ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। হংকংয়ের একটি দোকানে আচমকাই হানা দেয় এক দল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। অস্ত্র দেখিয়ে, গুলি করার হুঙ্কার ছেড়ে দোকানের সব টয়লেট পেপার রোল লুটে নিল তারা। বাধা দেওয়ার সাহস দেখাননি কেউ। শুধু হংকং নয়, করোনা-সংকটে টয়লেট পেপার নিয়ে হাহাকার পড়ে গিয়েছে সিঙ্গাপুর, জাপান, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বহু দেশেই। বাসিন্দাদের আতঙ্ক, শেষে না ‘শৌচাগার-বন্দি’ হয়ে মরতে হয়!
হাহাকার এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, লোকের বাড়ির শৌচাগার থেকেও চুরি যাচ্ছে টয়লেট পেপার। সোনাদানা নয়, চোরের পছন্দ ওই ‘মহামূল্যবান’ কাগজটি। সিডনির এক সুপার মার্কেটে গত বুধবার টয়লেট পেপার কেনা নিয়ে এক রকম হাতাহাতি বেধে গিয়েছিল। ছুরি নিয়ে হামলা করে এক যুবক। শেষে ঝামেলা থামাতে পুলিশ ডাকতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় লোকজনের #টয়লেটপেপারগেট, #টয়লেটপেপারক্রাইসিস দিয়ে একের পর এক পোস্ট, কমেন্টের বন্যা। ছবি-ভিডিওতে হাসি-মস্করাও চলছে যেমন, প্রেমিকাকে টয়লেট পেপার উপহার দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব। দোকানে বাড়ন্ত, অনলাইনে দাম চড়েছে ওই বিশেষ কাগজের। সিডনির একটি রেডিও চ্যানেলে আবার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথম পুরস্কার তিনটে টয়লেট পেপার রোল। অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদপত্র আরও এক ধাপ এগিয়ে। তারা খবরের কাগজে আলাদা করে আট পাতা দিয়েছে। কোনো খবর লেখা নেই তাতে। জলছাপ দেওয়া পাতাগুলোর নিচে রয়েছে একটি বিশেষ বার্তা, ‘টয়লেট পেপার হিসেবে ব্যবহার করুন।’ সংবাদ সংস্থাটি নিজেরাই টুইটারে পোস্ট করেছে তাদের ওই অভিনব উদ্যোগের ভিডিও। তিন লাখ মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন। হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট। কেউ লিখেছেন, ‘এই জন্যই কাগজটাকে এত পছন্দ করি।’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘জিনিয়াস!’
গত বছর ডিসেম্বরের শেষে প্রথম নোবেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে চীনের উহানে। তার পর থেকে এক-এক করে ভাইরাস ছড়াতে থাকে বহু শহরে। সংক্রমণ রুখতে শহরগুলোকে অবরুদ্ধ করে দেয় চীন। চীনের দেখাদেখি এখন সংক্রমণ রুখতে শহর ‘তালাবন্ধ’ করার পথে হাঁটছে ইটালির মতো ইউরোপের দেশগুলোও। ফলে ভয় দানা বেঁধেছে পশ্চিমে। যদি কোয়ারেন্টাইন হতে হয়? যদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাল দেখা দেয়?