ভোরের আলো রিপোর্ট: আপাতত রাজনীতিতে মনোযোগ দিচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, চিকিৎসার মাধ্যমে দলের প্রধানকে পরিপূর্ণ সুস্থ করে তোলাই তাদের কাছে এখন মূল অগ্রাধিকার।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা শেষ হলেও খালেদা জিয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে একাকী পরিবেশেই সময় কাটাবেন। এ সময় তিনি চিকিৎসা নেবেন। দলীয়ভাবে দেখাসাক্ষাৎ দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
ডা: জাহিদ জানান, ম্যাডামের পুত্রবধূ ডা: জোবায়দা রহমান চিকিৎসার সামগ্রিক দিকগুলো তদারকি করছেন।
তিনি বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আগের চেয়ে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন উনার শারীরিক অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যেটি গত ২ বছরে হয়নি।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অবস্থা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। সবকিছু জানলেও দলীয় রাজনীতিতে তিনি এখনই মনোযোগ দিচ্ছেন না। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। করোনা পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করানোও সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতির উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থেকেই তিনি চিকিৎসা নেবেন। গত ২৫ মার্চ দুই শর্তে ছয় মাসের জন্য বেগম জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়।
মুক্তি পেয়ে বিএসএমএমইউ থেকে নিজ বাসভবন ফিরোজায় যান এবং সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। চলমান করোনাভাইরাসের কারণে নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
গত ২৬ মার্চ থেকে তার হোম কোয়ারেন্টিন শুরু হয়। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকলেও বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই আছে তার শারীরিক অবস্থা। তবে তিনি আগের তুলনায় মানসিকভাবে অনেক সুস্থ।
জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাই তার বাসায় যাওয়া-আসা করবেন এবং চিকিৎসা দেবেন।
মুক্তির পর বিএনপির বেশির ভাগ নেতাই বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। হোম কোয়ারেন্টিনে চলে যাওয়ায় তার সাথে সাক্ষাৎ অসম্ভব হয়ে পড়ে দলীয় নেতা ও আত্মীয়দের।
খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, কোয়ারেন্টিন শেষ হচ্ছে কিন্তু তার শরীরের অবস্থা ভালো না। এখনও দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারছেন না। তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। তবে মানসিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো।
তিনি বলেন, কোয়ারেন্টিন শেষ হলেও তিনি এখনও কারো সাথে দেখা করবেন না। কারণ উনার শারীরিক অবস্থা এখনো ভালো নয়। আর তাছাড়া বর্তমান করোনা রোগটা ছোঁয়াচে।
বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবের সভাপতি হারুন আর রশীদ বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসা এবং তার সব কিছু পরিবার থেকে তদারকি করা হচ্ছে। আর আমরাও বিষয়টা পরিবারের উপরে ছেড়ে দিয়েছি। উনার কোয়ারেন্টিন শেষ হলেও তিনি বাসায় থাকবেন। কারণ উনি এখনও আগের অবস্থায় আছেন।
তিনি জানান, ম্যাডামের প্রধান চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকী সব কিছু দেখভাল করছেন। কোয়ারেন্টিন শেষ হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেটি এফ এম সিদ্দিকীসহ চিকিৎসক টিমের সদস্যরা ঠিক করবেন।
প্রসঙ্গত ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া রিউমাটিজ আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখ ও দাঁতের নানা রোগে আক্রান্ত।
ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার হাত-পায়ের ব্যথাটা বেশি। তার শারীরিক অসুস্থতা অনেক বেশি। তিনি হাঁটতে পারেন না। ব্যথা উপশমের জন্য গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে থেরাপি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে উনি আরাম বোধ করছেন।