লিখেছেন উজ্জ্বল দাশ
করোনার সংক্রমণ থেকে জনগণকে রক্ষায় মরিয়া সব দেশ। এই ভাইরাস মোকাবেলায় প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তার পাশাপাশি যুদ্ধ জয়ের মূল অস্ত্রটিও জনগণের হাতে। আর সেটি হলো নিজে বাড়িতে থেকে নিরাপদ থাকা। এবং প্রতিবেশীদের নিরাপদে রাখা।
বাড়িতে নিরাপদে থেকেও মানুষজন নানান সমস্যার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে বয়স্করা। করোনার ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে কানাডার টরন্টোসহ আশপাশের এলাকায় অসুবিধায় থাকা লোকজনক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস কমিউনিটি সাপোর্ট সার্ভিসেস ( সিসিএসএস) নামের টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সামাজিক উদ্যোগ।
কানাডার বাইরে থেকে আসার পর সবার জন্য ১৪ দিনের সেলফ-আইসোলেশন বাধ্যতামূলক। সেই সময়টায় আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই , ওষুধ ও খাবার সরবরাহ করছে সিসিএসএসের স্বেচ্ছাসেবীরা।
মোটকথা, করোনার কারণে নানাভাবে বিপদের সম্মুখীন, খাদ্যের অপ্রতুলতা, বয়স্কদের সহায়তা, কানাডায় পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে সা্হস জোগানোর কাজ করে চলছেন উদ্যোগটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিবেদিত প্রাণ স্বেচ্ছাসেবকেরা। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে মানুষের কাছে যাচ্ছেন তাঁরা। ঘরের দরজায় রেখে আসছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
তিন সপ্তাহে এই উদ্যোগের উপকারভোগী অনেকে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সিসিএসএসের ফেসবুক গ্রুপে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। বৈরী সময়ে ভালোবাসা নিয়ে কাছে দাঁড়ানোর বিষয়টি মানুষকে যে কতটা শক্তি জোগায়, ফেসবুক গ্রুপের মন্তব্যগুলো পড়লে সে সম্পর্কে একটা ধারণা মিলে।
বাংলাদেশ থেকে এক মা তাঁর কানাডাপড়ুয়া কন্যার সমস্যায় সিসিএসএসের এগিয়ে আসার কথা জেনে স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘কীভাবে ধন্যবাদ জানাব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। বাংলাদেশ থেকে ঘুরে যাওয়ায় বাড়িওয়ালা একরকম জোর করে আমার মেয়েকে বের করে দিল। আমার অসুস্থ মেয়ের মুখে খাবার মুখে তুলে দিয়েছেন আপনারা। মা হয়ে আমি পারিনি। আমার মেয়েকে ভালোবাসা, সাহস দিয়ে আগলে রেখেছেন আপনারা। শুধু ধন্যবাদ এই সহায়তায় কাছে মূল্যহীন। সকলের জন্য আমার প্রার্থনা।’
টরন্টোতে বসবাসরত এক মা তাঁর অটিস্টিক সন্তানকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন। সাহায্য চেয়ে ফোন করেন সিসিএসএসের নম্বরে। সময়মতো সহযোগিতা পেয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমার স্বামী আরেকটি দেশে কাজের জন্য আটকে আছেন। এদিকে করোনায় সকল পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে। সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় গ্রোসারির পাশাপাশি নিজের ও সন্তানের জন্য বিশেষ কিছু জিনিসের জরুরি দরকার ছিল। আমি ফোন করে সাহায্য চেয়েছি। তাঁরা আমাদের নিরাশ করেননি। তাঁদের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ, এই সহযোগিতার কথা কোনো দিন ভুলব না।’
গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার পেশাজীবী-সমাজকর্মী নওশের আলী, সবিতা সোমানি, রেজাউল ইসলাম ও নয়ন হাফিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনায় সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্য করোনাভাইরাস কমিউনিটি সাপোর্ট সার্ভিসেস (সিসিএসএস) নামের গ্রুপটি তৈরি করেন।
শুরু থেকেই উদ্যোগটিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জড়িত হতে সবার প্রতি আহবান জানান তাঁরা। তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন অনেকে। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ইতিমধ্যে ২ হাজার ছাড়িয়েছে।
কানাডায় করোনায় সমস্যাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই প্রচেষ্টা নিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তাদের একজন নওশের আলীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কাজ করছে সরকার। আমরা বাড়িতে থেকে নিজেদের সাথে প্রতিবেশীদেরও ভালো রাখছি। এমন কঠিন সময়ে মানুষ নানান জটিলতায় পড়ে। হাতে অর্থ রয়েছে কিন্তু বাইরে যাওয়ার অবস্থা নেই। বয়স্ক মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারছেন না। ভিন্ন দেশ থেকে ঘুরে আসলে ১৪ দিনের আইসোলেশন। আমরা মানুষের আপৎকালীন এই সময়ে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। স্বেচ্ছাসেবকেরা এই উদ্যোগের প্রাণ। তাঁরাই মূলশক্তি।’
মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া সামগ্রীর খরচ কীভাবে জোগানো হয়, এমন প্রশ্নে এই কার্যক্রমের আরেক উদ্যোক্তা সবিতা সোমানী প্রথম আলোকে বলেন, মানুষকে সহায়তায় এই উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। কেউ সাহায্য চাইলে আমরা আমাদের গ্রুপে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে এলাকাভেদে বার্তা পাঠাই। স্বেচ্ছাসেবকেরা চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ির দরজায় রেখে আসেন। স্বেচ্ছাসেবকেরা ভালোবাসা থেকেই ছুটে আসেন। ব্যয় করা অর্থ তাঁরা নিতে চান না। মানুষের প্রয়োজনীয় খাবার, ওষধ আর গ্রোসারি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা ছুটে যাচ্ছেন নিখাদ ভালোবাসা থেকেই। আমরা উদ্যোগটির সমন্বয় করছি মাত্র।’
টরোন্টোতে বাংলাদেশ কমিউনিটির এই উদ্যোগের উপকারভোগী শুধু কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরাই নন। অন্যান্য কমিউনিটির মানুষেরাও সহযোগিতার জন্য ফোন করছেন।
টরোন্টোয় বসবাাসরত কবি আসাদ চৌধুরী এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনন্য প্রচেষ্টা এই উদ্যোগ।
প্রয়োজনে ফেসবুক গ্রুপ বা নিচের ফোন নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সবিতা সোমানি: ৪১৬৪৫০০৯১৩, নওশের আলি: ৪১৬৬৬০০০০৯, রেজাউল ইসলাম: ৬৪৭৬৭৭০২৩১