জুয়েল রাজ, লন্ডন থেকে
যুক্তরাজ্যে নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী নিয়ে শুরু হয়েছে হাহাকার। বাধ্য হয়ে সুপার স্টোরগুলো সম্মিলিত বিবৃতি দিয়েছে। এই দুঃসময়ে একসাথে কাজ করার আহবান জানিয়েছে।
দেশটির সুপারমার্কেটগুলোতে হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চরম আকাল দেখা দিয়েছে। বড় বড় সুপারশপে টয়লেট পেপার, হাত ধোয়ার তরল সাবান, পাস্তা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টিনজাত খাদ্য, আটা, ময়দার মত জিনিস প্রায় উধাও।
দেশটির সাধারণ জনগণ আতঙ্কিত হয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে ভিড় করছেন বড় বড় সুপার স্টোরগুলোতে। এমনকি স্থানীয় দোকানগুলোতেও এই ভিড় লক্ষ করা যায়। সবার মনেই একই আতঙ্ক যদি ইতালির মতো পরিস্থিতি হয় যেভাবে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। যদি একইভাবে যুক্তরাজ্যেও ঘোষণা করা হয় তাহলে খাদ্য সঙ্কটে পড়তে পারেন সাধারণ জনগণ।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সুপারমার্কেটগুলো এখন যৌথ এক বিবৃতিতে মানুষজনকে পাগলের মত কেনাকাটা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে আশ্বস্ত করছে যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দোকানে ঢুকে দয়া করে বিবেচকের মত আচরণ করুন। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত জিনিস কেনা বন্ধ করুন, যাতে অন্যরা প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে বঞ্চিত না হন। আমরা সবাই যদি বিবেচক হই, তাহলে সবার জন্য যথেষ্ট জিনিস দোকানে থাকবে।
সুপারমার্কেটগুলো আশ্বস্ত করছে যে, তারা সরকারের সাথে একযোগে কাজ করছে যাতে দোকানে প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ অব্যাহত থাকে।
সুপারমার্কেট জায়ান্ট সেইন্সবেরিজের প্রধান নির্বাহী মাইক কুপ ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে এক বিবৃতিতে বলেছেন, দয়া করে কেনার আগে একবার ভাবুন, আপনার পরিবারের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই শুধু কিনুন।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গেলে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে এই অনিশ্চয়তার কারণে সব সুপারস্টোর ও দোকানে ভিড় করা লোকজন ইতিমধ্যে পণ্য সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছেন। করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশটির সবক’টি সুপারস্টোরে। আগে এসব শেলফগুলোতে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী সাজানো থাকলেও তা এখন ফাঁকা। ক্রেতারা পণ্য কিনতে আসলেও না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আর স্টোরগুলোতে অতিরিক্ত পণ্য স্টক না থাকায় তারাও সঙ্কুলান দিতে পারছেন না।
অনেক দোকানদারদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, আতঙ্কিত হয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশি বেশি না কিনে নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করুন। যুক্তরাজ্যের স্টোরগুলিতে সাময়িকভাবে সঙ্কটের সৃষ্টি হলেও সুপারস্টোর গুলির যথেষ্ট পরিমাণ জিনিসপত্র মজুদ রয়েছে। তারা কাস্টমারদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন এমনকথাও লিখছেন যে শুধু এক প্যাকেট টয়লেট পেপার কিনতে দোকানের পর দোকানে ঘুরছেন তারা। করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ যত বাড়ছে, ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষজন বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঘরে মজুদ শুরু করেছেন। অনুরোধ–আহ্বানের পাশাপাশি, সুপারমার্কেটগুলো এখন কেনাকাটার ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করেছে। জার্মান সুপার–শপ চেইন অলডি নিয়ম করেছে একজন ক্রেতা কোনো জিনিস চারটির বেশি কিনতে পারবে না।
সুপারমার্কেট জায়ান্ট টেসকো হাতধোয়ার সাবান, পাস্তা, টিনজাত খাদ্যসহ বেশ কিছু পণ্য কেনার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে একজন ক্রেতা পাঁচটির বেশি কিছু কিনতে পারবেন না। আরেক সুপারমার্কেট চেইন ওয়েটরোজও কিছুকিছু পণ্য কেনার সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে।
দরিদ্র মানুষদের বিনা পয়সার খাবার দেয়ার জন্য জন্য যেসব ফুড–ব্যাংক রয়েছে, তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছে অনেক খাবার তারা আর কিনতে পারছে না। তাদের মজুদে টান পড়েছে। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।
এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মানুষজনকে দায়িত্বশীল আচরণ এবং অন্যের কথা ভাবার আহবান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে সোমবার নাগাদ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ কোন ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।