লিখেছেন আবু আহসান
সম্প্রতি ঢাকা শহরের একটি আবাসিক এলাকায় মধ্যবিত্ত এক বৃদ্ধ সরকারি নথিতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত দ্বিতীয় মৃত্যু হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। মৃত ব্যক্তির ছেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি হৃদয়-বিদারক এবং ভাবনা-উদ্রেককারী পোস্টে বর্ণনা করেন কিভাবে কয়েকটি পরস্পরনির্ভর ঘটনা তার বাবাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বেসরকারি হাসপাতাল তার অসুস্থ বাবাকে কোভিড-১৯ টেস্ট করার পরামর্শ দেয়। অথচ, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তার বাবার জন্য কোভিড-১৯ টেস্ট প্রযোজ্য মনে করেনি। কারণ, প্রথমত তিনি প্রবাসী নন; দ্বিতীয়ত তিনি সম্প্রতি বিদেশে ভ্রমণ করেননি, অথবা তৃতীয়ত তিনি বিদেশ থেকে আগত কোনো প্রবাসীর সংস্পর্শে আসেননি। আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ তার পরিবারকে এই বলে আশ্বস্ত করে যে, করোনাভাইরাস তখনো “কমিউনিটি” পর্যায়ে সংক্রমিত হয়নি।
মারাত্মক অসুস্থ রোগীকে নিয়ে তার পরিবার বেশ কয়েকটি নামি বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়। প্রথম হাসপাতালটিতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিট বা আইসিইউ সুবিধা ছিল না, দ্বিতীয়টি রোগীকে ভর্তি করাতেই আগ্রহী ছিল না। আবার, ওই হাসপাতালগুলোর কোনোটিতেই কোভিড-১৯ টেস্ট করার সক্ষমতা ছিল না। এদিকে, রোগীর স্বজনরা আইইডিসিআরকে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য লাগাতার তদবির করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আইইডিসিআর সম্মত হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। যখন ওই বৃদ্ধ তার অসুস্থতা নিয়ে লড়ছিলেন, রাষ্ট্রের (আইইডিসিআর) অবস্থান ছিলো নেতিবাচক। যখন তার শরীরে করোনাভাইরাস আবিষ্কৃত হলো, তখন লাশ হয়ে গেলো রাষ্ট্রের সম্পত্তি। স্বজনরা তার লাশ সমাহিত করার অনুমতি পেলেন না।
সংক্রমণ রোধের প্রয়োজনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জীবন হয়ে পড়ে একাকী, এক-ঘরে। তাদের মৃত্যুও হয় নির্জনে, স্বজনের অনুপস্থিতিতে, শাস্ত্রীয় আচার পালন ব্যতিরেকে। অথচ, বিশেষজ্ঞ বা পেশাদার ডাক্তারদের অনুপস্থিতে করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তির দেখভাল করতে গিয়ে স্বজনরাও কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েন। সেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির সন্তান লেখেন তার বিচ্ছেদ, অপরাধবোধ, আর বেদনার তীব্র অনুভূতির কথা, যেহেতু তিনি তার বাবার যথাযথ চিকিৎসা বা শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তিনি কখনো ভাবেননি জীবনের এমন বেদনাদায়ক মুহূর্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে লিখতে হবে। কিন্তু এক নতুন ধরণের “ঘৃণা, সামাজিক কলঙ্ক, ও গ্লানির অভিজ্ঞতা” তাকে কিবোর্ডের আশ্রয় নিতে বাধ্য করে।
কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটে যে, তার দুলাভাই একজন “বিদেশ-ফেরত প্রবাসী,” যার মাধ্যমেই তার বাবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কাজেই, এই পরিবারটি শুধুমাত্র একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধিরই শিকার হলো না, বরং তাদেরকে সমাজে রোগ সংক্রামক জীবাণুর “বিস্তারকারী” ও জনস্বাস্থ্যের জন্য “হুমকি” হিসেবে সাব্যস্ত করা হলো। এই কারণেই ওই সন্তান তার পিতার বিষাদময় মৃত্যুর ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করতে বাধ্য হলেন। তিনি লিখেছেন, তার “বিদেশ-ফেরত প্রবাসী” দুলাভাই, যাকে কিনা “জীবাণু বহনকারী ও সংক্রমণকারী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সঙ্গে তার পরিবার, বিশেষ করে মৃত বাবার সম্প্রতি কোনো যোগাযোগই হয়নি।
আমরা কীভাবে এই মৃত্যু ও মৃত্যু-জনিত সামাজিক কলঙ্ককে ব্যাখ্যা করবো?
