ভোরের আলো, ঢাকা অফিস: বাংলাদেশে করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর পরই বিভিন্ন দেশ এখানে থাকা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে কানাডাও। এরই মধ্যে কানাডার ‘রেজিস্ট্রি অব কানাডিয়ানস অ্যাবরোড’-এ বাংলাদেশে থাকা তিন হাজার কানাডিয়ান নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। ফলে ঢাকা ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন এসব কানাডীয়। ঢাকাস্থ কানাডীয় হাইকমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বাংলাদেশে থাকা ‘দ্য অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর। এ নিয়ে সরকারের কাছে দফায় দফায় বৈঠকের পাশাপাশি চিঠিও লিখেছে দেশগুলোর ঢাকার দূতাবাস। শুরুতে নিজ নাগরিকদের ফেরাতে নিয়মিত ফ্লাইটের সুযোগ চাইলেও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বিশেষ চার্টার ফ্লাইটে নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এর মধ্যে কানাডাও ছিল। বর্তমানে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চার্টার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছে দেশটি। আর এজন্য বাংলাদেশে থাকা তিন হাজার কানাডীয়র মধ্যে কতজন নিজ দেশে ফিরতে চান তা নিরূপণ করছে দেশটি।
বাংলাদেশে থাকা কানাডীয়দের ফেরানো বিষয়ে দেশটির নেপিয়ানের সংসদ সদস্য চন্দ্র আরইয়ার কাছে ই-মেইল করেছিলেন এক বাংলাদেশী কানাডিয়ান। তার উত্তরে লিবারেল পার্টি থেকে পাস করা ওই সংসদ সদস্য বলেন, বাংলাদেশে যেসব কানাডীয় আটকে পড়েছেন, তাদের বেশকিছু বাংলাদেশী কানাডিয়ান বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। এরই মধ্যে বাংলাদেশে থাকা তিন হাজার কানাডিয়ান ‘রেজিস্ট্রি অব কানাডিয়ানস অ্যাবরোড’ নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে এমন কানাডিয়ান রয়েছেন, যাদের বাড়ি বাংলাদেশে এবং কেউ কেউ এখনই ফিরবেন না। কারা বাড়ি ফিরতে চাচ্ছেন তার পরিষ্কার চিত্র পাওয়ার জন্য ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশন সংখ্যা নিরূপণ করছে, যার ওপর ভিত্তি করে আমরা ফিরতি ফ্লাইট পরিকল্পনা করতে পারি। যদি কেউ এখনো ‘রেজিস্ট্রি অব কানাডিয়ানস অ্যাবরোড’-এর মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন না করে থাকেন, তবে তাদের জানিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। কারো যদি আর্থিক সমস্যা থাকে, তবে কানাডা সরকার সুদবিহীন ৫ হাজার ডলার ঋণ দেবে বলেও জানান এ পার্লামেন্টারিয়ান।
তিনি বলেন, বাড়ি ফিরতে শুধু ঢাকা থেকে কানাডা যাওয়ার এক পথে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। যখন ফ্লাইট নির্ধারণ করা হবে, তখন নিবন্ধনকারীরা এ বার্তা পেয়ে যাবেন। এজন্য তাদের প্রতিনিয়ত ই-মেইল দেখাটা জরুরি। এর বাইরে যদি কোনো ইস্যু চলে আসে, তবে এটি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার নজরে আনা যেতে পারে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, কানাডা তার দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। তবে তাদের চার্টার ফ্লাইট কবে আসবে বা কতজন ফিরে যাবেন এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য এখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে কানাডা সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত তিন হাজার জন নিবন্ধন করেছেন। না জানার কারণে অনেকেই এখনো নিবন্ধন করেননি। ফলে সবার নিবন্ধন সম্পন্ন হলে বর্তমানে ঠিক কতজন কানাডিয়ান বাংলাদেশে রয়েছেন, সে সংখ্যাটা জানা যাবে। আর তাদের সবাই ফিরতে না চাইলেও বড়সংখ্যক কানাডায় ফিরতে চান। প্রত্যাবাসনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হলে সেই সংখ্যাটিও জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজারের ওপর বিভিন্ন দেশের নাগরিক বাংলাদেশ ছেড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে দুটি চার্টার ফ্লাইট পরিচালনা করে ৫৯১ জন নাগরিককে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। আরো একটি ফ্লাইটে করে নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিজ নাগরিকদের ফেরাতে চাইলেও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে চার্টার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছে। ১০ এপ্রিল বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়েছেন জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫টি দেশের নাগরিকরা। ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট গিয়েছে। জাপানি ও রাশিয়ানরাও বাংলাদেশ ছেড়েছেন। এছাড়া অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও বাংলাদেশ ছেড়েছেন। অনেকে ছেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন।