ভোরের আলো, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৭২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটি ইতালি, চীন ও স্পেনকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই ভাইরাসে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩০ জন।
এর মধ্যে ৬ হাজার ৪৬১ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ১২৯ জন। খবর ওয়াল্ডোমিটার, এএফপি ও বিবিসির।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮৯ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬০১ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ৩ হাজার ৯৮৮ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিইউতে রয়েছেন।
আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টনি ফসি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক লাখ বা তারও বেশি হতে পারে। এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই কথা বলেছেন। এদিকে চীন থেকে জরুরি মেডিকেল সরঞ্জাম পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র্রে।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নিউইয়র্কে। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১ হাজার ৫৫০ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৫ হাজার ৯৮৩ জন। এছাড়া নগরীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথমবারের মতো ১৮ বছর বয়সের নিচে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে অন্য আরও রোগ ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু এক লাখ বা তারও বেশি হতে পারে। এবং এ ধরনের কথা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে করোনা ভাইরাস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প একথা বলেন। মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ বা এর নিচে থাকলে ‘সম্মিলিতভাবে করা খুব ভালো কাজ হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে সিএনএনের টকশো ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ এ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টনি ফসি (যুক্তরাষ্ট্র্রের ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের পরিচালক) এক মন্তব্যে বলেছিলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র্রে এক লাখ বা তারও বেশি লোক মারা যেতে পারে।
হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে ডা. ফসির মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প ওই স্বীকারোক্তি দেন। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র্রজুড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ‘স্টে অ্যাট হোম’ গাইডলাইন আরও ৩০ দিন বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
দুই সপ্তাহ আগে ১৫ দিনের জন্য এ গাইডলাইন ঘোষণা (লকডাউন) করেছিলেন তিনি, যার মধ্যে গণজমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সোমবার ওই সময়সীমা শেষ হয়। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ১২ এপ্রিলের ইস্টারের পর্বের সময় দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এদিনের সংবাদ সম্মেলনে আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘যদি আমরা কিছু না করি’ তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে।
বিজয় অর্জিত হওয়ার আগেই জয় ঘোষণার চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। আপনারা যত ভালো করবেন, তত দ্রুত এই দুঃস্বপ্ন শেষ হবে।
উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ১৫১। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৪ হাজার ৩৪১ জন।
এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬৯ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪১ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ হাজার ৭৪৯ জন।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ২৩২ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৫ জনের অবস্থা সাধারণ। ৩২ হাজার ২৯৭ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইতালি। ইতালিতে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে মারা গেছেন ১২ হাজার ৪২৮ জন। স্পেনে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ৪৬৪ জন। চীনে ৩ হাজার ৩০৫ ফ্রান্সে ৩ হাজার ৫২৩ জন। ইরানে ২ হাজার ৮৯৮ জন। যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৭৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।