মন্ট্রিয়ল ব্যুরো : বর্তমান সময়ে পৃথিবী খুবই ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোভিট-১৯ তথা করোনা ভাইরাসের জন্য পৃথিবীবাসী আজ অবরুদ্ধ। মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ। অনেক স্বাস্থকর্মী এ যুদ্ধে হারিয়ে যাচ্ছেন চিরতরে। বর্তমান এ সংকটে আরেক সম্মুখ যোদ্ধাদের অবদান আমরা সাধারণত অনুধাবন করতে পারি না। পৃথিবী ব্যাপী সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ সম্মুখ যোদ্ধারা। এ সাপ্লাই চেইনের যোদ্ধারা যদি ঘরে চলে যান তবে পৃথিবী স্থবির হয়ে যাবে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের যুদ্ধ এক সময় শুধু শেষ হবে না, ব্যর্থ হয়ে পড়বে। দেশে দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে যাবে কয়েক দিনের মধ্যে। সব সময়ের এই আনসাং হিরোরা আড়ালেই থেকে যান। আসুন না একটু জানি কুইবেকের এক আনসাং হিরোর কথা।
বাংলাদেশী মালিকানাধীন কুইবেকের কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানী ”Sameday Express” মহামারীর এ সময়ে গর্ব করার মতো কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী রনি মালিকের সাথে কথা হয় বর্তমান কঠিন সময় নিয়ে। তিনি জানান, গত এক মাস আমরা খুব কঠিন সময় পার করছি। প্রতিদিনই আমাদেরকে ১৮ ঘন্টা এবং কোনদিন ২৪ ঘন্টা অপারেশন চালাতে হচ্ছে। এমনকি ইস্টার উইকেও কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে । আমার প্রতিষ্ঠানে ২০ জনের উপর ড্রাইভার কাজ করে যাচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। বর্তমানে ৯০% ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসীসহ রোগীদের বেলায়। বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকের ব্লাড স্যাম্পল পরিবহন ছাড়াও মন্ট্রিয়লের ২০টির মতো ফার্মেসীর পণ্য যথাসময়ে পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো ডেঞ্জারাস গুডস বিমানে পরিবহণ যেমন ব্যয়বহুল এবং ব্যাপক রেগুলেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বিভিন্ন শহরে আমাদের টিডিজি সার্টিফাইড ড্রাইভার দিয়ে এসব ডেঞ্জারাস গুডস অন টাইমে ডেলিভারি দিয়ে থাকি। এমনকি শনিবার-রবিবারসহ সরকারী ছুটির দিনেও। এই দুর্দিনে নিউজার্সিতে ঔষধের ডেলিভারি দিয়ে আসি। সরকার থেকে আমরা কোন প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছি না। সাধারণত স্টেট ইমার্জেন্সীতে Hazard Pay দেয়া হয়। সেটা আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে পেলেও আমরা পাচ্ছি না। কুইবেকের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়তি প্রনোদনা পেলেও আমরা বঞ্চিত। তারপরও মানবিকতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শুধু একটু কল্পনা করুন, এই সাপ্লাই চেইনের কর্মীরা যদি মেডিকেল ইকুপমেন্ট, মাস্ক, পিপিই, গ্লোভস ডেলিভারি না দেয় কি অবস্থা হবে ? পুরো সিস্টেম অসহায় হয়ে পড়বে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এতে লাভবান হচ্ছে কেবল বড় বড় কর্পোরেশনগুলো। ছোট্ট ব্যবসায়ীরা কিছুই পাচ্ছেন না। সরকার সহযোগিতার হাত না বাড়ালেও ব্যবসার এথিকস থেকে এবং সামাজিক দায়বদ্বতা থেকে আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মন্ট্রিয়ল জুইস হাসপাতালে ১৮০০০ সার্জিকাল মাস্ক প্রদান করি।
তিনি আরো জানান, বর্তমান এ দুর্যোগে মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াতে হবে। তাহলেই সম্ভব তা কাটিয়ে উঠা। এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য। একই সাথে সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে সেটা যেন আমরা অসৎ ভাবে ব্যবহার না করি। আপনারা আমাদের জন্য ঘরে থাকুন, আমরা আপনাদের জন্য রাস্তায় আছি।