ভোরের আলো ডেস্ক:
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের (কভিড-১৯) টেস্টের হার সবচেয়ে কম। এদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি এ দেশে।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর দুইটা পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণেই বাংলাদেশের এমন অবস্থা বলে দাবি করছেন স্বাস্থ্য বিশ্লেষকেরা। তারা বলেছেন, সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, করোনার লক্ষণ আছে এমন ব্যক্তিদের টেস্ট করা হচ্ছে। আর আক্রান্ত রোগীর অনুপাতে মৃত্যু সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনান্ত করা হয়। ওই দিন তিন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। গত ১৮ মার্চ দেশে প্রথম এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) করোনা বিফ্রিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫০ জন। নতুন শনাক্ত হয়েছেন ২১৯ জন। মোট শনাক্ত এক হাজার ২৩১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তে টেস্ট হয়েছে এক হাজার ৭৪০টি নমুনা। এখন পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৮৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৯ জন। আক্রান্তের নিরিখে বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর প্রতি ১০ লাখে এ দেশে টেস্টের সংখ্যা ৮০। প্রতি ১০ লাখে মৃত্যুর সংখ্যা ০ দশমিক ৩ শতাংশ।
ভারতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৩৮৭। প্রতি ১০ লাখ মানুষে টেস্টের সংখ্যা ১৭৭। আক্রান্তের নিরিখে মৃত্যু হয়েছে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ মানুষের। প্রতি ১০ লাখে মৃত্যু হয়েছে ০ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের।
পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৯৮৮। দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৭ জন। প্রতি ১০ লাখে টেস্টের সংখ্যা ৩৩২। আর আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দুই শতাংশ। প্রতি ১০ লাখে মৃত্যু হয়েছে ০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তুলনামূলকভাবে উন্নত বলে গণ্য করা হয়। দ্বীপরাষ্ট্রটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৩, মারা গেছেন সাতজন। এ দেশে ১০ লাখ মানুষে টেস্টের সংখ্যা ২২৩। আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে মৃত্যুর হার ৩ শতাংশের খানিকটা বেশি।
এই ভয়াবহ ভাইরাস হিমালয়–কন্যা নেপালকে পর্যদুস্ত করতে পারেনি তেমন। দেশটিতে আক্রান্তের পরিমাণ ১৬। প্রাণহানির কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। ১০ লাখ মানুষে টেস্টের সংখ্যা ২১৬।
সাড়ে সাত লাখ মানুষের ছোট দেশ ভূটানে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ। এ দেশেও কোনো মৃত্যু নেই করোনায়। আর ১০ লাখে টেস্টের সংখ্যা এক হাজার ৫১১।
শত শত দ্বীপের দেশ মালদ্বীপে আক্রান্ত হয়েছে ২১ জন। মাত্র প্রায় চার লাখ মানুষের এ দেশেও কোনো মৃত্যু নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে টেস্টের এ সংখ্যা সর্বোচ্চ, প্রতি ১০ লাখের হিসাবে পাঁচ হাজার ৩৬৩।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আফগানিস্তানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭১৪। মারা গেছেন ২৩ জন। তবে এ দেশের টেস্টের সংখ্যা ওয়ার্ল্ডোমিটারে নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, দক্ষতার অভাবে টেস্ট করা হচ্ছে না। আর মৃতের সংখ্যা বেশি হওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সংকট। দুটো ক্ষেত্রেই সংকটের একটি অভিন্ন কারণ আছে। আর তা হলো, সমন্বয়হীনতা। লোকবলের সমন্বয়হীনতা ও সুযোগ–সুবিধার সমন্বয়হীনতা দুইই আছে।
এ বিষয়ে ভিন্ন মতো প্রকাশ করেছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী। তিনি বলেন, করোনা আছে এমন সন্দেহ করা (সাসসপেক্টেড কেস) যত ব্যক্তি পাওয়া যায় তাদেরই সকলেরই নমুনা এনে পরীক্ষা করি। কেস বেশি হলে টেস্ট বেশি হবে, কম হলে কম হবে। আমাদের কেসের সংজ্ঞায় যারা পড়ে তাদেরই টেস্ট করি। আগে যেমন আমরা নির্দিষ্ট করেছিলাম যে বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের টেস্ট করা হবে। এখন এভাবে নির্দিষ্ট করে করা হচ্ছে না। কারও ভেতর লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলেই আমরা টেস্ট করছি।
মৃত্যুর বিষয়ে মীরজাদির সেব্রিনা বলেন, এ নিয়ে মন্তব্য করা (টু আরলি টু কমেন্ট) খুব বেশি আগাম বলা হয়ে যাবে। অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে আমাদের এ সংখ্যা কম। তবে রেট কম হলেও একটি মৃত্যুও কাম্য না। যদিও প্রতিটি কেস বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে মৃত্যুর তুলনামূলক হার কমে আসছে। শুরুতে মৃত্যুর সংখ্যা আক্রান্তের সংখ্যার ১০ শতাংশ ছিল। সেখান থেকে কমে এখন প্রায় পাঁচ শতাশের কাছে আছে।
বাংলাদেশে মৃত দেহের নমুনা নিয়েও পরীক্ষা করা হয়েছে। আর এ কারণেই অন্য দেশগুলোর তুলনায় মৃত্যু বেশি বলে জানান মীরজাদী।
(ভোরের আলো/ফআ)