রিয়েল এস্টেটে কেমন হতে পারে “করোনা” ভাইরাসের প্রভাব

লিখেছেন রিয়েল্টর শিহাব উদ্দিন

মাস তিনেকেরও কম সময়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে ঘাতক করোনা ভাইরাস। এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরী প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়াতে এর ভয়ে আতংকিত গোটা বিশ্ব। গত ১০ মার্চের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কানাডায় এখন পর্যন্ত ১জন মৃত সহ ৯৩ জন সনাক্ত হয়েছেন যার ৩৬ জন অন্টারিওতে, ৩৯ জন বৃটিশ কলোম্বিয়াতে ৪ জন কিউবেকে এবং ১৪ জন আলবার্টাতে|

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন ইতিমধ্যে ব্যাহত হয়েছে। কানাডাতে এই আতঙ্ক কতটা বিস্তার লাভ করেছে সেটা বুঝা যায় বিভিন্ন স্টোরের কতিপয় সামগ্রী বিক্রির তথ্য থেকে| বিভিন্ন স্টোরে খাদ্য সামগ্রী চাহিদার অতিরিক্ত বিক্রি হচ্ছে। এশিয়া থেকে আমদানি করা চাল-ডাল কম আসাতে অচিরেই সংকট দেখা দিতে পারে এই আতঙ্কে অনেকেই কয়েক মাসের রসদ অগ্রিম কিনে রাখছেন|

করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা এবং সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য দেখে আতঙ্ক বাড়ছে ক্রমাগত| অনেক জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সভা সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সৌদি আরব কিছু কিছু দেশের জন্য ওমরা ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। করোনার কারণে এয়ার কানাডা চীনে সমস্ত ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে| উত্তর আমেরিকার বাস্কেটবল এসোসিয়েশন NBA খেলোয়াড়দের ভক্তদেরকে সাথে সংস্পর্শে সর্তকতা হিসাবে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে ।

অর্থনীতির উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। এর আগে ২০০৩ সালে SARS চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কানাডিয়ান অর্থনীতি অগত্যা মন্দার কবলে পড়েনি। উল্টো কানাডার জিডিপি ২০০২ সালে ৭৫৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০০৩ সালে ৮৯২বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ২০০৪ সালে তা ট্রিলিয়ন-ডলার ছাড়িয়েছিল। অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে ব্যাংক সুদের হার কমানো হয়েছে । ব্যাংক অফ কানাডা সুদের হার ০.৫% কমিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও এটা অনুসরণ করা শুরু করেছে। অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গত ১২ বছরে মধ্যে সুদের হার সর্বনিম্ন করা হয়েছে|

কানাডার রিয়েল এস্টেট মার্কেটে এর প্রভাব কেমন হবে এ নিয়ে ভাবনায় আছেন ট্রান্সেকশনে ইচ্ছুক অনেক ক্রেতা বিক্রেতা। মার্কেটের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে আতঙ্ক থাকলে মার্কেটে এর প্রভাব পড়ে। আর কানাডার রিয়েল এস্টেটে যেহেতু চীনা ক্রেতারা বিশেষ ভূমিকা রাখেন, তাই বিষয়টা ক্রেতা বিক্রেতাকে ভাবাচ্ছে বেশী। যদিও বাজারে এজাতীয় কোন চিহ্ন এখনো দেখাচ্ছে না। জানুয়ারী এবং ফেব্রুয়ারী মাসে বাড়ী বিক্রি এবং দাম কানাডার প্রায় সর্বত্রই বেড়েছে। সুদের নিম্ন হার এই করোনা আতঙ্ককে উড়িয়ে দিয়ে স্বল্প মেয়াদে কানাডার ইতিমধ্যে উত্তপ্ত স্প্রিং হাউজিং মার্কেটকে আরো উত্তপ্ত করতে পারে। সমস্ত পূর্বাভাস বলছে আসন্ন বসন্তে বাজার ‘hot’ থাকবে।

তবে এই প্রাদুর্ভাবের আতঙ্ক যদি অব্যাহত থাকে তবে 2020 এর মাঝামাঝি বা Q3 এর শেষদিকে উল্লেখযোগ্য মন্দাভাব পরিলক্ষিত হতে পারে। সুদের হার কমানোতে খুব একটা সুফল আসবেনা যদি মানুষের চাকরী বাকরি কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য ঠিক মতো না চলে। ফলে বিক্রেতারা দ্রুত বিক্রি সম্পন্ন করে ‘হার্ড ক্যাশ’ এর দিকে ঝুঁকবে এবং বাজারে বিক্রেতাদের চেয়ে ক্রেতাদের আধিপত্য বাড়বে। সেক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেটসহ সব ধরণের বিনিয়োগ মার্কেটে উল্লেখযোগ্য কারেকশনের সম্ভাবনা আছে| এই প্রাদুর্ভাব দীর্ঘ দিন বিরাজ করলে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক মন্দা অবশ্যম্ভাবী। ফলে এই সময়টি অন্যরকম যাবে যাকে বলা যেতে পারে “একবিংশ শতাব্দীর এপর্যন্ত সবচেয়ে বড় হতাশা”|

 

লেখক : প্রকৌশলী শিহাব উদ্দিন, 

রিয়েল এস্টেট ব্রোকার , (৫১৪) ৩৬৮ ৯০০০

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