গ্রন্থের’ কথা জানতে পারেন। সামিয়া স্থানীয় আদিবাসীদের নিয়ে প্রবেশ করেন ওই মসজিদে। তখনও তিনি জানেন না যে, তার জন্য অপেক্ষা করছে ইতিহাসের মহাবিস্ময়কর এক অধ্যায়। তিনি ধীরে ধীরে বাক্সটি খোলেন। গ্রন্থের ওপরের কাপড়টি সরিয়ে তিনি চিৎকার করে ওঠেন। সামিয়া খাতুন অস্ট্রেলিয়ার এসবিএস রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি মা বলে এত জোরে চিৎকার দিয়েছিলাম যে আমার সঙ্গে থাকা আদিবাসীরা ভয়ে কেঁপে উঠেছিল।’ সামিয়া দেখলেন, গ্রন্থটি কোরআন শরীফ নয়। স্পষ্ট করে বাংলায় লেখা ‘কাসাসুল আম্বিয়া’। ওই গ্রন্থের সূত্র ধরেই সামিয়া আবিস্কার করেন অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম বাঙালির পদচিহ্ন।
এখন সমগ্ৰ অস্ট্রেলিয়াতে বাস করছেন প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি। তারা তাদের নিজস্ব কমিউনিটিকে পরিণত করেছেন আলোকিত আরেকটি বাংলাদেশে। বৈশাখী মেলা, পিঠা উৎসব, বসন্ত বরণ, শহীদ মিনার নির্মাণ, বইমেলা আর বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনের মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করতে চান যে, তারা যেখানেই যান যতো দূরেই যান তারা বাংলাদেশি। ব্যক্তি ও সমষ্টিগতভাবে তারা একজন আরেকজনের খুব কাছের।
করোনাভাইরাসের এই সংকটকালে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা আবারও প্রমাণ করলেন, তারা বিচ্ছিন্ন কোনো সত্তা নন। তাদের একটিই পরিচয়, তারা সবাই বঙ্গোপসাগর পাড়ের এক ব্যথিত জনপদ থেকে এসেছেন।
অস্ট্রেলিয়াতে কোনো বাংলাদেশি কোরোনায় আক্রান্ত না হলেও অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে অস্থায়ী ভিসায় বাস করা শিক্ষার্থী ও শরণার্থীদের অবস্থা খুব সংকটাপন্ন। এদের অধিকাংশই এখন চাকরিহীন। এই প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে তাদের ভবিষৎ এখন অনিশ্চিত।
তবে আশার কথা, এই বিপুল সংখ্যক বিপদাপন্ন বাংলাদেশিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশি সংগঠন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি-মানুষ। চাকরিহীন বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরি করে তারা চেষ্টা করছেন সবার ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পৌঁছে দিতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় বাংলা মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে নিয়মিত। উদ্যোক্তারা বলছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, একজন বাংলাদেশিও যেন অভুক্ত না থাকেন।’
যে সব সংগঠন ও ব্যক্তি এ ব্যাপারে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-আওয়ামী লীগ, বিএনপি, মাল্টিকালচারাল সোসাইটি, চ্যারিটি ফর লাইফ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, স্বদেশ বার্তা, স্বাধীন কণ্ঠ, সিরাজুল হক, গাউসুল আলম শাহজাদা, শাহে জামান টিটো, মনিরুল হক জজ, ফজলুল হক শফিক, জাকির আলম লেনিন, মেহেদী হাসান কচি, আমিনুল ইসলাম রুবেল, মোবারক হোসেন, আনিসুর রহমান রিতু, হাসান সিমুন রবিন, মোসলেউর রহমান খুসবু, মোহাম্মদ কালাম, আল নোমান, তারিক ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। এর বাইরেও আরও অনেকেই নানাভাবে সহায়তা করছেন। তবে তারা প্রচারের বাইরে থাকতে চান।
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার সুফিউর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশ সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীদের সাহায্যে কোনো ভূমিকা রাখছে কিনা? তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে আমরা অবহিত করেছি। আর এখানে যে সব বাংলাদেশি সংগঠন আছে তাদেরকে আমি অনুরোধ করেছি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক