করোনাভাইরাস মোকাবিলা ইস্যুতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এর মধ্যে রয়েছে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য, মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় না করা, মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরই যোগ্য-অযোগ্য বিবেচনা না করে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে পদায়ন-পদাবনতি, মন্ত্রণালয়ের সভা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে না করে ডিজির বাসভবনে করা, মানসম্মত মাস্ক সরবরাহ না করা, সর্বোপরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত সমন্বিতভাবে না নেওয়া।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, যারাই করোনাভাইরাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বা ফোনে বা অন্য কোনো বিকল্প মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন তারাই মৌখিক বা চিরকুট ধরিয়ে তাকে এ দুজনের নামে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। মন্ত্রীর ছেলের নামেও নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা পড়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও মন্ত্রী ও ডিজির নামে অভিযোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন খাতের প্রধানদের সঙ্গে যখনই আলাপ-আলোচনা করছেন দেখা যায় তারা সুযোগ করে অভিযোগ আকারে কিছু না কিছু বলছেনই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, সব অভিযোগ আমলে না নিলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনেক অবহেলা রয়েছে এটা বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনা। তাই কিছু বিষয়ে তদন্ত চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মন্ত্রী ও ডিজিকে নিয়ে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব সমালোচনা চলছে তাও মনিটরিং চলছে। এগুলোও নজরে আছে শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, মন্ত্রী ও ডিজিকে নিয়ে অভিযোগ যারাই দিচ্ছেন তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। তবে কাউকে কাউকে বলেছেন, ‘এত অনিয়ম আমাকে আগে জানাওনি কেন?’ ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ওই নেতা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের হ-য-ব-র-ল অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত। তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখনই হয়তো ব্যবস্থা নিতে চান না। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বা কোনো বৈরী অবস্থায় কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর হয়তো ওই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় ঠিকই আনবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি বছর ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তখন তারা শেখ হাসিনাকে তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, এত হ-য-ব-র-ল অবস্থা জানতেন না প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি নিজের হস্তক্ষেপে দুরবস্থা কাটিয়ে তুলতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, অন্যসব মন্ত্রণালয়ের চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সব কাজই প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখভাল করছেন। প্রতিদিন এ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে সরকারপ্রধান নিজে ফোন করে কথা বলছেন; নানারকম দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার স্বার্থে তাদের প্রয়োজনে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের ডাক্তারদের বড় একটি অংশ যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ডিজির ওপর ক্ষুব্ধ তাও আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যেখানে ডাক্তারদের অগ্রাধিকার থাকার কথা সেখানে ডাক্তারদের বেশি নিগৃহীত হতে হয়েছে মন্ত্রী আর ডিজির কারণে। তাই এ পরিস্থিতিতে ডাক্তারদেরও ক্ষোভ রয়েছে। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার যে অভিযোগ উঠেছে সেটা আসলে মন্ত্রী আর ডিজির আধিপত্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। যদিও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরে সেটা আর নেই।
এদিকে গতকাল সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকেও এন-৯৫ মাস্কের বক্সে কোন মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।