ভোরের আলো রিপোর্ট: করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এবার জাপানিজরা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। একটি বিশেষ ফ্লাইটে ৩৩৬ জন নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানোর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাস। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, সোমবার বিশেষ ফ্লাইটে ২৬৯ মার্কিন নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার পর থেকে (যুক্তরাষ্ট্র ফিরতে) ঢাকায় অপেক্ষায় থাকা কয়েক ‘শ নাগরিকের জন্য দ্বিতীয় ফ্লাইট পাঠানোর প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে স্টেট ডিপাটমেন্ট। আজ এ বিষয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস একটি বিবৃতি দিতে পারে। তাই বিদেশিদের ঢাকা ছাড়ার হিড়িক লেগেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বেশ ক’টি দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে আগ্রহ দেখায়। তারা স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি ও কারিগরি সহায়তা চায়। সরকার কারও আবেদন প্রত্যাখ্যান করেনি। একটাই শর্ত ছিল, বাংলাদেশ বিমানকে ভাড়া করা, না হয় যেখান থেকে স্পেশাল ফ্লাইট অসুক না কেন তা অবশ্যই খালি আসতে হবে। জাপান বাংলাদেশ বিমানকেই ভাড়া করেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার রাতে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জাপানের চার্টার্ডকৃত বিজি ৪০০১ ফ্লাইটে মোট আসন সংখ্যা ৪১৯। দূতাবাসের সরবরাহ করা তালিকা মতে ৩৩৬ জনের বোর্ডিং চুড়ান্ত হয়েছে। ফ্লাইট ছাড়ার দু’ঘন্টা আগ পর্যন্ত অর্থাত সকাল আটটা অবধি এটি ওপেন থাকবে। ওই সময়ের মধ্যে দূতাবাস তালিকায় সংযোজন করতে পারবে কিংবা জাপানী পাসপোর্টধারী যে কেউ আসন বুকিং করতে পারবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাপান দূতাবাসের সরবরাহ করার তথ্য মতে, ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতিতে থাকা জাপানী নাগরিকদের বেশিরভাগই দেশটির অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্টোরেলসহ বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কর্মকর্তা। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা প্রত্যেকেই ছুটি চেয়েছেন, যা জাপান সরকার অনুমোদন করেছে এবং তাদের জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নিতে উড়োজাহাজ ভাড়া করেছে।
উল্লেখ্য এর আগে ভুটান ও মালয়েশিয়া ঢাকায় স্পেশাল ফ্লাইট পাঠিয়ে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে। পূর্ব এশিয়ার অরেকটি দেশ, বৃটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটভুক্ত বিভিন্ন দেশের হাজারও নাগরিক পছন্দের গন্তব্যের ফ্লাইট ধরতে এখনও অপেক্ষায় বলে জানানো হয়েছে।
আমেরিকানদের ফেরাতে দ্বিতীয় ফ্লাইটের প্রস্তুতি
গত সোমবার এক বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে যান ২৬৯ অামেরিকান। সঙ্গে তাদের পোষা ৭টি কুকুরও। ওই ফ্লাইটে ছিলেন ঢাকায় কর্মরত বেশ ক’জন মার্কিন কূটনীতিক, তাদের পরিবার এবং নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানে আটকা পড়া মার্কিন নাগরিকগণ। তাদের বহনে কাতার এয়ারওয়েজের বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ ভাড়া করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। দূতাবাসের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল- উড়োজাহাজে যতটি আসন রয়েছে তা পরিপূর্ণ করে ঢাকা থেকে ফ্লাইটটি উড্ডয়ন করবে। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। কিছু যাত্রী বাদ পড়ে যান। তাছাড়া আরও শতাধিক আমেরিকান শেষ সময়ে এসে ফিরতে দূতাবাসে আবেদন করেন। সব মিলে দ্বিতীয় ফ্লাইট অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অবশ্য ৩০ শে মার্চই দ্বিতীয় চার্টার্ড ফ্লাইটের আভাস দেয় দূতাবাস। সে মতে এখন প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ফিরতে আগ্রহীদের তালিকা চূড়ান্ত হবে এবং ওই দিনই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস একটি বিবৃতি দিবে বলে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে পারসোনাল চয়েজ বা ব্যক্তিগত পছন্দে মার্কিন দূতাবাসের মধ্যম সারির বেশ ক’জন কূটনীতিক যুক্তরাষ্ট্র ফিরে গেলেও রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ঢাকাতেই থাকছেন। দূতাবাসের কার্যক্রমও চলবে। এ অবস্থায়ও ঢাকায় অবশিষ্ট আমেরিকান নাগরিকদের জন্য দূতাবাসের কসনুল্যার সেবা ২৪ ঘন্টা খোলা থাকছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাধারণের ভিসা সার্ভিস বন্ধ থাকবে।