সেবার বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাসের তৎকালীন রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও যোগ দিবেন এবং আমাদের একটা টিমের সঙ্গে উনার মিটিং হবে।
যাওয়ার আগে মন্ত্রীর সিভি খুঁজে বের করে পড়লাম। নাম: ডা. দীপু মনি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস, যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে মাস্টার্স, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স, হার্ভার্ড ও জন্স হপকিন্স থেকে “সমঝোতা ও দ্বন্দ্ব নিরসন” বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করা।
জন্স হপকিন্স থেকে পাবলিক হেলথে মাস্টার্স করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী না হয়ে কেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আমার মাথায় সেদিনও ঢোকেনি, আজও ঢোকেনা!!
রাষ্ট্রদূত যখন অতিরঞ্জিত করে আমাকে “পানি বিশেষজ্ঞ ও তরুণ গবেষক” হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখন মন্ত্রীর স্নেহবৎসল বাকপটুতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। এরপর তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুনে বেশ প্রশংসা করলেন। আমাদের জার্মান টিমের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে পানি বিষয়ক একটি প্রকল্পের সম্প্রসারণ ও একটি ‘টেস্ট কিটের’ ফিল্ড টেস্টিং করার অনুমতিপত্র। পরবর্তীতে ড. হাসান মাহমুদের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সেই প্রোজেক্ট টিমের কি অবস্থা হয়েছিল তা আর না বলি!!
তো, প্রথমবার মন্ত্রী হওয়ার পর লন্ডনস্থ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একবার দীপু মনিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তুমি সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে গেলে কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ধারণা ছিল, আমাকে স্বাস্থ্য বা আইন প্রতিমন্ত্রী করা হবে। কিন্তু নেত্রীর ইচ্ছায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হয়েছে।“
করোনা যে কতোটা ছোঁয়াচে ও কিভাবে সংক্রমণের ‘চেইন ব্রেক’ করতে হয় তা বুঝতে ও বুঝাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ “জাহিদ পিপিপি মালিক” যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সেই ক্যাবিনেটে ডা. দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী! তাও তিনি এসেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের পরীক্ষায় নকল ঠেকাতে ক্ষমাহীন ব্যর্থতায়। মন্ত্রী নাহিদের একটি উক্তি ছিল “আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়া খাবেন।“ এরও আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন মো: নাসিম, আইসিইউ বাড়ানোর দায়িত্বের বদলে তাকে “বিএনপি ও খালেদা জিয়া বিষয়ক মন্ত্রী” বানালেই বেশি মানাতো!! আর সাহারা খাতুনদের কথা না বলি!!
নো ওয়ান্ডার, দেশের মেরুদণ্ড “শিক্ষা” আর সকল সুখের মূল “স্বাস্থ্যের” কেন আজ এই ভগ্নদশা!
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর জুনাইদ পলককে আপনি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে বললেন বাংলাদেশে একটা সিলিকন ভ্যালি বানাতে আর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পিএইচডি কাউকে বানালেন গবাদি-পশুপালন ও সমবায় মন্ত্রী, তাহলে দেশের দশা কেমন হবে?
আমি নিশ্চিত, করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৈরি হয়নি কোনো ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টাস্কফোর্স, যেখানে থাকতে পারতেন দেশসেরা ১০ জন ভাইরোলজিস্ট, এপিডেমিওলজিস্ট, দেশসেরা ১০ জন ডাক্তার, জরুরী সেবাদানকারী দলগুলোর চিফ, তাদের কি কি প্রয়োজন তার লিস্ট, সঙ্গে পুলিশ-আর্মির চীফ, বিদেশফেরতদের বিষয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান, করোনা-অভিজ্ঞতা জানতে চীনের রাষ্ট্রদূত, ভিডিওর মাধ্যমে উহানে বা চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, উহানের মেয়র..। খুব কি কঠিন কাজ?
তাহলে হয়তো এই “সরকারি ছুটির ঈদ উৎসব” আর তেলের ড্রামে “আদম পরিবহন” দেখতে হতো না!
অনেকেই বলতে পারে দেশের সবাই দুর্নীতিবাজ, কেউ কথা শোনেনা, দূরে থেকে এসব বলাই যায়!! মানলাম। আমার, আপনার কথা শোনেনা, কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার কথা, তাও যিনি কিনা “হেড অফ দ্যা ষ্টেট”, তার কথা কেউ শুনবে না এটা আমাকে রিমান্ডে নিলেও মানবো না। চীনের প্রধানমন্ত্রীর কথা কেউ শোনেনা, ভাবতে পারেন? সম্ভব? আওয়ামী লীগে এবং বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কথার উপর কথা কেউ বলতে পারবে? আছেন কোনো ভাই-ব্রাদার?
দুর্নীতি দমন কমিশনে গিয়ে উনি যদি ঘোষণা দিতেন যে “১০০ হাত মাটির নীচ থেকে হলেও সব দুর্নীতিবাজ, ত্রাণচোর ধরে চাকুরীচ্যুত এবং জেলে তোলেন, বাকিটা আমি দেখছি।“ দেখতেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি কমে কি না!!! সিস্টেম কোনো দেশেই আমজনতা তৈরি করেনা, তাদের সেই ক্ষমতা নেই। সিস্টেম তৈরি ও প্রয়োগের একক ক্ষমতা শুধুই সরকারের, হেড অফ দ্যা ষ্টেটের, লিডারের!! ওভার এন্ড আউট।
“আমি মন্ত্রী থাকতে আপনাদের কোনো চিন্তা নেই” না বলে কোনো মন্ত্রী যখন বলে “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে আমাদের চিন্তা নেই”, এর অর্থ হল সেই মন্ত্রী কোনো দায় নিতে রাজি না। ২০ বছর পর কেউই বলবে না যে “জাহিদ মালিকের” আমলে করোনা-দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, বরং চিবিয়ে চিবিয়ে “শেখ হাসিনার” কথাই বলবে। ক্রিস্টাল ক্লিয়ার।
“ইয়েস স্যার”, “ইয়েস ম্যাডাম”, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী” বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলাই যদি হয় মন্ত্রিত্ব পাওয়ার এবং টিকিয়ে রাখার একমাত্র যোগ্যতা, তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো বাংলাদেশের অন্য সেক্টরও দীর্ঘমেয়াদী আইসোলেশনে চলে যাবে শীঘ্রই।
জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে করোনায় আক্রান্ত, উপদেষ্টা যেখানে ফুসফুস কেটে ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে করোনা তাড়ানোর পরামর্শ দেয়, সবথেকে বড় সাধক কৃষককে যেখানে ৫% সুদের বেড়াজালে বন্দীর আহবান জানানো হয়, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।
করোনার তুলতুলে স্পর্শ আমাদের পশ্চাৎদেশ ছুঁয়ে না দিলে আমরা অনেক কিছুই হয়তো দেখতে পারতাম না। #Leadership #পার্থক্যটা_পরিষ্কার
Khaja Rahman
Senior Research Scientist at Helmholtz Centre for Environmental Research 12/04/2020, Germany