ভোরের আলো ডেষ্ক: যমদূত হিসাবে বিশ্বের সামনে হাজির হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মাত্র তিন মাসেই দুই শতাধিক দেশে প্রাণ কাড়ল অর্ধ লাখের বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার পর করোনায় মৃত্যু এবং সংক্রমণের এই চিত্র দেখা গেছে।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসের প্রথম উপস্থিতি নিশ্চিত হয় কর্তৃপক্ষ। চীনে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ৩ হাজার ৩১৮ জনের প্রাণ কাড়লেও বিশ্বজুড়ে সেই সংখ্যা ৪৭ হাজারের বেশি।
তিন মাসেই এই ভাইরাস ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দূত হিসেবে পৌঁছে গেছে বিশ্বের সাত মহাদেশে। চীনে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এই ভাইরাসের তাণ্ডব চলছে সর্বত্রই। ভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র উহান এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেও এই মুহূর্তে করোনার নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অন্তত পাঁচটি দেশ।
চীনে সংক্রমণ শুরু হওয়া এই ভাইরাসে অসুস্থ হয়েছিলেন ৮১ হাজার ৫৮৯ জন। কিন্তু আমেরিকায় ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৮ জনে। মৃত্যুতে চীনকে ছাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; দেশটিতে প্রাণ গেছে ৫ হাজার ৩৩৪ জনের।
তবে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস দুঃখের দামামা হয়ে হাজির হয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। এই দেশটি এখন মৃত্যুপরীতে পরিণত হয়ে টিকে থাকার লড়াই করছে করোনার সঙ্গে। আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে থাকলেও ইতালিতে লাশের সারি বিশ্বের শীর্ষে। দেশটিতে করোনা প্রাণ কেড়েছে ১৩ হাজার ৯১৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ২৪২ জন।
দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হলেও চিকিৎসকরা প্রাণপন লড়ে যাচ্ছেন করোনার বিরুদ্ধে। সেখানকার চিকিৎসকরা রোগীদের বেছে বেছে চিকিৎসা দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন। করোনার কাছে অসহায় বয়স্কদের রেখে তরুণ এবং কম বয়সীদের বাঁচানোর মতো নির্মম পথ বেছে নিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ইতালির পর ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনে মৃত্যুদূত করোনাকে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই আগের দিনের মৃত্যু এবং সংক্রমণের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে স্পেন। স্পেনে করোনার কাছে হার মেনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ১০ হাজার ৩ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ২৩৮ জন।
ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর আরেকটি ফ্রান্সও করোনার কাছে অসহায়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ৩২ এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৯৮৯ জন।
ফ্রান্সের আরেক প্রতিবেশি জার্মানিও নাকানি-চুবানি খাচ্ছে করোনার কাছে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৭২৮ ছুঁয়েছে। তবে ইউরোপের এই দেশটিতে মৃত্যুহার অন্য দেশগুলোর তুলনায় কিছুটা কম; এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৯৯৭ জন।
যুক্তরাজ্যেও করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী এই ভাইরাস দেশটিতে আরও ৫৬৯ জনের প্রাণ কেড়েছে। যা এই মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে একদিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা ২ হাজার ৯২১।
করোনার এই তাণ্ডব শুধু ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় থেমে নেই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও করোনা যেন যমদূত হিসেবে হাজির হয়েছে। দেশটির প্রত্যেকটি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ১৬০ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৪৬৮।
এছাড়াও এই ভাইরাস দুঃস্বপ্ন ডেকে এনেছে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকার শত শত দেশে। যমদূত করোনার লড়াইয়ে একযোগে লড়ছে বিশ্ব। দেশে দেশে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন এবং ওষুধ তৈরির প্রচেষ্টা জারি রেখেছেন শত শত বিজ্ঞানী। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানে ভ্যাকসিন এবং ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগও হয়েছে। তবে চূড়ান্ত ওষুধ কিংবা ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য বিশ্বকে অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে দুই বছর। ততদিন পর্যন্ত যমদূত করোনাকে ঠেকানোর লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় আপাতত নেই।