মর্মপীড়ার কোনো মেডিকেল জ্ঞান কিংবা বর্ণবাদের গতানুগতিক কোনো তত্ব এই পরিস্থিতি বুঝতে সহায়ক হবে না। করোনাভাইরাসের জৈব-রাজনীতি (বায়োপলিটিকস) ও কাউকে বাঁচিয়ে রাখা, আর কাউকে মরতে দেওয়ার রাজনীতিতে (নেক্রোপলিটিকস) এক নতুন ধরণের পৃথকীকরণের উদ্ভব হয়েছে যা সক্রিয়ভাবে চলমান। জনগণ তথা “কমিউনিটির” জীবন সুরক্ষিত করার যুদ্ধে কিছু মানুষের জীবনহানি বা কৌশলগত অবহেলা প্রয়োজন হয়। এখানেই আলোকপাত করতে হবে আমাদের।
অন্য অনেক জাতিরাষ্ট্রের মতো, বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থায় করোনা-উপদ্রুত দেশ থেকে আগত প্রবাসীদের মূলত টার্গেট করা হয়েছে বেশি। বিদেশে অভিবাসন করতে পারা বাংলাদেশে বড় ধরণের উচ্চাকাঙ্খা বা লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এই কারণে, প্রবাসী হওয়াটা বাংলাদেশী সমাজে উচ্চ সামাজিক মর্যাদার নির্দেশক; পশ্চিমা দেশে অভিবাসী হতে পারলে তো কথাই নেই। কিন্তু করোনাভাইরাস যখন ইতালি ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়লো, সেখান থেকে আসা প্রবাসীরা দেখতে পেলেন তাদেরকে একেবারে ভিন্নভাবে বরণ করা হচ্ছে, দেখা হচ্ছে “রোগবাহী ও সংক্রমণকারী” হিসেবে।
বাংলাদেশের অভিবাসন পুলিশ সম্প্রতি বিদেশফেরত প্রবাসীরা যেন বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকেন, সেজন্য তাদের হাতে স্ট্যাম্প লাগানো শুরু করে। ইতালি-ফেরত প্রবাসীদের বাড়িঘর লাল-পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে দেয় পুলিশ। সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা উত্তেজক সব গল্প ছড়াতে থাকে যে, এই অজ্ঞ, স্বার্থপর ও বিশৃঙ্খল বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা সামাজিক দূরত্ব ও আত্ম-কোয়ারেন্টিনের মতো আদর্শ কর্মকান্ড মানতে রাজি নয়। ফলে করোনাভাইরাস রোগের কারণ হিসেবে জনগণের মানসে রাষ্ট্রের প্রস্তুতির অভাব নয়, বরং এই প্রবাসীদের অসদাচরণই বড় হয়ে দেখা দেয়।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম মৃত্যুর জন্য এক প্রবাসীর “নির্লজ্জ্ব স্বার্থপর” আচরণকে দায়ী করা হয়। বিদেশ থেকে ভাইরাস নিয়ে আসা ও ৭০ বছর বয়সী পিতার মৃত্যুর কারণ হওয়ার জন্য ওই প্রবাসী নারীকে দায়ী করেন রাজনীতিকরা। তার পিতা এখানে হয়ে যান নির্দোষ বাংলাদেশী নাগরিক। প্রবাসীদের এই রোগের বাহক ও সংক্রমনকারী হিসেবে তুলে ধরার তাড়না এখন এমনই তীব্র যে, এই রাষ্ট্রব্যবস্থা সেই বৃদ্ধ ব্যক্তিকে এই সত্য প্রকাশই করতে দেয়নি যে, করোনাভাইরাস তাকে আক্রান্ত করেছে, তার মেয়ে নয়। তারা কি তাহলে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের শিকার নাকি ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠা করোনাভাইরাসের জৈব রাজনীতির শিকার?
