মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। গেল বছরের শেষ দিন চীনের উহানে ভাইরাসটির প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা। ভাইরাসটির বিস্তার দেখে ৩১ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সব দেশের সরকারকেই সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানায় সংস্থাটি। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯ ছড়ানোয় নতুন মাত্রা পায়। চীনে অবস্থা ভয়াবহ হতে শুরু করে। মার্চে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত আর মৃত্যুর পালে লাগে হাওয়া। ১১ মার্চ করোনাভাইরাসকে ‘বৈশ্বিক মহামারী’ ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশ সময় গতকাল ৩১ মার্চ রাত ১১.৩০টা পর্যন্ত ভাইরাসটি বিশ্বের ২০৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৮ লাখ ৩৬ হাজরের বেশি মানুষ। মারা গেছে ৪১ হাজার ২৩৭ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার এবং জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিনে (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার ৬০৪ জন। আর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৭৭ জন। সে হিসাবে মার্চেই রোগটিতে বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার ২৮৫ জন। আর মারা গেছে ৩৮ হাজার ২৩ জন।
নিউমোনিয়াসদৃশ রোগটি চীনে প্রথম নজরে পড়লেও ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে ইউরোপে। এর মধ্যে মৃত্যুকূপ হয়ে ওঠা ইতালি আর স্পেনেই মারা গেছে প্রায় ২১ হাজার মানুষ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, ২০১টি দেশে ছড়ালে এখন পর্যন্ত এদের মধ্যে ১২১টি দেশ ও অঞ্চল থেকে মৃত্যুর খবর এসেছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটার জানাচ্ছে, গতকাল মঙ্গলবার করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে আরোগ্য লাভ করেছে ১ লাখ ৭৪ হাজার আর এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬ লাখ ২১ হাজার। এদের মধ্যে ৩০ হাজার ৯৬৪ জনের অবস্থা গুরুতর। গতকাল রাতের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫১৮ জন আক্রান্ত নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৩১ জনে দাঁড়িয়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইতালিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, ১২ হাজার ৪২৮ জন। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৯২ জনে। আক্রান্তের সংখ্যায় এখন চীনকে টপকে তৃতীয় অবস্থানে চলে গেছে স্পেন। ইতালির পর ইউরোপে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত স্পেনে, ৯৪ হাজার ৪১৭ জন। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যায় ইতালির পরই স্পেন, ৮ হাজার ২৬৯ জন। এরপরই রয়েছে চীন। এখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ৫৭ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ৩০৫ জন। পঞ্চম স্থানে আছে জার্মানি। এখানে মোট আক্রান্ত ৬৮ হাজার ১৮০ জন। মৃতের সংখ্যা ৬৮২। আক্রান্তের সংখ্যায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা ফ্রান্সে রোগীর সংখ্যা ৫২ হাজার ১২৮ আর মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৫২৩ জন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৬০৫ আর মৃত্যু ২ হাজার ৮৯৮ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার ১৫০ জন, মৃত্যু ১ হাজার ৭৮৯ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ১৬ হাজার ১৮৬ জন, মৃত্যু ৩৯৫ জন। এশিয়ায় চীন ও ইরানের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৯ হাজার ৭৮৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৬২ জনের।
এছাড়া বিশ্বের অন্তত ৩০টি দেশের রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, আগামী জুনের মধ্যে মহামারী রূপ নেওয়া ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। তবে এখনো কোনো প্রতিষেধক ও ওষুধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় আসলে কী হবে তা জানতে সময়ের ওপরই নির্ভর করতে হবে।