বাংলা সিনেমার উজ্জ্বল নক্ষত্র সালমান শাহের অকাল মৃত্যুতে কেঁদে উঠেছিল শোবিজ অঙ্গন। মৃত্যুর ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তার জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি।
তিনি খুন হয়েছিলেন নাকি আত্মহত্যা করেছেন এ নিয়ে দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে চলছিল মামলা। চলতি বছরে কিছুদিন আগে পিবিআইয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।
সালমান শাহ মৃত্যুর পর সেই মামলার রাজসাক্ষী ছিলেন রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ। নায়কের মৃত্যুর পরের বছর ১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই গ্রেফতার হন রিজভী। সালমান শাহের খুনের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সেসময় ওই খুনের মামলার রাজসাক্ষী হিসেবে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন রিজভী। কিন্তু আটক হওয়ার কিছুদিন পর জামিনে ছাড়া পেয়ে দেশান্তরি হন রিজভী। তারপর আর কোথাও তাকে দেখা যায়নি।
সম্প্রতি খোঁজ মিলল সালমান হত্যার সেই রাজসাক্ষীর। দীর্ঘদিন পর এই হত্যা মামলার প্রতিবেদনে নতুন করে আলোচনা জন্ম দিলে এ নিয়ে মুখ খুলেন রিজভী। লণ্ডন থেকে তিনি বলেন, আমি ছিলাম সালমান শাহের অন্ধ ভক্ত।
এখনো। ১৯৯৬ সালে আমার বয়স ১৫ বছর। আবেগ ছিলো অন্যরকম। প্রিয় নায়কের মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারিনি। আবেগে একটি মিথ্যে ও সাজানো নাটকে জড়িয়ে পড়েছিলাম তখন।
আর সালমানের খুনে জড়িত বলে গ্রেফতার হয়েছিলাম। কিন্তু আমি কখনোই রাজসাক্ষী ছিলাম না। আমাকে রাজসাক্ষী বানানো হয়েছে। নাটকীয়ভাবে আমাকে দিয়ে তারা এসব সাজিয়েছে। নীলা চৌধুরী, ওসি বদরুল, আরও অনেকেই ছিলেন এই পরিকল্পনায়। সত্যি কথাটা হলো ক্যান্টনমেন্ট থানা বা সিএমএম কোর্টে-আদালতে আমি কোনো জবানবন্দি দিইনি।
আমি কোনো রাজসাক্ষী নই। বারবার এই মিথ্যে কথাটা বলা হচ্ছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া ওই জবানবন্দি আমার নয়। সেখানে স্বাক্ষরটিও জাল। আমাকে তো চুক্তির বরখেলাপ করে দুদিন পরই কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হলো। সেখানে ৯ মাস বন্দি ছিলাম। আদালতে আমি কোনো জবানবন্দি দিইনি।
তখন নীলা চৌধুরী সালমান শাহ ভক্তদের কাছে মায়ের মতো আবেগের জায়গায় সম্মান পেতেন। আমারও যোগাযোগ ছিলো তার সাথে। একদিন গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে নীলা চৌধুরী গাড়ি পাঠায় আমাকে তার বাসায় যাওয়ার জন্য।
সেদিন বাসায় সালমান শাহের কয়েকজন আত্মীয় ছিলেন, বেশ ক’জন সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ ছিলেন। সবাই মিলে পরিকল্পনা সাজায় আমাকে গ্রেফতার দেখিয়ে খুনের মামলাটি চালানো হবে। আমি রাজি হচ্ছিলাম না দেখে আমাকে ৭ কোটি টাকা দেয়ার চুক্তি হলো।
তিনি আরও বলেন, আমাকে ঠকানো হয়েছিলো। বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিলো আমার সাথে। নীলা চৌধুরী বেঈমানী করলো। আমার জেলখানায় যাওয়ার কথা ছিলো না। ওসি বদরুল আমাকে বলেছিলেন দুইদিন আটক থাকতে হবে।
কিন্তু দুইদিনের মধ্যে আমাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হলো। দীর্ঘ নয় মাস আমি সেখানে বন্দী ছিলাম। আমার সাথে পরিবারের কেউ যোগাযোগ করতে পারতো না। মা-বাবা, ভাইবোন কারো মুখ দেখিনি নয় মাস। বুঝতে পারলাম যে অনেক বড় ভুল করেছি।
কেন্দ্রীয় কারাগারে বেশ কয়েকজন সিআইডি অফিসার আমার জবানবন্দি নিলেন। তাদের আমি সব খুলে বলি। সব বানানো ছিলো। সালমান শাহ সিনেমা করে গেছেন সত্যের মৃত্যু নেই। তার মা অভিনয় করে যাচ্ছেন সত্যের মৃত্যু ঘটাতে।
খুব খারাপ লাগতো। বুঝতে পারছিলাম অহেতুক একটা খুনের মামলা সাজানো হয়েছে। নীলা চৌধুরীর অসৎ উদ্দেশ্য আছে। তিনি পুত্রশোককে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন। এখন তো স্পষ্ট দেখি দিনের পর দিন চাঁদাবাজি করে মামলার টাকা উঠানোর নামে ফায়দা লুটছেন তিনি।
আমার লজ্জা করে এটা ভাবতে নীলা চৌধুরীর গর্ভে সালমান শাহ জন্মেছেন। উনি অত্যন্ত ভয়াবহ মানসিকতার একজন নোংরা মানুষ। একটা মৃত্যুকে তিনি মূলধন হিসেবে নিয়েছেন। আমরা কষ্ট করে টাকা আয় করি।
আর নীলা চৌধুরীর কোনো কষ্ট নেই৷ তার ইনকামের সোর্স সালমান শাহ। মরা ছেলেকে নিয়ে ব্যবসা করতেছেন। তার মৃত্যু। লন্ডনের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে চাঁদা উঠাচ্ছে, সাংবাদিক সম্মেলন করছে।
এবার পিবিআই তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন যে, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু সালমান শাহের পরিবার এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছে। তার দাবি আপনি এই মামলার রাজসাক্ষী।
আপনাকে কেন ডাকেনি পিবিআই? রিজভীর জবাব, ভুল। সালমানের পরিবার জানে আমি মিথ্যে রাজসাক্ষী হয়েছি তাদের খুনি দাবি করে। কিন্তু সত্যটা হলো আমি কেবল একটি পরিকল্পিত নাটকের শিকার ছিলাম।
আমি একটা কথা বলতে চাই, সালমান শাহের হত্যা রহস্য নিয়ে পিবিআই যেভাবে তদন্ত করেছে তা সত্যিই দারুণ। তাদের সেদিনের লাইভ আমি দেখেছি। নিখুঁত বিশ্লেষণ মনে হয়েছে রিপোর্টকে।
তারা আমার আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করে আমার নাম্বার নিয়েছে। আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমি ভয়েস ম্যাসেজে আমার জবানবন্দি দিয়েছি। আমি যা জানি সব বিস্তারিত বলেছি। আমার সাথে যা হয়েছিলো সব।