অনলাইন ডেস্ক:
বিশ্বজুড়ে নভেল করোনা ভাইরাসের মহামারী চলছে। আর এর বিস্তার ঠেকাতে দেশে চলছে লকডাউনসহ নানা বিধি-নিষেধ। কার্যত মিল কারখানা, অফিস আদালত, পরিবহন সব কিছুই বন্ধ। এতে লাখ লাখ লোক ক্ষুধার জ্বালায় ভুগছে। গতকাল সংবাদমাধ্যম বিবিসি ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে এ প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, করোনার প্রকোপের চেয়ে কি ক্ষুধার কারণে বেশি মানুষের মৃত্যু হবে?
ভারতে কয়েক লাখ শ্রমিক নিজের এলাকা ছেড়ে ভিন্ন এলাকায় গিয়ে চলমান লকডাউনে আটকা পড়েছে। তারা চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। সম্প্রতি মুম্বাইয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ট্রেন চালু হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে হাজার হাজার লোক ‘সামাজিক দূরত্বের’ বিধি তোয়াক্কা না করে ভিড় জমায়।
এর পর তারা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায় যে কোনো উপায়ে তাদের যেন বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠিপেটা করতে হয়। একই সময় ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের সুরাত শহরে কাপড়কল শ্রমিকরা বাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তায় নামে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে রাজধানী দিল্লিতে একই বিপাকে পড়েছে শ্রমিকরা।
সেখানের শ্রমিকরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা গত তিন দিন কিছুই খায়নি। এমন লাখ লাখ শ্রমিক যারা একটু ভালো থাকার জন্য শহরে যান তাদের এখন না আছে কাজ, না আছে অর্থ। বিবিসি বলছে, আনুমানিক ৪০ মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিক রয়েছে ভারতে। এদের প্রত্যেককে সরকারি ত্রাণ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে হেঁটে শতশত মাইল পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।
এদিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা আশঙ্কা করছে করোনার প্রভাবে বড় ধরনের খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। এতে কয়েক কোটি লোক প্রাণ হারাতে পারেন। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, করোনা মহামারীর কারণে পর্যটন থেকে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া, রেমিট্যান্সে ধস, ভ্রমণ এবং অন্যান্য কার্যক্রমে নানামাত্রিক নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট অভিঘাত চলতি বছর নতুন করে আরও ১৩ কোটি মানুষকে তীব্র ক্ষুধার্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
এদিকে ভারতে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ১১১। এর মধ্যে ৬৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এ ভাইরাসে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে এখন পর্যন্ত এটি একদিনে এ ভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। তবে গত কয়েকদিন ধরে সুস্থ হয়ে উঠা মানুষের সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
(ভোরের আলো/ফআ)