সংক্রমন প্রশমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ভাইরাসের উৎস পদ্ধতিগতভাবে চিহ্ণিত করা একটি স্বীকৃত পন্থা। অথচ, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে পদ্ধতিগত অনুসন্ধানের বদলে কিছু সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে/ভূখণ্ডকে কোভিড-১৯ এর উৎস, বাহক ও প্রেরক হিসাবে চিহ্ণিত করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সংক্রমণ প্রতিরোধের এই সংকীর্ণ কৌশল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগের বৃহৎ চিত্রকে দৃষ্টির অগোচরে ফেলে রাখে, যার মধ্যে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর রয়েছে, যা এই রোগের বিস্তারকে তীব্র করতে পারে।
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে সরকারের “ঝুঁকিপূর্ণ” গ্রুপ বা এলাকা চিহ্ণিত করার কৌশল “আমরা” (স্থানীয় বাংলাদেশী/কমিউনিটি) ও “তাদের” (প্রবাসী) মধ্যে এক বিশেষ ধরনের “বায়োলজিক্যাল টাইপ রিলেশনশীপ” বা “জীবতাত্ত্বিক সম্পর্ক” প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে “বায়োলজিক্যাল রেসিজম” বা জৈব বর্ণবাদ সক্রিয় করে তোলে। যখন “কমিউনিটিকে” অসুস্থতা থেকে রক্ষা করার জন্য স্বাভাবিকতা থেকে অস্বাভাবিকতাকে আলাদা করার প্রয়োজন পড়ে।
“প্রচলিত বর্ণবাদ” সাধারণত কথিত বর্ণ বা জাতিগত পরিচয়ের স্পষ্ট বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়। কিন্তু “জৈবিক বর্ণবাদ” কোনো নির্দিষ্ট চরিত্রকে টার্গেট করে না। কোনো “জৈবিক হুমকি” যা থেকে “সমাজকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে”, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভিত্তিতে, নতুন কোনো সামাজিক গোষ্ঠী বা পরিচয়কে এক কাতারে ফেলা যায়। প্রবাসীদের অকস্মাৎ মর্যাদার আসন থেকে দূষকের পর্যায়ে নামিয়ে আনাকে এখানে উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় এক জোরজবরদস্তিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রবাসীদের অবমাননা, পৃথকীকরণ, নজরদারিকে প্রয়োজন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
জৈবিক ও প্রচলিত বর্ণবাদকে দুইটি পৃথক ধারণা হিসেবে দেখতেন দার্শনিক মিশেল ফুকো। কিন্তু উভয় বর্ণবাদই এক অভিন্ন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পারে। যেমন, করোনাভাইরাসকে জাতিগতভাবে “চীনা ভাইরাস” হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা। এই রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় বেশ কয়েকটি চীনা, রাশিয়ান ও ইরানি সংবাদ মাধ্যম করোনাভাইরাসকে জৈবিক অস্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। অপরদিকে চীনাদের দুর্দশা মার্কিন রক্ষণশীলদের কাছে আনন্দের উৎস হয়ে উঠছিল।
মহামারীকে নৈতিক অবক্ষয়, দুর্নীতি ও অশুভ কিছুর নির্দেশক হিসেবে উপস্থাপনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই করোনাভাইরাসের ভূ-রাজনীতির প্রত্যেকটি জিনিস চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবকে চীনের আদিম ও নোংরা সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তেমনি চীনা কর্তৃত্ববাদের ফল হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ট্রলগুরু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই চীনাদের অবমাননায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু লিবারেলরাও নিরীহ নীরব দর্শক ছিলেন না। এই করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে নিপীড়নমূলক কম্যুনিস্ট শাসন ব্যবস্থার পতন হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণীও করা হয় নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের বেশ কয়েকটি নিবন্ধে। করোনাকে জাতিগত রূপ দিতে অনেক শক্তি ব্যয় করা হয়। পশ্চিমা বিশ্ব হয়তো ভেবেছিল যে, তাদের অসাধারণ, আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন জীবনধারায় করোনাভাইরাস খুব একটা প্রভাব ফেলবেনা। পশ্চিমা রাজনীতিবিদ ও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবেই কভিড-১৯ রোগের হুমকিকে খাটো করে দেখেছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জাতিরাষ্ট্রগুলোকে বারবার আহবান জানিয়ে এসেছে: “টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট”। ব্যাপকভাবে গণ-পরীক্ষা ও আক্রান্ত-অনাক্রান্তের মধ্যকার যোগাযোগের তথ্য-সংগ্রহ তাইওয়ান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার করোনাভাইরাস মোকাবেলার প্রচেষ্টায় প্রধান ভূমিকা রেখেছে। তবুও বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে একটি বড় অংশই, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, কোভিড-১৯ পরীক্ষা কিছু সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। কেন তারা এই সংকীর্ণ পন্থা বেছে নিয়েছে? তাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতার জন্য? সামরিক অস্ত্র বা যুদ্ধের জন্য এই দেশগুলাোরতো কোনো অর্থনৈতিক কৃচ্ছতা দেখা যায় না।
আমি মনে করি, করোনাভাইরাসের সীমিত-পরীক্ষার একটি অন্যতম কারণ হলো “সংখ্যার রাজনীতি”। গণ-পরীক্ষার বদলে, সকলের প্রতি নজর না দিয়ে জনসংখ্যার নির্দিষ্ট একটি অংশকে টার্গেট বানিয়ে, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মৃত্যু-সংখ্যা কম দেখিয়ে এই রাষ্ট্রগুলো মহামারীর বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে অধিক সাফল্য দাবি করতে পারে। যদি যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা চীনের চেয়ে কম দেখাতে পারে, তাহলে ট্রাম্প “আমেরিকা কত মহান” বলে তার পুনঃনির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর মানুষকে টার্গেট করে তাদের ভ্রমণ ইতিহাস, আচরণ, বসবাসের স্থানকে সমস্যা হিসেবে তুলে ধরার মাধ্যমে, আক্রান্ত হওয়া বা অন্যদের আক্রান্ত করার দায় রাষ্ট্র নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে নাগরিকদের ওপর ঠেলে দিতে পারে। তৃতীয়ত, যেই বিদ্যমান কাঠামোগত সহিংসতার মধ্য দিয়ে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র প্রজাদের শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করে, তার অস্তিত্বকে লুকিয়ে রাখতেই কাজ করে জৈব বর্ণবাদ।
ক্ষমতা সুসংহত করার আধুনিক পদ্ধতি ও কাঠামোগত সহিংসতার ক্রিয়াকাণ্ডকে অস্পষ্টতার আবরণে ঢেকে রাখার জন্য জনগণের এক অংশের মধ্যে আরেক অংশের বিরুদ্ধে ভীষণ সাম্প্রদায়িক আক্রোশ সৃষ্টির চেয়ে সুবিধাজনক আর কিই বা হতে পারে?
“ইতালি-ফেরতদের” সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংশ্লিষ্টতা তৈরি করা, কিংবা একে “চীনা ভাইরাস” হিসেবে উপস্থাপন করা আসলে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষিত ও সংস্কৃতিতে অভিন্ন এক রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। জীবন বাঁচানোর নামে এই রাজনীতি প্রকৃতপক্ষে নতুন ঘরানার বর্ণবাদ, পৃথকীকরণ ও বিদেশীভীতিকে সক্রিয় করে।●
আবু আহসান: নৃবিজ্ঞানী, পিএইচডি গবেষক, রাডবোড বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডস।
এই প্রবন্ধটি রটেন ভিউজে প্রথম প্রকাশিত — ইংরেজি থেকে অনূদিত।